হেরে বাংলাদেশের বিদায়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
খেলাধুলা ডেস্ক: একি করলেন সোহেল! সরাসরি হাতে আসা বলকে গ্রিপে না নিয়ে নিজেদের জালে জড়িয়ে দিলেন? ম্যাচের শেষ মিনিটে তার ভুলেই আরো এক গোল হজম করে স্বাগতিকরা। আর এতেই নেপালের কাছে দুই গোলে হেরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ জয়ের পরও নেপালের কাছে এমন হারে ভাঙলো দশ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গতকাল হিসাবটা পরিষ্কার ছিল বাংলাদেশের। হারা যাবে না। অন্তত ড্র করতে পারলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সাফের সেমিফাইনাল খেলবে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। নেপালকে সেমিফাইনাল খেলতে হলে জিততে হবে। এমন হিসাবের ম্যাচে ভালো খেলতে থাকা বাংলাদেশ গোল হজম করে বিমল গাত্রি মাগারের সাধারণ মানের এক ফ্রিকিক থেকে।
যে ফ্রিকিকে যতটা কৃতিত্ব নেপালি ফুটবলারের, তার চেয়ে দায় বেশি বাংলাদেশি গোলররক্ষক শহিদুল আলম সোহেলের। সোহেলের এই সর্বনাশে এক গোলে হারের ফলে ‘বি’ গ্রুপে তিন ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছয় হলেও গোল গড়ে তারা পিছিয়ে। সমান ম্যাচে ছয় পয়েন্ট ঝুলিতে ভরা নেপালের ও পাকিস্তানের গোল ব্যবধান সেখানে +৩।
আর বাংলাদেশের +১। এ নিয়ে টানা চার সাফে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গেল বাংলাদেশ। গ্রুপ থেকে গোল গড়ে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে নেপালের সঙ্গী হলো পাকিস্তান। গোল গড়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নেপাল, রানার্সআপ পাকিস্তান।
অথচ ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিটে তিনটি কর্নার আদায় করা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল ম্যাচ। এ সময়ে বিশ্বনাথের লং থ্রো নেপালের রক্ষণে পড়েছে বেশ ক’বার। বল পজিশনেও এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। পাকিস্তান ম্যাচে জ্বলে উঠতে না পারলেও কাল শুরু থেকেই সুফিল ছিলেন প্রাণবন্ত। তাকে যোগ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছিলেন বিপলু, মামুনুল, জামালরা। এ পর্যন্ত সবঠিক ছিল।
এরপর সর্বনাশ করে বসেন গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। যাকে দলে নিয়ে বিতর্ক ছিল। এশিয়াডে দুর্দান্ত খেলা আশরাফুল ইসলাম রানাকে বাদ দিয়ে সেই সোহেলকে প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলিয়ে যাচ্ছেন কোচ জেমি ডে। তার খেসারত দিলো বাংলাদেশ নেপাল ম্যাচে। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে বিমল গাত্রি মাগারের সাধারণ মানের ফ্রিকিক গ্রিপে নিতে ব্যর্থ হলেন এই গোলরক্ষক।
ফল যা হবার তাই। এই গোলেই পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। পাঁচ বছর আগে নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে একই ধরনের এক গোল খাইয়ে ছিলেন দীর্ঘকায়ী এই গোলরক্ষক। সেদিনও ফ্রিকিকটি করেছিলেন এই নেপালি ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধের বাকি সময়টুকুতে খেলা ধরতেই পারেনি বাংলাদেশ।
আক্রমণে উঠেছে কিন্তু সুফিল-বিপলুরা বলারমতো ভীতি সৃষ্টি করতে পারেনি নেপালি রক্ষণে। বরং এই সময়টাতে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নেপালি ফরোয়ার্ড বিমল গাত্রি মাগার। ম্যাচের ৫২ মিনিটে একাদশে জোড়া পরিবর্তন আনেন জেমি ডে। বিপলু আহমেদের জায়গায় সোহেল রানা ও সাদ উদ্দিনকে উঠিয়ে শাখাওয়াত হোসেন রনিকে মাঠে নামান এই বৃটিশ কোচ। এতেও কাজ হচ্ছিলো না।
পরিবর্তনের পরের মিনিটে ভারত খাওয়াজ ও নিরঞ্জন খড়কার দুটি প্রচেষ্টা রুখে দেন ডিফেন্ডাররা। এক গোলে পিছিয়ে থাকা স্বাগতিক ফুটবলারদের জাগাতে চেষ্টা করেছেন স্টেডিয়ামে ভর্তি দর্শকও। নেপালকে ভুয়া ভুয়া চিৎকার করে সারাক্ষণ স্টেডিয়াম মাতিয়ে রেখেছেন তারা।
এতেই কাজ হয়নি। শেষ দিকে বদলি রনির দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে নিজ মাঠে দর্শক হয়েই থাকতে হলো স্বাগতিকদের। উল্টো ম্যাচের শেষ মিনিটে নবজুক শ্রেষ্ঠার গোলে ষোলকলা পূর্ণ করে নেপাল। সঙ্গে সঙ্গে ২২ হাজার দর্শকের সামনে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার রাস্তা তৈরি হয়ে যায় মামুন-জামালদের। দিল্লি ২০১১, কাঠমান্ডু ২০১৩ ও কেরালা ২০১৫-এর পর টানা চতুর্থবারের মতো সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।