মোজাফফর আহমদ ছিলেন আমাদের স্বপ্নলোকের নায়ক: লন্ডনে স্মরণসভায় ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫২:৩৯,অপরাহ্ন ০৮ নভেম্বর ২০১৯
লন্ডন, ৮ নভেম্বর :: বাংলাদেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে শুধু সরকার দলই নয়, বিকল্প দলও চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। আর এ লক্ষ্যে ত্রিধাবিভক্ত ন্যাপসহ বাম প্রগতিশীল শক্তির এক পতাকাতলে সমবেত হওয়ার বিকল্প নেই।
তিনি গত সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য উপমহাদেশের বাম রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব, ন্যাপ সভাপতি সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক মেজাফফর আহমদ স্মরণে আয়োজিত নাগরিক স্মরণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে এ কথা বলেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীল রাজনীতির মহিরুহ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চলে গেছেন। তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ও জীবন দর্শন চর্চা করলে আমাদের রাজনীতি লাভবান হবে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, তিনি ছিলেন আমাদের স্বপ্নলোকের নায়ক। পলাতক থেকেও কিভাবে মানুষের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ রাখা যায় সে শিক্ষা পেয়েছি তাঁর মতো নেতাদের কাছ থেকে।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা রাজনীতিকদের আদর্শিক ও চারিত্রিক দুর্বলতার কারণেই নতুন প্রজন্ম এখন রাজনীতি বিমুখ। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিমুখী করতে মোজাফফর আহমদের মতো নেতাদের জীবন দর্শন চর্চায় তাদের উৎসাহী করতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির রাজনীতি চলতে পারে না, সরকার ও বিকল্প রাজনৈতিক দল দুটোই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুও দল ও প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে সময়টুকু তিনি পাননি। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটিতে হাত দিয়েছেন, তাঁর জন্য শুভ কামনা।
নাগরিক স্মরণ সভা প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মাহমুদ এ রউফের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। তিনি তাঁর বক্তব্যে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নিজের পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বুয়েটের ছাত্রী হিসেবে রাজনীতি না করায়, অধ্যাপক মোজাফফরের মতো নেতাকে পূর্ণাঙ্গ জানার সুযোগ হয়নি আমার। আজকের এই মঞ্চে আমিই সবচেয়ে ডিসকোয়ালিফাইড বক্তা। ইন্টারনেট ঘেটে মোজাফফর আহমদকে তিনি জানার চেষ্টা করেছেন, এমনটি জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েট ইউনিয়নের সমর্থন আদায়, ভারতের সাথে সোভিয়েটের সম্পর্ক তৈরি করে দেয়া ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন-চীন মোকাবেলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায়ে অধ্যাপক মোজাফফরের ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে শ্রদ্ধা করতেন এমন মন্তব্য করে হাই কমিশনার মোজাফফর আহমদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার চেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রয়াত এই নেতার লন্ডনে আয়োজিত আজকের স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর দূত হিসেবেই আমি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। অধ্যাপক মোজাফফরের জীবন ও কর্ম চর্চার লক্ষ্যে তাঁর নামে একটি ফাউন্ডেশন বা ইনস্টিটিউশন গড়ার উপর গুরুত্বারোপ করে সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, মোজাফফর আহমদের মত নেতাদের জীবন দর্শন প্রজন্মান্তরে পৌছাতে পারলে জাতি হিসেবে আমরা লাভবান হবো।
স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণ সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ। তিনি বলেন, ভিন্ন দলের হলেও অধ্যাপক মোজাফফর ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন একজন রাজনৈতিক বন্ধু। বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তাঁর চূড়ান্ত সফলতা আনা পর্যন্ত অধ্যাপক মোজাফফর ছিলেন তাঁর পাশে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জীবনী পাঠ করে শোনান উদীচী, যুক্তরাজ্যের সেক্রেটারি আমিনা আলী। যুক্তরাজ্যে বেড়েওঠা প্রজন্মের পক্ষে প্রয়াত মোজাফফর আহমদের প্রতি সম্মান জানান রুমি হক।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্মরণসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ রকিব আহমেদ ও পরিচালনা করেন সৈয়দ আনাস পাশা। সভার শুরুতে প্রয়াত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ওপর তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রচার হয় এবং স্মরণসভা উপলক্ষে একটি ম্যাগজিন প্রকাশিত হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার প্রেস আশেকুন্নবী চৌধুরী, যুক্তরাজ্য ন্যাপ সভাপতি আব্দুল আজিজ ময়না, জাসদ সভাপতি হারুনুর রশীদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, সিপিবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম, বাসদ সমন্বয়ক গয়াসুর রহমান গয়াস, উদীচী ও সিপিবির পক্ষে হারুনর অর রশীদ, জাসদ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল মনসুর, ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসান, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পিকার কাউন্সিলার আহবাব হোসেন, বার্কিং এন্ড ডেগেনহাম বারার কাউন্সিলার মঈন কাদরী, বাংলাদেশ থেকে আগত আশির দশকের ছাত্রনেত্রী ড. শিখা দাস পুরকায়স্থ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের এক সময়ের রাজনৈতিক অনুসারী ডাঃ আশফাক আহমেদ, হাবিব রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম কয়সর, আব্দুল মান্নান ও মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এ কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।