ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
এবছরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার হয়েছে। বর্তমানে একই কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এ বছর এক গবেষণায় দেখা যায় যে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেছেন যে ডেঙ্গু একবার আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় দফা তাদের ডেঙ্গু হলে হেমোরেজিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে শুধু সতর্কতা অবলম্বন করা অতীব জরুরি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সূত্রে জানা যায়, এ বছর বৃষ্টিপাতের কারনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। জুন-জুলাই-আগষ্ট মাস ডেঙ্গুর মৌসুম। অন্যান্য বছর এই সময়ে ডেঙ্গুর কিছুটা প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ বছর বৈরী আবহাওয়ার কারনে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রভাব থাকবে বলে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়। এই ডেঙ্গু জ্বর এক সময় খুবই আতঙ্কের ছিলো। ঘাতক ঢাকা ফিভার হিসেবে এর পরিচিতি ছিলো। ১৯৬৬ সালে এই ডেঙ্গু জ্বর প্রথম ঢাকায় দেখা দেয়। ওই সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় এর প্রকৃত কারন নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা ওই সময় এর নাম দিয়েছিলেন ‘ঢাকা ফিভার’। এই জ্বরে ওই সময় বেশ কিছু লোক মারা যায়। ২০০০ সালে এই জ্বরে ব্যাপক প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক সহ শতাধিক লোক ডেঙ্গু জ্বরে মারা যায়। আক্রান্ত হয়েছিলো কয়েক হাজার। তখন এই রোগের উত্পত্তি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হলেও দু’একজন বিশেষজ্ঞ ছাড়া এ রোগের চিকিত্সা ছিলো সকলের অজানা। এটা দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জরুরি ভিত্তিতে থাইল্যান্ড থেকে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিত্সকদের আনা হয়। প্রয়াত মেয়র মো. হানিফের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ওই সময় ডেঙ্গু জ্বরের বিষয়ে চিকিত্সা ও ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরোধ নিয়ে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে এই রোগের চিকিত্সা হয়ে উঠে স্বাভাবিক। এই জ্বর নিয়ে তখন আতঙ্কিত হওয়ার কোন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। পরবর্তীতে প্রতি বছরের মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে এবং কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল¬াহ মুন্সীর নেতৃত্বে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের উপর গবেষণা চালান। এতে প্রমাণ পান যে এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। কারন তারা আগেও এক দফা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হেমোরেজিক হলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ বছর সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ছেলেসহ ৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক হাজার। এর প্রাদুর্ভাব আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা সতর্ক করেছেন।
সুনামধন্য মেডিসিন ও ডেঙ্গু জ্বর বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল¬াহ বলেন, ডেঙ্গু চার ধরনের ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। এই ভাইরাসের বাহক এডিস মশা। একবার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয় দফা ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হলে এক্ষেত্রে হেমোরেজিকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারন নেই। এক্ষেত্রে শুধু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ডেঙ্গু জ্বরে চিকিত্সা ও ব্যবস্থাপনা সকল চিকিত্সকেরই জানা। হেমোরেজিক হলে রক্তপাত হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে মাথা ও পিঠ ব্যাথা এবং সারা দেহে ব্যাথা থাকবে। এই অবস্থা দুই তিনদিন থাকতে পারে। জ্বর কমবে না। ২/৩ দিন পর শরীরে রেস দেখা দিবে। এই সব হলে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। ২/৩দিন পরেও জ্বর না কমলে কিংবা জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। জ্বর হলে প্যারাসিটামল, ওরস্যালাইন, ডাব, শরবতসহ প্রচুর পানি সেবন করতে হবে। কোন অবস্থায় ব্যাথানাশক ভল্টারিন , এ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষুধ কিংবা এন্টিবায়েটিক না খাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক। এডিস মশার বংশ বিস্তার স্বচ্ছ পানিতে হয়ে থাকে। এর উত্সস্থল ধ্বংস করলেই বা সতর্কতা অবলম্বন করলে সহজেই প্রতিকার সম্ভব।