নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপিই জিতবে —লন্ডনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনায় তারেক রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০১৭
০ আ’লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি
০ ঐক্যবদ্ধ থাকুন, ঐক্য বিনষ্টের চক্রান্ত হতে পারে
০ নির্বাচনের বছর লুটেরারা টাকা পাচার বাড়িয়ে দেবে
লন্ডন, ৯ নভেম্বর: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে কখনোই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। প্রতিবারেই ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই কিংবা সন্ত্রাস বা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিতে হয়েছে। কিন্তু দেশে যখনই জনগণ স্বাধীন ও সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে প্রতিবারই বিএনপি জয়ী হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও যদি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে জনগণের ভোটে বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে ইন-শা-আল্লাহ। তিনি গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, ২০০০ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত শেখ হাসিনাকে বলেছে রং হেডেড আর ২০১৭ সালে দেশে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে প্রমাণিত শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ। জনগণ এতদিন বলে এসেছে বর্তমান সরকার অবৈধ এবং তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে জনমতের আইনগত ভিত্তি পেয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশন বলেছেন জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন- এই মন্তব্যের সূত্র ধরে তারেক রহমান বলেন, কথা দিয়ে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টার পরিবর্তে কাজ দিয়ে নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ছয় মাস, এক বছর কিংবা আরো কয়দিন পর যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটি হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু পরিবেশে, সহায়ক সরকারের অধীনে। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে কয়টি নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়েছে সকল নির্বাচনেই জনগণের রায়ে ক্ষমতায় এসেছে বিএনপি। দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিল ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনেও বিএনপি জয়ী হয়। সভায় তারেক রহমান সেই সময়কার পত্র-পত্রিকা থেকে ওই নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তখন প্রধান বিরোধী দল ছিল জাসদ। তারা পেয়েছিলো একটি আসন। পরদিন জাসদ নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে জাসদ অভিযোগ করেছিল, ‘নির্বাচনের দিন গণভবনেই নির্বাচনী কন্ট্রোলরুম স্থাপিত হয়েছিল এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বিরোধী দলের প্রার্থীরা যখন ভোট গণনায় এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই অকস্মাৎ বেতার টেলিভিশনে এই সকল কেন্দ্রের ফলাফল প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সন্দেহজনকভাবে দীর্ঘ সময় পর নিজেদের পছন্দসই ভোটের সংখ্যা প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তারেক রহমান বললেন, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও ছিল, আওয়ামী লীগের ভোট জালিয়াতির স্বভাব এখনো পালটায়নি। তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আগেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে, প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে তথকথিত ‘জনতার মঞ্চ’ বানিয়ে চারদিকে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এভাবে এক অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা দখল করে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ২০০৮ সালের কথিত ওয়ান ইলেভেন ছিল একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল। সেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় দখল করে আওয়ামী লীগ। তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতায় আসার জন্য ওয়ান ইলেভেন ছিল একটি ষড়যন্ত্রের ফল এর প্রমাণ মেলে সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা একটি বইতে। ‘দ্যা কোয়ালিশন ইয়ার্স, ১৯৯৬-২০১২’ বইতে তিনি লিখেন- ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ছয় দিনের সফরে ভারত এলেন… তিনি আমার সাথেও সাক্ষাত করলেন… জেনারেল মইন ভয় পাচ্ছিলেন যে, শেখ হাসিনা বের হয়ে আসার পর মইনকে চকিরিচ্যুত করতে পারেন। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত দায়িত্ব নিই এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেও তার চাকরিতে বহাল থাকার ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করি। তারেক রহমান বলেন এই বক্তব্যে প্রমাণ হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবেন এটা জেনারেল মঈন এবং প্রণব মুখার্জি তারা আগে থেকেই জানতেন। তারেক রহমান বলেন, সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক। বইয়ের এই বক্তব্য ভারতের জনগণের জন্য কৃতীত্বের মনে হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ নয়, তার শক্তি অন্য কোথাও, অন্য কোনো খানে। গণতন্ত্রে নয়, শেখ হাসিনার বিশ্বাস ষড়যন্ত্রে, মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তারেক রহমান বলেন, আগামীতে জাতীয় নির্বাচন হলে প্রায় সোয়া এক কোটি নতুন ভোটার ভোটে দেবে। তিনি নতুন ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনারা যাতে আপনাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠু সুন্দর ও নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারেন তেমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্দোলন চলছে। আপনারা যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্ভয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেই নিজেদের নিরাপদ করতে আওয়ামী লুটেরা চক্র বিদেশে টাকা পাচার বাড়িয়ে দিতে পারে। তারেক রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি, জিএফআই সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলেছে, গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকা । তারেক রহমান বিশেষ করে দেশ প্রেমিক প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, কেউ যাতে টাকা পাচার করতে না পারে। তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, ১৯৭৫ সালের ২রা নভেম্বর দিবাগত রাতে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে অবৈধভাবে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে নিজেকে সামরিক বাহিনী প্রধান ঘোষণা করেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররাফ। ক্ষমতার দ্বন্দে তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে জাসদ তথা গণবাহিনী। সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবে এ সকল অপশক্তি পরাজিত হয়েছে ৭ নভেম্বর। তিনি প্রশ্ন করেন, এই সকল অপশক্তি এখন কেমন করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একজোট হয়? তারেক রহমান বলেন, এটি প্রমাণ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই চক্রটির কোনো আদর্শ নেই। তাদের আদর্শ যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। পূর্ব লন্ডনের দ্য রয়্যাল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় শুরুতে পবিত্র কুরাআন থেকে তেলাওয়ত করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি মোঃ গোলাম রাব্বানি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মামুন, মেজর (অবঃ) আবু বকর সিদ্দিক, কেন্দ্রীয় জাসাসের সহ সভাপতি শাহরিয়া ইসলাম সায়লা, লন্ডন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবেদ রাজা, ইস্ট লন্ডন বিএনপির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বাদল, ওলহ্যাম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মওদুদ আহমেদ, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহিন, জাসাস সভাপতি এমাদুর রহমান এমাদ প্রমুখ।