রবীন্দ্রনাথের ইউরোপ সফরকালে লেখা গান নিয়ে বিশেষ আয়োজন ‘অরূপ তোমার বাণী’ সঙ্গীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ এপ্রিল ২০১৯
লন্ডন, ২৬ এপ্রিল : ইউরোপ সফরের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিছু গান, কবিতা ও অনুবাদ দিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এক চমৎকার রবীন্দ্র সঙ্গীত সন্ধ্যা। ‘ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ- অরূপ তোমার বাণী’ শীর্ষক এই আয়োজনে ইউরোপে রচিত রবীন্দ্রনাথের ১৫টি গান গেয়ে শোনান শিল্পীরা। গতস ২০ এপ্রিল শনিবার পশ্চিম লন্ডনের ভারতীয় বিদ্যাভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজন উপভোগ করতে রবীন্দ্রপ্রেমীদের ভিড় জমে। যুক্তরাজ্যে বাংলা সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত সংগঠন ‘আনন্দধারা আর্টস’ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে রবীন্দ্রনাথের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর এবং গানগুলো রচনার পটভূমিও তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের গোড়াতেই ছিল গীতাঞ্জলি থেকে ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী, আমি অবাক হয়ে শুনি কেবল শুনি’ গানটির পাঠ ও তার ইংরেজি অনুবাদ। এই পর্ব পরিবেশন করে ‘আনন্দধারা আর্টস’-এর নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। উল্লেখ্য, গীতাঞ্জলির পান্ডুলিপি লন্ডনে হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে পাওয়া গিয়েছিল বেইকার স্ট্রিট পাতাল রেল স্টেশনের ‘লস্ট এণ্ড ফাউণ্ড’ শাখায়।
এরপর ‘সুন্দর বটে তব অঙ্গদ খানি’ দিয়ে শুরু হয় রবীন্দ্র সূরের মূর্ছনা। ১৯১২ সালের ২৬ জুন ইংরেজ সাহিত্যিক উইলিয়াম রদেনস্টাইনের লন্ডনের বাসায় কবি লিখেছিলেন গানটি। এরপর গাওয়া হয় ‘অসীম ধন তো আছে’ এবং ‘তোমারই নাম বলবো’। ১৯১৩ সালে লন্ডনের অভিজাত এলাকা চেলসির চেইন ওয়াকের একটি বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ এই গান দুটি লেখার আগেই তাঁর খ্যাতি ও প্রশংসা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু কবির মন পড়ে রইল তাঁর প্রিয় শান্তিনিকেতনে। সেখানেই তিনি ফিরে যেতে চাইছিলেন। এমননি এক মনের অবস্থায় তিনি ওই বাড়িতেই রচনা করেন- ‘এই মনিহার আমায় নাহি সাজে’।
এভাবে কবির ইউরোপ সফরের গল্পের ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয়- ‘জীবন যখন ফুলের মত’, ‘রয় যে কাঙাল শূণ্য হাতে’, ‘নাই নাই ভয় হবে হবে যে জয়’ এবং ‘গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে’সহ মোট ১৫টি গান। অনুষ্ঠানের শেষ গান ছিল ‘অরূপ তোমার বাণী’। ১৯২৬ সালে ইউরোপ ভ্রমণের সময় যাগ্রেভে কবি গানটির খসড়া করেছিলেন। আর বুখারেস্টে দিয়েছিলেন সেটির চূড়ান্ত রূপ। অনুষ্ঠানের মূল পর্বের আগে আনন্দধারা আর্টসের শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। মূল পর্বে গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শীলা মোমেন এবং লন্ডনের শিল্পী ইমতিয়াজ আহমদ। তাঁদের সঙ্গে কোরাস করেন স্থানীয় রবীন্দ্র শিল্পীরা। বেশ কয়েকটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথি শিল্পী সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা (তাথৈ নামে পরিচিত) এবং লন্ডনের শিল্পী সুচিস্মিতা গাঙ্গুলী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও গল্পের বর্ণনা করেন উদয় শঙ্কর দাশ এবং তানজিনা নুর-ই সিদ্দিকী। রবীন্দ্রপ্রেমীদের এই মিলনমেলার প্রথম পর্বে শিশুদের পরিবেশনাটি ছিলো দারুণ উপভোগ্য।
মূল পর্ব শুরুর আগে বিশিষ্ট লেখক-গবেষক ড. গোলাম মুর্শিদের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাহিত্যিক আবুল মোমেন। পুরো অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা করেন উদয়শঙ্কর দাশ। তিনি বলেন, ‘জীবনের নানা পর্বে ইউরোপের দেশে দেশে ভ্রমণের সময় কবিতা, চিঠি, ডায়েরি লেখার পাশাপাশি প্রচুর গানও লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সঙ্গীতগুচ্ছ থেকে কয়েকটি গান নির্বাচন করে অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছি’। তিনি বলেন, এসব গানগুলো বেশ পরিচিত। কিন্তু গানগুলোর পেছনের গল্প মানুষ খুব একটা জানে না। সেই গল্পগুলোও তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে এই আয়োজনে।