টাওয়ার হ্যামলেটসে ৭৮ শতাংশ বাসিন্দা মনে করেন এই জনপদে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষরা মিলেমিশে বাস করছেন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
লন্ডন, ০৫ সেপ্টেম্বর :: টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রতি দশ জনের মধ্যে আট জন, অর্থাৎ বাসিন্দাদের ৭৮ শতাংশই মনে করেন যে, এই জনপদে ভিন্ন ভিন্ন নৃতাত্বিক পরিচয়ের মানুষেরা মিলেমিশে বসবাস করতে পারছেন এবং স্থানিয় অধিকাংশ সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে তারা ইতিবাচক ধারনা পোষন করেন। কাউন্সিল ভালো কাজ করে যাচ্ছে বলেও মনে করেন ৬৯ শতাংশ বাসিন্দা।
সম্প্রতি স্থানিয় জনসাধারণের ওপর পরিচালিত নিরপেক্ষ ও স্বতন্ত্র মতামত জরিপে এই তথ্য ওঠে এসেছে। কাউন্সিলের সার্ভিসগুলো সম্পর্কে বাসিন্দাদের ধারনা এবং বিভিন্ন ধরনের ইস্যূ কিভাবে তাদের ও তাদের কমিউনিটিগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে, সেসম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা লাভের জন্য প্রতি বছর এই রেসিডেন্ট সার্ভে বা বাসিন্দাদের ওপর মতামত জরিপ চালানো হয়।
এ প্রসঙ্গে মেয়র জন বিগস বলেন, “আমাদের বাসিন্দাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ কোন্গুলো, সেসম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ধারনা লাভের ক্ষেত্রে এই বার্ষিক মতামত জরিপ আমাদের সাহায্য করে থাকে। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আমাদের বহু সাংস্কৃতিক বৈচিত্রতা। সকল ব্যাকগ্রাউন্ড অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি-কৃষ্টির মানুষের পাশাপাশি সহবস্থানের বিষয়টি বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছে এবারও ইতিবাচক বিবেচিত হওয়ায় আমরা অনুপ্রাণিত।”
মেয়র বলেন, “২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক ১৪৮ মিলিয়ন পাউন্ডের অনুদান কর্তনের কারণে আর্থিক সংকোচন অব্যাহত রয়েছে এবং সম্পদের স্বল্পতাও প্রকট আকার ধারন করছে। বিশাল এই আর্থিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও বাসিন্দারা যে অগ্রাধিকারগুলো সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন, সেসব ক্ষেত্রে এবং অপরাধ নির্মূল, সামর্থ্যাধীন বাড়ি-ঘরের ব্যবস্থা করা এবং বরাকে আরো পরিচ্ছন্ন ও সবুজ করে গড়ে তুলতে আমরা প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেছি।”
অন্যান্য বরার তুলনায় টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিক সন্তুষ্ট বলে এই জরিপে ফুটে ওঠেছে। যেমন, কাউন্সিলের ওপর আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ৬৯ শতাংশ বাসিন্দা, ৭২ শতাংশ বলেছেন কাউন্সিল তাদেরকে সবধরনের তথ্য সম্পর্কে অবহিত রাখে এবং কাউন্সিল তাদের উদ্বেগ গুরুত্বের সাথে শুনে থাকে বলে মনে করেন ৬১ শতাংশ বাসিন্দা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ হিসেবে যে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে এই জরিপে, তার মধ্যে রয়েছে ৪৮ শতাংশ মানুষ অপরাধ ও সমাজ বিরোধী আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন, ২৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন এফোর্ডেবল হাউজিংয়ের স্বল্পতার কথা। এছাড়া ২৮ শতাংশ বাসিন্দা ময়লা আবর্জনা ও অপরিচ্ছন্ন রাস্তার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রধান এই তিনটি ইস্যূ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘুরেফিরেই আসছে এবং এসব ইস্যূ মোকাবেলায় কাউন্সিল তার সম্পদ বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মনীতি গ্রহণ করছে। সহিংস অপরাধের ঘটনাগুলো জাতিয়ভাবে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করায় এই ইস্যূর ব্যাপারে গোটা লন্ডন সহ সারাদেশের মানুষের মধ্যেই উদ্বেগ উ্কক্তা বেড়েছে।
সারা লন্ডনে পুলিশের সংখ্যা হ্রাসের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলার স্বার্থে কাউন্সিল তার নিজস্ব তহবিল দিয়ে ৩৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার নিয়োগ করে। কাউন্সিল এবং পুলিশের মাধক বিরোধী যৌথ অভিযান ‘অপারেশন কন্টিনিয়ামে’র মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৯৬ জনকে গ্রেফতার, ১৭০টিরও বেশি ঘরে সাড়াশি অভিযান চালানো এবং ৫ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড নগদ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসারদের কার্যক্রম সম্পর্কে বাসিন্দাদের অবহিত রাখতে নতুন কমিউনিটি সেফটি ই-নিউজলেটার প্রকাশ করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নতুন বাড়ি নির্মানের ক্ষেত্রেও টাওয়ার হ্যামলেটস সারা দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। লন্ডনের ব্যয়বহুল এলাকা ও দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা এবং হাউজিং তালিকায় ২০ হাজারের মতো লোক অপেক্ষমান থাকায় এফোর্ডেবল হাউজিং বা সামর্থাধীন বাড়ি-ঘরের চাহিদার চাপ অনেক বেশি। তবে কাউন্সিল ২ হাজার নতুন কাউন্সিল মালিকানাধীন বাড়ি-ঘর সরবরাহের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বাড়িগুলো হবে সত্যিকার অর্থেই সামর্থের মধ্যে এবং হাউজিং রেজিস্টারে থাকা টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের মধ্যেই এগুলো বরাদ্দ করা হবে।
পরিচ্ছন্ন বরা নিশ্চিত করতেও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য ২০২০ সাল থেকে রাস্তা পরিস্কারকরণ ও আবর্জনা সংগ্রহ ও অপরাসারণের কাজটি কাউন্সিলের নিজস্ব তত্বাবধানে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
মতামত জরিপে কাউন্সিলের এওয়ার্ড বিজয়ী পার্কগুলোর প্রতি বাসিন্দাদের ভালোবাসা ফুটে ওঠেছে। ৭০ শতাংশ বাসিন্দা পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোকে ‘অনন্য’ ‘খুব ভালো’ অথবা ‘ভালো’ রেটিং প্রদান করেছেন। স্থানিয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষাকে ‘অনন্য’ ‘খুব ভালো’ অথবা ‘ভালো’ রেটিং দিয়েছেন ৭৪ ভাগ অভিভাবক। সেকেন্ডারি স্কুলের ক্ষেত্রে একই রেটিং প্রদান করেন ৬৫ শতাংশ অভিভাবক। রেসিডেন্টস সার্ভের বিস্তারিত ফলাফল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে (www.towerhamlets.gov.uk/residentssurvey) পাওয়া যাবে।