এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা : ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৭
সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শিবিরের ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। গত ১৯ নভেম্বর রোববার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরার আদালত থেকে শাহপরাণ থানার জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও) অফিসে পরোয়ানাগুলো পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে শাহপরাণ থানার জিআরও ছমির চন্দ বলেন, ‘আদালত থেকে ৩২ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরোয়ানাগুলো আসামিদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এই ৩২ জনের মধ্যে ২৯ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও বাকি ৩ জন শিবির নেতা।’
যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন- সিলেট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক (বরখাস্ত) সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, আবু সরকার (শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি), জাহাঙ্গীর আলম (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক), মৃদুল কান্তি সরকার, কামরুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে আইনজীবি ও বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান), বাবলা, মো. আতিকুর রহমান, লায়েক আহম্মেদ, সিদ্দিক আহম্মেদ ইউসুফ, জহিরুল ইসলাম, আক্তারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আসাদুজ্জামান শাহিন, মোহাম্মদ বিন মামুন বুলবুল, আউলাদ, আছরাফ আহমেদ শিপন, নজরুল ইসলাম, অলিউল্লাহ ওরফে ওলিউর রহমান, খুরশেদ আলম, বাছিদ ওরফে আবদুল বাছিদ, আবদুস সালাম, ইমতিয়াজ রফিক চৌধুরী, আবদুল্লাহ ফারুক, কয়েছ ওরফে কয়েছুজ্জামান তালুকদার, আবু রেহান, রুবেল ও জ্যোতির্ময় দাস সৌরভ, এমসি কলেজ শাখার শিবিরের তৎকালীন সভাপতি এস এম মনোয়ার হোসেন, রাসেল মিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আগুন লাগানোর ঘটনার আগে ছাত্রলীগ কর্মীর ওপর হামলাকারী তিন শিবির নেতাকে ‘উত্তেজনা সৃষ্টিকারী’ হিসেবে বিচার বিভাগীয় তদন্তে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, বিচার বিভাগীয় তদন্তে দুই ভাগে ঘটনাটি দেখা হয়েছে। প্রথম ভাগে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি ও দ্বিতীয় ভাগে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী হিসেবে এমসি কলেজ শিবিরের তৎকালীন সভাপতি এস এম মনোয়ার হোসেন, রাসেল মিয়া ও মো. জাহাঙ্গীর আলমকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রথমত, ছাত্রলীগের কর্মী উজ্জ্বল আহমেদকে শিবির কর্মীরা গুরুতর জখম করায় এমসি কলেজে তাৎক্ষনিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমসি কলেজের পাঁচটি ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।’ ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের বিরোধের কারণে এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলেও বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। এর আগে আলোচিত এ মামলায় পুলিশ, সিআইডি, পিআইবি তদন্ত করলেও কারা আগুন লাগিয়েছে তা-ই খুঁজে বের করতে পারেনি এসব সংস্থা। আগুন দেওয়ার ঘটনার ভিডিওচিত্রে ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখা গেলেও পুলিশের তদন্তে উঠে আসেনি তাদের নাম।
এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়ানোর মামলা পুনঃতদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।
গত ২২ নভেম্বর বুধবার সিলেট মহানগর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়ানোর মামলার তদন্ত যথাযথভাবে হয় নাই বলে মনে করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। পিবিআই ও সিআইডির তদন্তে স্পষ্ট কোন দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। পরবর্তীতে বিচার বিভাগের তদন্তের নামে ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রদান করা হয়েছে। এ মামলায় অধিভুক্ত ২৯ জনের মধ্যে ১৯জনই ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। তাই এ মামলার পুনঃতদন্ত করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে শত বছরের পুরনো মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের ৪২টি কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় হল সুপার বশির আহমদ বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান থানায় ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় আরো দু’টি মামলা করা হয়।
অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। তিনি অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন।