লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০১৭
লন্ডন, ৯ নভেম্বর : লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭ নভেম্ব মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুইন মেরী ইউনির্ভাসির্টির পিন্টার স্টুডিওতে। বিলেতে বাংলা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুবায়ের ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদপত্র বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
ব্রিটেনে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালের ১লা নভেম্বর। সত্যবাণী নামের এই সংবাদপত্রের আয়ু ছিল মাত্র ১৪ মাস। সেই থেকে শতবর্ষে শতাধিক বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে পুরানো সংবাদপত্রের বয়স অর্ধ শতাব্দি। তবে এই পাঁচ দশকের মধ্যে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্র বিগত চল্লিশ, ত্রিশ ও বিশ বছর যাবত প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্চেছ। সবচেয়ে পুরানো টেলিভিশন চ্যানেলের বয়স আঠারো বছর। আছে বাংলা রেডিও স্টেশনও। সাম্প্রতিককালে যোগ হয়েছে অনেক অনলাইন পত্রিকা।
মুল প্রবন্ধে উঠে আসে বিলেতে বাংলা মিডিয়ার অতীত ইতিহাস ও বর্তমান চিত্র। বিশেষ করে কিভাবে বাংলা সংবাদপত্র অতীতে বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখে তা তুলে ধরা হয়। বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলা সংবাদপত্র ছিল সবসময়ই সোচ্চচার। সত্তুর ও আশির দশকে বাংলা সংবাদপত্র কমিউনিটিকে ঐকবদ্ধ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। বর্ণবাদীদের হাতে নিহত আলতাব আলীর নামে পূর্ব লন্ডনে একটি পার্কের নামকরণ, শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা, বাঙালি এমপি নির্বাচিত করা, মূল ধারার রাজনীতিতে বাঙালিদের সম্পৃক্ত করণে উদ্বুদ্ধ করা এসব সকল ক্ষেত্রেই বাংলা মিডিয়ার অবদানের কথা তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে।
বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদপত্র বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষে বিলেতের বাঙালী সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক অবস্থান জানিয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন ও পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তৈৗফিক ইমরোজ খালিদি বলেন, মূলধারার মিডিয়ার সামনে সোশ্যাল মিডিয়া এখন একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের দেয়া অনেক তথ্যের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ দেখা যায়না। এক্ষেত্রে কঠোর রেগুলেশন বাস্তবায়িত হলে অবাধ স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হবে। সৌখিন সিটিজেন জার্নালিষ্টরাও এজন্যে ভোগান্তির শিকার হবেন। তৌফিক ইমরোজ খালিদি বলেন, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকার চেয়ে বিকল্প কিছু নেই। অর্থনৈতিকভাবে বিলেতের বাংলা মিডিয়ার মতো বাংলাদেশের মূলধারার মিডিয়াও সংকটে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিডি নিউজ প্রধান তৈৗফিক ইমরোজ খালিদি। তিনি বলেন বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে । ৩০টি টিভি চ্যানেল এবং সম্ভবত আরও কুড়িটি চালুর লাইনে রয়েছে। সবগুলো চ্যানেলেরই রয়েছে নিউজ। অন্য কোন দেশে এমনটি সচরাচর দেখা যায়না। তিনি বলেন বিজ্ঞাপনের কেকের সমান টুকরোর জন্যে দৌড়ছেন সবাই। কিন্তু কেকের সাইজ বড়ো হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, সকল টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজ পেপার এর জন্য বিজ্ঞাপনের বাজারে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এর উপরে রয়েছে দুর্নীতি। এজন্যে যারা তাদের জন্যে বেঁেচ থাকা কঠিন। তৌফিক ইমরোজ খালিদি বলেন, ব্রেকিং নিউজ এর ক্ষেত্রে প্রথম হওয়ার চেয়ে আমার কাছে এর সত্যতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় তৃতীয় অথবা চতুর্থ হলেও বাধা নেই। এটাই হলো আমাদের শক্তি। বা’ংলাদেশে সম্প্রতি প্রণীত হওয়া আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা মানুষের বাক স্বাধীনতা খর্ব করছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তৈৗফিক ইমরোজ খালিদির মতামত জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরণের আইনের সমর্থন করেন, কিন্তু ক্ষমতার লোকরা এর এতো বেশি অপব্যবহার করেছেন যে এটি একটি কালো আইনে পরিণত হয়েছে। সরকার যখন এই আইন অপব্যবহার রোধ করতে পারেনি সে কারণে আমি এই আইন বাতিল হওয়ার পক্ষে।
বাংলা সংবাদপত্রের শতবর্ষ এই আলোচনা অনুষ্ঠানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ। কাউন্সিলের আর্টস ডেভেলাপমেন্ট অফিসার কাজী বেগম প্রেসক্লাবের সাথে ভবিষ্যতে একসাথে অনুষ্ঠান করার আশা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিগত শতাব্দীতে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার একটি প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা ছিল ।