দুবাইয়ে বাংলাদেশী যুবকের সততার অসামান্য নজির
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
কম্পিউটার ডিজাইনের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে ট্যাক্সির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখেছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক আরিফুল করিম। দুবাই ট্যাক্সি কর্পোরেশনের একটি ট্যাক্সি চালান ২৮ বছর বয়সী এ যুবক। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীদের পৌঁছে দেন। এই চাকরিটা বেশ উপভোগ করেন আরিফুল। ২ বছর এ পেশায় রয়েছেন তিনি। গত বছর পবিত্র রমজান মাস শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে সততার অসামান্য এক নজির সৃষ্টি করেছেন এবং সততার যথাযোগ্য স্বীকৃতি, সম্মান ও প্রশংসা পেয়েছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন এক যাত্রীকে। এক যাত্রী ভুল করে আরিফুলের গাড়িতে নগদ ২ লাখ ৩৫ হাজার দিরহাম বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ফেলে গিয়েছিলেন। এতো বিপুল অর্থ হাতে পেয়েও নীতিভ্রষ্ট হননি আরিফুল। কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পুরো অর্থটাই তিনি ওই যাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার সততার স্বীকৃতিস্বরূপ রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) এ বাংলাদেশীকে ব্যাজ ও সনদ প্রদান করে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। গর্বভরে আরটিএ থেকে পাওয়া ব্যাজটি দেখান তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এমিরেটস টোয়েন্টি ফোর সেভেন।
আরিফুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, গত বছর রমজান মাস শেষ হওয়ার ঠিক আগে এ ঘটনা ঘটে। এক যাত্রী মনের ভুলে তার জিনিসপত্র ক্যাবে রেখেই চলে যান। আমি বিষয়টি খেয়াল করিনি এবং এরপর আরও কয়েকজন যাত্রীকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই। ট্যাক্সিতে একটু আরামের জন্য গা এলিয়ে দিতেই একটি কাগজের প্যাকেট দেখতে পাই। দুটি সিটের মধ্যিখানে পড়ে ছিল সেটি। সিটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে প্যাকেটটি বের করে আনতেই বুঝলাম এর মধ্যে নগদ অর্থ আছে। আমি টাকাটা গুণে দেখলাম ২ লাখ ৩৫ হাজার দিরহাম আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আরটিকে বিষয়টি জানালাম এবং কার্যালয়ে প্যাকেটটি জমা দিলাম। একদিন পর ওই যাত্রী আরটিএ কার্যালয়ে গেলেন। তাকে বলা হলো, তার প্যাকেটটি যেমন ছিল, তেমনই আছে। আমাকেও ডাকা হলো এবং আমি ওই যাত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি ছিলেন ইরানের নাগরিক। পুরস্কার হিসেবে আমাকে ৩০০ দিরহাম দিলেন তিনি।
আরটিএ কর্তৃপক্ষও একটি ব্যাজ ও সার্টিফিকেট বা সনদ দিয়ে আরিফুলের সততার স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলছিলেন, এটাই প্রথমবার নয়। এর আগেও বহুবার তিনি যাত্রীদের উপকার করেছেন। তিনি বলছিলেন, যাত্রীরা প্রায়ই তাদের মানিব্যাগ বা মোবাইল ভুল করে ফেলে যান। প্রতিবার আমি কার্যালয়ে রিপোর্ট করি এবং যাত্রীদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র সেখানে জমা রাখি। একবার তো তাকে এক যাত্রী ভাড়া পরিশোধের সময় ৫৮ দিরহামের পরিবর্তে ভুল করে ৫৩০ দিরহাম দিয়েছিলেন। সে কথা মনে করে আরিফুল বলছিলেন, আমি যখন বুঝলাম তিনি আমাকে ৫৮ দিরহামের পরিবর্তে ভুল করে ৫৩০ দিরহাম দিয়েছেন, আমি তাকে ডেকে সেটা বললাম। ভোর ৪টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ট্যাক্সি চালান আরিফুল। তিনি বলছিলেন, তার পিতামাতা সবসময় সঠিক পথ বেছে নেয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। স্মিত হেসে আরিফুল করিম বলছিলেন, আমার ভালোমন্দ আল্লাহ দেখেন, তো আমি কেন অযথা দুশ্চিন্তা করবো?