যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল-২০১৮ সম্পন্ন : এমএ মালিক সভাপতি, কয়ছর আহমদ সেক্রেটারি পুননির্বাচিত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৩:৩৮,অপরাহ্ন ১৮ জানুয়ারি ২০১৮
লন্ডন, ১৮ জানুয়ারি: যুক্তরাজ্য বিএনপির ৪৫টি জোনাল কমিটির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল ২০১৮ সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি সোমবার লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি ব্যাংকুইটিং হলে দুপুর ১২টায় শুরু হয় কাউন্সিল পর্ব। এদিকে গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল নমিনেশন ফরম জমা দানের শেষ সময়। উক্ত সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে এমএ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে কয়ছর এম আহমদ ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী নমিনেশন ফরম জমা না দেয়ায় এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলারদের মতামতের ভিত্তিতে তাদেরকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই কাউন্সিলারদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে ৪৫টি জোনাল কমিটি’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র কাউন্সিলারবৃন্দ এবং প্রার্থীদেরকে নিয়ে কাউন্সিল পর্ব শুরু করেন। কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান। সহকারী নির্বাচন কমিশনার আব্দুল হামিদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন লুটন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শাহ নেওয়াজ। কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহিদুর রহমান যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি ছিল নমিনেশন ফরম সংগ্রহের তারিখ। এতে সভাপতি পদে তিনজন যথাক্রমে এম এ মালিক, শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন ও তাজ উদ্দিন নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নমিনেশন ফরম ক্রয় করেন। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৪জন নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নমিনেশন ফরম ক্রয় করেন। তারা হলেন যথাক্রমে- কয়ছর এম আহমদ, নাসিম আহমদ চৌধুরী, দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নিয়াজ ও এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। ১৩ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ছিল নমিনেশন ফরম জমা দানের শেষ সময়। উক্ত সময়ের মধ্যে এমএ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী নমিনেশন ফরম ক্রয় করলেও জমা দেননি।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একজন করে প্রার্থী নমিনেশন ফরম জমা দেয়াতে নির্বাচনী বিধি মোতাবেক তারাই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হোন। কিন্তু এটি যেহেতু সংগঠনের একটি অভ্যন্তরীণ নির্বাচন, তাই এ বিষয়ে কাউন্সিলারবৃন্দের মতামত জানতে এবং একক প্রার্থীদের নির্বাচনের বিষয়টি কাউন্সিলারদের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারণের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এমনকি যারা নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নমিনেশন ফরম ক্রয় করেও জমা দেননি তারাও নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে কোনোরূপ আপত্তি উত্তাপন করেননি।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য আরো যে কয়েকজন প্রার্থী নমিনেশন ফরম ক্রয় করেছিলেন কিন্তু চূড়ান্তভাবে জমা দেননি তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতি জোনাল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার সমতুল্য নেতৃবৃন্দের সাথে আরো তিনজন কাউন্সিলার সংযুক্ত করে প্রতিটি জোনাল কমিটি থেকে কার্যকরী কমিটির মোট ৫ জন (সুপার ফাইভ) নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ সভাপতি, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক সমতুল্য পদবীধারী নেতৃবৃন্দ কাউন্সিলার হিসেবে ভোট প্রদান করতে পারবেন বলে জানানো হয়। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন করে পূর্ব নির্ধারিত ২ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৫ জানুয়ারি কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী থাকার পরেও নির্বাচন কমিশন ব্যালট পেপার প্রিন্ট করেছিলেন এবং কাউন্সিলারবৃন্দকে ব্যালটের মাধ্যমে যে কোনো মতামত দিতে চাইলে সে সুযোগও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একজন করে প্রার্থী থাকায় কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলারবৃন্দ ব্যালটের প্রয়োজন নেই বলে জানান।
উপস্থিত কাউন্সিলারবৃন্দের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন লন্ডন মহানগর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম, কার্ডিফ বিএনপির সভাপতি মোস্তফা সালেহ লিটন, ব্রাডফোর্ড বিএনপির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম, কলচেস্টার বিএনপির সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন, ইস্ট লন্ডন বিএনপির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বাদল, স্কটল্যান্ড বিএনপির আহ্বায়ক বাদশাহ মিয়া, নিউহাম বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেবুল মিয়াসহ প্রমূখ।
কাউন্সিলনেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে সভাপতি পদে এমএ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কয়সর এম আহমদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং নির্বাচনী বিধিমোতাবেক তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করার দাবি জানান। কাউন্সিলার নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতি পদে এমএ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কয়সর এম আহমদের নমিনেশনর বিষয়টি জানিয়ে হাত তুলে তাদের মতামত জানাতে বলেন। হল ভর্তি কাউন্সিলারবৃন্দ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমস্বরে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি পদে এম এ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে কয়ছর এম আহমদের প্রতি তাদের সর্বসম্মত সমর্থন জানান।
নির্বাচন কমিশন এর পরে কাউন্সিলারবৃন্দের মতামত কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ আকারে পাঠানোর কথা জানান। কিন্তু হল ভর্তি কাউন্সিলারবৃন্দ দাঁড়িয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যথাক্রমে এম এ মালিক এবং কয়ছর এম আহমদ নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেয়ার জোর দাবি জানান। এ সময় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। কাউন্সিলারবৃন্দ সবাই দাঁড়িয়ে এম এ মালিক এবং কয়ছর আহমদের নামে শ্লোগান দিতে থাকেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তখন সংগঠনের নিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার সাংগঠনিক বক্তব্য হয়তো অনেকে বুঝতে পারেননি। আপনারা যা দাবি করছেন আমিও তা বুঝাতে চেয়েছি। তখন তিনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন যে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী থাকায় এবং কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলারবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি পদে এমএ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কয়ছর এম আহমদ আনঅফিসিয়াললি (প্রাথমিকভাবে) নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি পদে এম এ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কয়ছর এম আহমদের নাম কেন্দ্রের অফিসিয়াল অনুমোদনের জন্য সুপারিশ সহকারে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আজকের আনঅফিসিয়াল (প্রাথমিক) সিদ্ধান্তই কেন্দ্র থেকে অফিসিয়ালি অনুমোদিত হয়ে আসবে। এটাই রেওয়াজ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নব নির্বাচিত সভাপতি এমএ মালিক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদকে সভা মঞ্চে নিয়ে কাউন্সিলারবৃন্দের সাথে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন বলে জানানোর পরে সমগ্র হল জুড়ে অন্য রকম এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যা ফেসবুক লাইভেও প্রচার করা হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল সম্পন্ন করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তাকে দায়িত্ব অর্পণ করায় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে প্রবাসে জনমত গঠনে দক্ষ, ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিশেষে যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিল ২০১৮ সফলভাবে সম্পন্ন করতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্য সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাউন্সিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির কাউন্সিলে সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সদ্য সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুল হামিদ চৌধুরী এবং সচিব হিসেবে ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সদ্য সাবেক সহ দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ। শেষে নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলারবৃন্দ, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং উপস্থিত অতিথিদের নিয়ে এক সাথে মধ্যা?ভোজ সম্পন্ন করেন।