সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে চূড়ান্ত লড়াইয়ে যারা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮
দেলোয়ার হোসাইন, সিলেট থেকে:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১৬ দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারণায় দেশ এখন সরগরম। গত ১০ ডিসেম্বর সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতীক পেয়েই ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। প্রায় তিনশ’ আসনেই মূল লড়াইয়ে থাকছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট আর বিএনপি নেতৃত্বে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে লড়ছেন ২৭২ জন আর ধানের শীষে লড়ছেন ২৯৮ জন।
বিএনপি জোটের ৩০০ আসন ভাগাভাগিতে দেখা গেছে, ২৪২টি আসনে সরাসরি বিএনপির প্রার্থী, বাকি ৫৮টিতে শরিকরা। এর মধ্যে ২৯৮ প্রার্থীই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। দু’জন ভিন্ন প্রতীকে ভোট করবেন।
অন্যদিকে মহাজোটের ৩০০ আসন ভাগাভাগিতে দেখা গেছে, ২৫৮ প্রার্থী আওয়ামী লীগ, আর বাকি ৪২ আসন শরিকদের। এর মধ্যে ২৭২ জন নৌকা প্রতীকে, দু’জন বাইসাইকেল আর ২৬ জন লাঙ্গল প্রতীকে। এর বাইরেও জাপার লাঙল প্রতীক নিয়ে ১৬২, বিকল্পধারার কুলা প্রতীকে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দুই জোটের আসন ভাগাভাগির বাইরেও ৯৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, যার সিংহভাগ ক্ষমতাসীনদের।
এতে করে আনুমানিক শ’খানেক আসন ছাড়া বেশিরভাগ আসনেই মহাজোটের দ্বৈত প্রার্থী। প্রায় ২ শতাধিক আসনে দ্বৈত প্রার্থী নিয়ে বিপাকে মহাজোট। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছেন না। কিন্তু তাদের একটি অংশ এই দ্বৈত প্রার্থী দেয়াকে নিজেদের কৌশল হিসেবে দেখছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, মাঝপথে বিএনপি সরে গেলে যেন জাতীয় পার্টিকেই বিরোধী দল হিসেবে নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া যায়। অনায়াসেই সরকার ও বিরোধীদল গঠন করা যায়। তবে এরইমাঝে সারাদেশে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের একাধিক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
সারাদেশের মতো সিলেটে বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি ও বিকল্প ধারার একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে জোট-ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি আসনে খেলাফত মজলিশ ও গণফোরামের প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া হিসেব মতে, সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে ১১৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। তবে মূল লড়াইটা যে নৌকা বনাম ধানের শীষের মধ্যে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মূল লড়াইয়ে যারা:
সিলেট-১ (সদর-সিটি কর্পোরেশন) মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি একেএম আবদুল মোমেন। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির সাবেক দুইবারের সাংসদ খন্দকার আবদুল মালিকের পুত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (লাঙল), মো. রেদওয়ানুল হক চৌধুরী (হাতপাখা), মুহ্ম্মদ ফয়জুল হক (মিনার), ইউসুফ আলী (আম), উজ্জ্বল রায় (কোদাল), প্রণব জ্যোতি পাল (মই), মো. আনোয়ার উদ্দিন (হারিকেন), নাসির উদ্দিন (বটগাছ)।
তবে মূল লড়াইটা হবে নৌকা প্রতীকের ‘হেভিওয়েট’ মোমেন বনাম ধানের শীষ প্রতীকের ‘তৃণমূলের’ মুক্তাদিরের মধ্যে। যদিও তাঁরা দু’জন এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে এ আসন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এক ধরনের ‘মিথ’ প্রচলিত আছে। এ আসনে যে দল বিজয়ী হয় সেই দলই সরকার গঠন করে বলে বিশ্বাস অনেকের। তাই কে হাসছেন শেষ হাসি তা জানতে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবুল মাল আবদুল মুহিত বিএনপির প্রার্থী এম. সাইফুর রহমানকে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। অন্যদিকে বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ জন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মুহাম্মদ মুনতাছির আলী (দেয়াল ঘড়ি), মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), মো. আমির উদ্দিন (হাতপাখা), মো. মনোয়ার হোসাইন (আম), মো. মোশাহিদ খান (টেলিভিশন)।
তবে বর্তমান সাংসদ এহিয়া নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটের মাঠে তাকে একাই লড়তে হবে। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ায় এহিয়া চৌধুরীর প্রতি ক্ষুব্ধ রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে এ আসনের ভোটাররা এখনো ইলিয়াসের জন্য অপেক্ষায়। ইলিয়াস গুমের বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবে নেননি আসনের বাসিন্দারা। ফলে লুনার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮০ জন।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- এমএ মতিন বাদশা (হাতপাখা), মো. উসমান আলী (লাঙল), মো. দিলওয়ার হোসাইন (দেয়াল ঘড়ি), হাফিজ আতিকুর রহমান (রিকশা)।
উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ কয়েস বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীকে ৩৬ হাজার ৯১৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবার নির্বাচিত হন। আর বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৩ জন।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইমরান আহমদ। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান (লাঙল), মনোজ কুমার সেন (কোদাল), মো. জিল্লুর রহমান (হাতপাখা)।
এ আসনে পাঁচ মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। ১৯৮৬, ’৯১, ’৯৬ সালেও এ আসনে তিনি বিজয়ী হন। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই আসনে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম বিজয়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অবশ্য ২০০৮ সালে দিলদার হোসেন সেলিমকে হারিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন ইমরান আহমদ। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪০১ জন।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উবায়দুল্লাহ ফারুক। অন্যদিকে মহাজোট থেকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সাংসদ সেলিম উদ্দিন। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মো. নুরুল আমিন (হাতপাখা), বাহার উদ্দিন আল রাজী (উদীয়মান সূর্য), মো. শহিদ আহমদ চৌধুরী (হারিকেন), ইসলামী ঐক্যজোটের এমএ মতিন চৌধুরী (মিনার) এবং ফয়জুল মুনীর চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।
তবে এ আসনে জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন এমনটা আশা করেছিলেন জামায়াতের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে হতাশ হতে হয়েছে। এ আসনে নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩১২ জন।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরী। অন্যদিকে কুলা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সমশের মবিন চৌধুরী। এছাড়া হাতপাখা প্রতীকে মো. আজমল হোসেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিও এ আসনে যুদ্ধপরাধে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের মাওলানা হাবিবুর রহমান জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন এমটাই ধারণা ছিলো সবার। কিন্তু শেষ সময়ে এসে জামায়াতের কর্মী সমর্থকদের হতাশ করেছে বিএনপি জোট। সিলেটের আসনগুলোর মধ্যে অন্তত দু’টি আসন পেতে জোর দেনদরবারে চালালেও শেষমেশ জামায়াতের প্রাপ্তি শূন্যের ঘরে। এদিকে মহাজোট থেকে সাড়া না পেয়ে বিকল্পধারা থেকে নির্বাচন করছেন শমসের মবিন চৌধুরী। ফলে নুরুল ইসলাম নাহিদকে এবার কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা। এ আসনেও ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৮৫ জন।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সরকারের দলীয় হুইপ ও বর্তমান সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আহমদ রিয়াজ (মোমবাতি) মাওলানা গিয়াস উদ্দিন (হাতপাখা)।
নৌকার ঘাঁটি খ্যাত এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ১৯টি চা বাগানের চা শ্রমিক ভোটার। ফলে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহাব উদ্দিন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখল করতে মরিয়া বিএনপি। যদিও এ আসনের চারবারের সাংসদ সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী শেষ সময়ে এসে অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালে ভাগ্য খুলে যায় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠুর। বিএনপির তৃণমূলে ব্যাপক জনপ্রিয় নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু ভোটের লড়াইয়ে নবীন মুখ। তারউপর বড়লেখায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীর বলয়ের অবস্থান এখনো পরিস্কার নয়। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতের ভোটও কম নয়। ফলে ভোটের লড়াইয়ের আগে ঘর গোছাতে নামতে হচ্ছে তাকে।
উল্লেখ্য, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মো. শাহাব উদ্দিন বিএনপির প্রার্থী এবাদুর রহমান চৌধুরীকে ৩৬ হাজার ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। আর বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহমদ রিয়াজকে ৯৪ হাজার ৩৭১ ভোটে পরাজিত করেন তিনি। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯ জন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে মহাজোটর প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য বিএনপি থেকে বিকল্প ধারায় যোগ দেওয়া সাবেক সাংসদ এমএম শাহীন। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে করছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মাহবুবুল আলম শামীম (লাঙল), হাফিজ মতিউর রহমান (হাতপাখা), মৌলানা আসলাম হোসাইন, প্রশান্ত দেব সানা (হাতুড়ী)।
এ আসনটিতে গত ২২ বছরে জয় পায়নি আওয়ামী লীগ-বিএনপি। যদিও এ আসনে প্রতি নির্বাচনে চমক থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বছর আওয়ামী লীগ-বিএনপির জোটের প্রার্থী থাকলেও নেই দলীয় প্রার্থী। অন্যদিকে দলীয় প্রতীকের চেয়ে এ আসনে সব সময় এগিয়ে থাকে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা। ফলে এবার এ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থী না থাকলেও ২২ বছর পর তাদের কোনো একটি প্রতীকের জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অপর দিকে যে আসনে কখনো জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ সে আসনে ধানের শীষ নিয়ে শেষ হাসি হাসতে পারবেন কী সুলতান মনসুর? পারবেন কী অতীত ইতিহাস বদলে নতুন ইতিহাস গড়তে? তা জানতে আমাদেরকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪১ হাজার ১৬১ জন।
মৌলভীবাজার-৩ (সদর উপজেলা-রাজনগর) আসনে বর্তমান এমপি প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর স্ত্রী সায়রা মহসিনের পরিবর্তে এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- লুৎফুর রহমান কামালী (রিকশা), মঈনুর রহমান মগনু (মই), মো. আসলম (হাতপাখা)।
এ আসনটি একক কোনো দলের ঘাঁটি নয়। বিশেষ করে নব্বইয়ে পটপরিবর্তনের পর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ গত ছয়টি জাতীয় নির্বাচনের তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও তিনটিতে বিএনপি জয়লাভ করে। ফলে এ আসন নিয়ে ভোটারা বসেছেন নতুন হিসেবে-নিকেশে। তবে গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনি বিএনপির নাসের রহমান উদ্ধার করতে পারবেন, না-কি নতুন মুখ হিসেবে নেছার আহমদের হাত ধরে আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকবে তা এখন দেখার বিষয়। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৬৮ জন।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান ও টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য এবং উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- এডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ (উদীয়মান সূর্য), মাওলানা সালাউদ্দিন (হাত পাখা)।
আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে খ্যাত চা বাগান আর ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসছেন। ফলে বিএনপির হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরী নির্বাচনে জয়লাভ করতে হলে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০ জন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই বারের দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মুফতি ফখর উদ্দিন (হাতপাখা) বদরুদ্দোজা সুজা (হারিকেন) ও আমান উল্লাহ আমান (গোলাপফুল)।
আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে এ আসনে আওয়ামী লীগ অথবা এ দলের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক সিপিবির প্রার্থী ছয়বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনবার বিএনপি, জাতীয় পার্টি একবার ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয় এ আসনটি নিজেদের কব্জায় নিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। তবে ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন যোগাযোগ, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৪ জন।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রয়াত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তর স্ত্রী বর্তমান সাংসদ জয়া সেনগুপ্ত। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ নাছির উদ্দিন চৌধুরী। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- নিরঞ্জন দাস খোকন (কাস্তে), গোলজার আহমদ (কবুতর), মাওলানা আব্দুল হাই (হাতপাখা) ও মাহমুদ হাসান চৌধুরী (হারিকেন)।
জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জ-২ আসনে দীর্ঘ ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। তার মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে আসনটিতে তাঁর স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনে ড. জয়া সেনগুপ্তা প্রত্যন্ত জনপদকে একটি উন্নত জনপদ হিসেবে গড়ে তোলা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবারও নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের আমলে এলাকার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি বলে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৩ জন।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০ দলীয় (বর্তমানে ২৩ দল) জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা সাবেক সাংসদ মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- মহিবুল হক আজাদ (হাতপাখা), মাহফুজুর রহমান খালেদ (ছাতা), শাহজাহান চৌধুরী (গোলাপফুল) ও সৈয়দ শাহ মুবশ্বির আলী (হারিকেন)।
প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সৎ সজ্জন ভাল মানুষ হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় তাঁর সুনাম রয়েছে। তবে প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর অনুসারীরা হতাশ। অন্যদিকে বিএনপি থেকে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জোটের প্রার্থী হয়েছেন শাহীনুর পাশা চৌধুরী। ফলে ভোটের লড়াইয়ে কে কাকে অতিক্রম করবেন সেই হিসেব করছেন মান্নান-পাশার সমর্থকরা। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার ৫১১ জন।
সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে লাঙল প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক হুইপ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আসপিয়া। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- তানভীর আহমদ তাসলিম (হাতপাখা), দিলোয়ার হোসেন (আম), মোহাম্মদ আজিজুল হক (রিকশা), আল হেলাল (হারিকেন) ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (সিংহ)।
হাওর ও নদী বেষ্টিত এ আসনে স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে পর্যায়ক্রমে জয় পেয়েছে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। এবার জাতীয় পার্টি না-কি বিএনপি সেটা ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফরই বলে দেবে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৩ জন।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ বর্তমান সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- নাজমুল হুদা হিমেল (লাঙল) আবদুল ওদুদ (কুঁড়েঘর), আয়ুব করম আলী (উদীয়মান সূর্য), মাওলানা হুসাইন আল হারুন (হাতপাখা), মাওলানা সফিক উদ্দিন (দেয়াল ঘড়ি) ও আশরাফ হোসেন (টেলিভিশন)।
এ আসনে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি দীর্ঘদিনের। দুই যুগ ধরে দুই নেতাকে ঘিরে দু’টি বলয় সক্রিয়। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন মানিক ও অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। অন্যদিকে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে হটিয়ে এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর হয়ে নেতাকর্মীরাও দুই বলয়ে বিভক্ত। ফলে মাঠের লড়াইয়ের সাথে ঘরের লড়াইয়েও মুখোমুখি তাঁরা।
স্বাধীনতার পর এ আসনে ১০টি নির্বাচনের মধ্যে চারবার বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ, দুইবার জাতীয় পার্টি, দুইবার স্বতন্ত্র এবং বিএনপি ও জাসদ একবার করে বিজয়ী হয়। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৫ জন।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুর পরিবর্তে এবার নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজীর পুত্র গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ (মিলাদ গাজী)। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য গণফোরামে যোগ দেওয়া অওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আতিকুর রহমান আতিক (লাঙল), চৌধুরী ফয়সল শোয়েব (মই), মো. নূরুল হক (গামছা) ও জুবায়ের আহমেদ (মোমবাতি)।
এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই নতুন। বর্তমান সংসদ জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হটিয়ে এবার দলীয় প্রার্থী পেয়েছে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্টের চমক হিসেবে ড. রেজা কিবরিয়া লড়ছেন ধানের শীষে। ফলে দুই নতুনের লড়াইটা যে হাড্ডাহাড্ডি হবে এতে কোনো সন্দেন নেই। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৭ জন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের পরিবর্তে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- শংকর পাল (লাঙল), মনমোহন দেবনাথ (গামছা), পরেশ চন্দ্র দাশ (আম), আবুল জামাল মসউদ হাসান (হাতপাখা) ও আফছার আহমদ রূপক (সিংহ)।
আশির দশকের পর এ আসনটি উদ্ধার করতে পারেনি বিএনপি। প্রতিবারই নৌকার প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এবার বিএনপির দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে জোটের শরিক দলের প্রার্থী দিয়ে জোট-ঐক্যফ্রন্ট নতুন কোনো এক্সপেরিমেন্ট করছে কি-না, তা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনী ফলাফল বলে দেবে। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ০৬ হাজার ৯৭২ জন।
হবিগঞ্জ-৩ (সদর-শায়েস্তাগঞ্জ-লাখাই) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. আবু জাহির। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- আতিকুর রহমান আতিক (লাঙল), মহিব উদ্দিন আহমেদ সোহেল (হাতপাখা) ও পিযুষ চক্রবর্তী (কাস্তে)।
জেলার রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এই আসনে আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছে সেটা হলো ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-। আওয়ামী লীগ এই উন্নয়নকেই পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সামনে রয়েছে আসনটি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৩ জন।
হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলী। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বাচ্চু। এ আসনে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন- শেখ সামছুল আলম (হাতপাখা), সোলায়মান খান রাব্বানী (মোমবাতি) ও আনছারুল হক (গোলাপফুল)।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১০ বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পায় সাতবার। বিএনপি একববার। জাতীয় পার্টি একবার ও স্বতন্ত্র একবার। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। যদিও এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আহামদ আবদুল কাদের বাচ্চুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৭ হাজার ৫২৫ জন।