লন্ডনে যেমন ছিলেন সৈয়দ আশরাফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৭:৪৭,অপরাহ্ন ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ছবিতে ব্রিক লেনের আলাদিন রেস্টুরেন্টে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে লেখক রহমত আলী (মাঝে) ও সাবেক কাউন্সিলার সোনাহর আলী (বায়ে)।
মোঃ রহমত আলী:
সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তাঁর জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাজ্যে। শুধু লেখাপড়া, বিয়েসাদী, বসতি ও চাকরিই নয়; স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, লেবার পার্টির রাজনীতির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। এখানে কয়েকটি বাংলা পত্রিকার প্রকাশনার সাথেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। তাই দেশের জনগণের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিকটও তিনি ছিলেন ব্যাপক সমাদৃত। তাঁর মৃত্যুতে অনেকেই হয়েছেন শোকাহত।
তাঁর সমসাময়িক কালের অনেক বন্ধুর স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, তিনি প্রথম থেকেই ইস্ট লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করতেন। তাঁর মূল আবাসস্থল বেকটনে হলেও কিছুদিন কমার্শিয়াল রোডস্থ টয়েনবি হলের একটি কামরায় বসবাস করেছেন। তিনি হ্যানবারী স্ট্রীটের মন্টিফিউরি সেন্টারে কাজ করেছেন এবং এর একজন ডাইরেক্টরও ছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি হোয়াইটচ্যাপেলের সাংগ্রিলা রেস্টুরেন্ট, ব্রিকলেনের নজরুল, সিরাজ, সোনার বাংলা ও আলাদিন রেস্টুরেন্টে প্রায় সময় আড্ডা দিতেন। নানা কাজে ব্রিকলেন, বেথনাল গ্রীণ, হোয়াইটচ্যাপেল ইত্যাদি এলাকায় তিনি সবসময় কাটাতেন। ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় মহিলা শীলা ঠাকুর (পরে শীলা ইসলাম) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর এ অঞ্চলে তাঁর অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়। কারণ তার স্ত্রী হোয়াইটচ্যাপেল রোডের ‘জাগোনারী সেন্টারে’ চাকরি করতেন। তা ছাড়া তিনি এ সময় স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষিকাও ছিলেন।
১৯৭৮ সালে বর্ণবাদী হামলায় আলতাব আলী মারা যাওয়ার পর বিশেষ করে ইস্ট লন্ডনে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সে সময়ও তিনি অন্যান্যের সাথে এখানে অবস্থান করে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্থানীয় লেবার পার্টির সাথেও তিনি যুক্ত ছিলেন। সৈয়দ আশরাফের একটি বিশেষ গুণ ছিল, তিনি অতি সাধারণভাবে ও সাধারণ মানুষের সাথে চলাফেরা করতে ভালবাসতেন। তাঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত বিনয়ী, অমায়িক ও বন্ধু সুলভ। তিনি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছেলেও হলেও এ নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিলো না। এমনকি তিনি নিজে মন্ত্রী থাকাকালীন যখনই লন্ডনে আসতেন অনেকেই তাঁর সাধারণ পোঁশাকে চলাফেরা করতে দেখে অবাক হতেন।
উচ্চমানের কোন ব্যবসা কেন্দ্রে যেতে বা বিলাসী পোশাক-আশাক ক্রয় করতে তাঁকে কেউ দেখেনি। তাঁর প্রিয় শপিং সেন্টার ছিল বেকটনে তাঁর আবাসস্থলের পাশর্¡বর্তী সাধারণ ব্যবসাকেন্দ্র ‘আজদা’ এবং ‘লিডল’। সেখান থেকে তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় অনেক কিছু ক্রয় করতেন। যুক্তরাজ্যে স্ত্রী ও মেয়ে ছাড়া বোন লিপি ও ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম ছিলেন তাঁর পরিবারের অন্যতম সদস্য। সৈয়দ আশরাফ মূলত তাঁর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মারা যাওয়ার পর একমাত্র মেয়ে রীমা ইসলাম তাঁর নিত্যসঙ্গী হন। লন্ডনে এলে তিনি মেয়েকে নিয়েই বসবাস করতেন। রীমা এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।
শেষ সময়ে তিনি দেশেই অবস্থান করেছিলেন। তাঁর অসুস্থতার সময়েও কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মনোনয়ন দেন এবং এ সময় সৈয়দ আশরাফ ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন শেখ হাসিনা তাঁর জন্য এলাকাবাসীর কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও শপথ নেয়ার পূর্বেই ৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সৈয়দ আশরাফ ছিলেন সৎ রাজনীতির এক বিশুদ্ধ পুরুষ। তার শূন্যতা সহজে পুরণ হবার নয়। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
রহমত আলী : যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক।