সিলেটে পৌঁছে যে বার্তা দিলেন শফিক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সিলেট, ১০ ফেব্রুয়ারি :: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিককে আগেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো সিলেট বিভাগের। আহমদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিলো তাকে। তবে- এর মধ্যে আর সিলেট আসা হয়নি শফিকের। মাঝখানে একবার ঢাকায় সিলেটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। জেনেছিলেন, সিলেট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা। দায়িত্ব পাওয়ার পর গতকাল সিলেটে প্রথম পা রাখলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক। পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরণ করে নেন সিলেটের নেতারা। তাকে বরণ করতে ওসমানী বিমানবন্দরে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও।
উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তাদেরকে নিয়ে সিলেটে ওলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত করলেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক। এদিকে- বিমানবন্দরে নেমেই তিনি নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দিলেন। গ্রুপিং-লবিং বন্ধ করে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিলেন তিনি।
তার সঙ্গে একই সুর মেলালেন কেন্দ্রীয় সদস্য কামরান। এ সময় তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন- সিলেটে কোনো গ্রুপিং আর বরদাস্ত হবে না। দ্বিতীয় দফা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কামরানের পরাজয়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে প্রকাশ পেয়েছিলো। একমাত্র গ্রুপিং রাজনীতির কারনে সিলেটে ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের। এ কারণে কেন্দ্রের নেতারা সিলেট আওয়ামী লীগের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে। ৫ই ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব পুরোপুরি পরিবর্তন করা হয়। এতে চমকে যান সিলেটের নেতারা। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর আসে চমকও।
সিলেট বিভাগ থেকে নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে। তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে সিলেট আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হয়। এ সময় দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিককে। দায়িত্ব পেয়ে গতকাল তিনি সিলেটে আসেন। নেমেই তিনি নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন- ‘কোনো ব্যক্তির নামে স্লোগান শুনতে সিলেট আসিনি। দলের জন্য দলীয় সভানেত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সিলেট সফরে এসেছি। সিলেটে এসেছি দলের কাজ করার জন্য, দলকে সুসংগঠিত করার জন্য। কোনো ব্যক্তির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করতে আমার সিলেটে আগমন নয়। তাই, কোনো ব্যক্তির নামে স্লোগান না দিয়ে স্লোগান দিতে হবে দলীয় সভানেত্রীর নামে, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নামে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সিলেটে কোনো গ্রুপিং এবং বিভাজন দেখতে চাই না। শৃঙ্খলভাবে দলকে পরিচালনা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, দলীয় প্রধানই দলের একমাত্র প্রাণশক্তি। দলের নেতাও হলেন শেখ হাসিনা। দলে থাকতে হলে দলীয় সভানেত্রীর নামে স্লোগান দিয়ে দলের কাজ করতে হবে।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা যুবলীগ সভাপতি ভিপি শামীম আহমদ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গিরদারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এদিকে, সিলেটে পৌছেই হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন তিনি। এরপর বিকাল ৩টায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। সিলেট সফরকালে তিনি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা সফর করবেন। নতুন পিপি ও জিপি নিয়োগ : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বাদ পড়ার পর এবার পিপি পদ হারালেন এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারী কৌশুলি (জিপি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এডভোকেট রাজ উদ্দিন। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাকে এ নিয়োগ দেয়া হয়।
তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক কমিটির সহ সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে আইন পেশায় যুক্ত রয়েছেন। এ পদে দায়িত্ব পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও সহকর্মী আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন এডভোকেট রাজ উদ্দিন। এছাড়া- পিপি পদে নিয়োগ পেলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন। গত রোববার পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি পদে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।