কেইটরিং সার্কেলের রেস্টুরেন্ট ট্যালেন্ট শো অ্যাওয়ার্ডস ২৫ এপ্রিল: কারি সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে আসছেন তরুণ ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০১৮
লন্ডন, ১৯ এপ্রিল: রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ও সৃজনশীল ব্যবসায়ীর সাফল্য তুলে ধরতে কেইটরিং সার্কেলের তৃতীয় ‘লন্ডন বিজনেস কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ এপ্রিল। একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে রেস্টুরেন্ট ট্যালেন্ট শো অ্যাওয়ার্ডস সিরিমনি। ২৫ এপ্রিল বিকেল ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নর্থ লন্ডনের মেরিডিয়ান গ্র্যান্ড ভেন্যুতে অনুষ্ঠিতব্য কনফারেন্সে সমগ্র বৃটেন থেকে এবার ও প্রায় ৬শ’র বেশি রেস্টুুরেন্ট ও টেইকওয়ে ব্যবসায়ী অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গত ১৬ এপ্রিল সোমবার দুপুরে পূর্ব লন্ডনের হলিডে ইন হোটেলের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্যাটরিং সার্কেলের প্রডিউসার তৌহিদ শাকীল। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ক্যাটারিং সার্কেলের প্রধান উপদেষ্টা আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি ও ক্যাটরিং সার্কেলের ফাউন্ডার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৃটেনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এখন বৃটিশ-বাংলাদেশি তরুণ ব্যবসায়ীদের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে। কেউ পুলিশের চাকরি ছেড়ে, কিংবা কেউ ব্যাংকের লম্বা বেতনের চাকরি ছেড়ে নতুন নতুন কনসেপ্ট, হেলদি ফিউশন ফুডের নানা রকম সৃজনশীল মেন্যু নিয়ে নামছেন স্বাধীন কারি ব্যবসায়। কারি ইন্ডাস্ট্রির এই সংকটকালীন সময়ে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়ে ক্রমেই সৃষ্টি করছেন সাফল্যের নানা দৃষ্টান্ত। কারি সমস্যার সমাধানে তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া হবে কনফারেন্সে। উল্লেখ্য, গত শতকের চল্লিশের দশকে কারি বৃটেনের খাবারের তালিকায় প্রথম পছন্দের সারিতে উঠে এসেছে। বাংলাদেশি তথা ইন্ডিয়ান কারির প্রতি বৃটিশদের এই ভালোবাসায় ধীরে ধীরে কারি হাউসগুলো ছড়িয়ে পড়ে টাউন সেন্টার থেকে কাউন্টি এরিয়া অর্থাৎ শহর-নগর থেকে শুরু করে সমগ্র দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। বর্তমানে বৃটিশ বাংলাদেশি মালিকানাধীন ১২ হাজারের বেশি রেস্টুরেন্ট ও টেইকওয়ের বার্ষিক টার্নওভার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড। অথচ নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বন্ধ হবার পথে বসেছে এই ইন্ডাস্ট্রি দক্ষ শেফ ও স্টাফ সংকট, ইমিগ্রেশন আইন, নতুন প্রজন্মের কারি ব্যবসার প্রতি অনাগ্রহ, ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, মেন্যুতে নতুন নতুন সৃজনশীল ও স্বাস্থ্যকর খাবার না থাকা, কাস্টমারের ফুড অর্ডারে প্রযুক্তি বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে অনীহা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব এরকম নানা সংকটের কারণে সপ্তাহে ২/৩টা করে রেস্টুরেন্ট ও টেইকওয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এরইমধ্যে বৃটেনের জনপ্রিয় বাংলা টেলিভিশন, চ্যানেল এস’র কেইটরিং সার্কেলের উদ্যোগে ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে ৯টি রোড শো অনুষ্ঠিত হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় ১০ম রোড শো ও প্রথম গ্র্যান্ড বিজনেস কনফারেন্স। এদিকে কারি ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা নিয়ে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোও বেশ সরব। দ্য ইকোনমিস্ট, গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, মিরর, টেলিগ্রাফ থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে কারি শিল্পের বর্তমান বেহাল অবস্থা নিয়ে দফায় দফায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। এসব প্রতিবেদনে কারি ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ খুবই অন্ধকার হিসেবে দেখানো হচ্ছে। রোড শো গুলোতে চি?িত কারি ইন্ডাস্ট্রির প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে অনুষ্ঠিত লন্ডন বিজনেস কনফারেন্সের পর ২০১৬’র মার্চ মাস থেকে শুরু হয় বছরব্যাপী লাইভ ধারাবাহিক ‘দ্য কেইট্রিং সার্কেল শো: সিজন ওয়ান’। বছর জুড়ে সম্প্রচারিত লাইভ টক শো-এ কারি শিল্পের উন্নয়ন আলোচনায় ১২টি বিষয়ে যুগান্তকারী সমাধান বেরিয়ে এসেছে। দ্বিতীয় গ্র্যান্ড বিজনেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় ২৮ মার্চ ২০১৭। এ কনফারেন্সে ব্যবসায়িক সাফল্যের কিছু ইতিবাচক কেইস স্টাডি তুলে ধরা হয়। এতে দেখানো হয় সংকটের মুখেও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কিভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে সফলভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সফল ব্যবসায়ীদের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন মেন্যু ইনোভেশন বা মেন্যুতে সৃজনশীলতা, স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশিাপাশি নতুন রান্নার ধারণা ও কৌশল উদ্ভাবন, বিদেশী কর্মী নিয়োগ, এবং ইপোস (ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অব সেইল সিস্টেম), আইপ্যাড প্রভৃতি ডিজিটাল টেকনোলজিতে বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়।
৯ মে ২০১৭ থেকে বছরব্যাপী কেইটরিং সার্কেলের লাইভ টেলিভিশন সিরিজের সিজন টু-তে অনুষ্ঠিত হয় নতুন রিয়েলিটি প্রোগ্রাম, রেস্টুরেন্ট ট্যালেন্ট শো ২০১৭। এতে ৯৬ জন রেস্টুরেটর পার্টিসিপেন্টের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ২৪ জন ফাইনালিস্ট এবং এবছর জানুয়ারি মাসে গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমেমোট ১২ জন উইনার নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি এপিসোডে ৮জন পার্টিসিপেন্টের মধ্য থেকে দু‘জন ফাইনালিস্ট নির্বাচনের জন্য ৩ জন প্যানেল জাজ ও ৮ জন স্পেশাল জাজ অংশ নেন। সম্মানিত জাজরা বিশেষভাবে নির্ধারিত সফটওয়ারের মাধ্যমে তাদের রায় দেন। গ্র্যান্ড ফাইনালে প্রতি ফাইনালিস্টের জন্য একজন করে মেন্টর এবং প্রতি এপিসোডের উইনার নির্বাচনের জন্য একইভাবে ৩ জন প্যানেল জাজ ও ৮ জন স্পেশাল জাজ অংশ নেন। নির্বাচিত ১২ জন উইনারকে আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য কেইটরিং সার্কেলের প্রথম রেস্টুরেন্ট ট্যালেন্ট শো অ্যাওয়ার্ডসে ট্রফি প্রদান করা হবে। এ অনুষ্ঠানে ১২ জন্য ফাইনালিস্টকেও তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কেইটারিং সার্কেলের ফাউন্ডার ও ‘দ্য কেইটারিং সার্কেল শো’র এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন,‘ কেইটরিং সার্কেল প্ল্যাটফর্ম উত্তোরোত্তর উন্নত এবং উৎকৃষ্ট হচ্ছে। সম্মেলনে শোনা হবে রেস্টুরেস্ট ব্যবসায় একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ও সৃজনশীল ব্যবসায়ীর সাফল্যের ইতিবৃত্ত। কমিউনিটি ও নানা রকম ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের এই গ্র্যান্ড কনফারেন্সে সামিল হয়ে আমরা জানবো কিভাবে খরচ বাঁচিয়ে মুনাফা অর্জন করতে হয়। অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, কঠিন অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় কিভাবে সাফল্যের সঙ্গে টিকে থাকা যায়। বর্তমান বাস্তবতায় খুব অল্প সংখ্যক ব্যবসা লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসা-ই নিত্যদিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কোনো রকমে টিকে আছে। দক্ষ ব্যবসায়ীদের সাফল্যের কাহিনী ও বিভিন্ন পদ্ধতি তুলে ধরে এই বাস্তবতা পালটে দেওয়াই আমাদের লক্ষ।’
চ্যানেল এস টেলিভিশনের চেয়ারম্যান, কেইটারিং সার্কেলের প্রধান উপদেষ্টা এবং এক সময়ের ১০টি রেস্টুরেন্টের সত্বাধিকারী, আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের এ বছরের কার্যক্রমের তুলে ধরা হয়েছে সংকটকালীন সময়ে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ও কারি ব্যবসায়ীদের সাফল্যের কাহিনী। কারি শিল্পের যাবতীয় সংকটের মৌলিক কারণগুলো চি?িত করে সেগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করে আমাদের এই প্রিয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য সকলের সহযোগিতায় ব্যবসায়-সম্প্রদায়কে রীতিমত চাঙ্গা করে তুলেছে চ্যানেল এস টেলিভিশন এবং কেইটারিং সার্কেল। এবারের বিজনেস কনফারেন্সেও সমাধানের নানা উপায় তুলে ধরা হবে।’ চ্যানেল এস টেলিভিশন-এ আগামী জুলাই থেকে শুরু হবে ধারাবাহিক রিয়েলিটি-শো ’কেইট্রিং সার্কেল’-এর সিজন থ্রি’, ‘রেস্টুরেন্ট স্টার শো’-এর সরাসরি সম্প্রচার।