নাড়িছেঁড়া ধন ডাকবে না আর মা বলে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
অভাবই কেড়ে নিয়েছে মায়ের মমতা। ছিন্ন হয়েছে মাতৃবন্ধন! পেটে ধারন করেও সন্তানকে বুকে আগলে পারলেন না মা ময়না (২০)। গর্ভধারিণী হয়েও কখনও আর শোনা হবে না সন্তানের মুখ থেকে মা ডাক।
অভাবের সংসারে জন্ম নেয়ার কারণে মা তার সন্তানের সঙ্গে সব বন্ধন ছিন্ন করে সদ্যজাত সন্তানকে তুলে দিয়েছেন অন্যের কোলে। বিনিময়ে নিশ্চিত করতে চেয়েছেন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর সঙ্গে এক লাখ টাকা।
কোলের সন্তান বিক্রির এ ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালী পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায়।
তরুণী মা ময়না বেগম বাংলামেইলকে জানান, তার বাড়ি ঢাকায়। জন্ম ঢাকার একটি বস্তিতে। চাকরি করতেন পোশাক কারখানায়। একই কারখানায় কর্মরত সুমন নামে এক যুবকের সঙ্গে বিয়েও হয়। সুমনের বাড়ি পটুয়াখালী। সেই সুবাদে ময়না চলে আসেন পটুয়াখালী স্বামীর বাড়িতে। দু’জনের সংসার বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু বিয়ের বছর দুয়েকের মাথায় অসুখে স্বামী সুমন মারা যান। অসহায় হয়ে পড়ে ময়না। রাজজোগালী, ইট ভাঙাসহ কঠোর পরিশ্রমে জীবন কাটাচ্ছিল ময়না। এরপর নুরু নামে স্থানীয় এক রিকশা চালকের সঙ্গে দ্বিতীয় বার বিয়ে হয় ময়নার। কিন্তু বিয়ের তিনদিনের মাথায় ময়নাকে ফেলে উধাও হয়ে যায় নুরু। এরপর আর ময়নার খোঁজ নেয়নি নুরু।
ময়না বেগম আরো জানান, দ্বিতীয় স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেও গর্ভে রেখে যায় সন্তান। ততদিনে ময়না দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এরপর কষ্টের আর সীমাপরিসীমা থাকেনা তরুণী ময়নার। কলেজ রোডের সিকদার বাড়িতে ৬০০ টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে সেখানেই বসবাস ময়নার।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু অভাবের কারণে সন্তানকে বুকে আগলে রাখতে পারেননি। লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বুকের ধনকে। চট্টগ্রামের এক নিঃসন্তান ধনাঢ্য দম্পতি জন্মের ছয়দিনের মাথায় মঙ্গলবার শিশুটিকে কিনে নিয়েছেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ময়না বলেন, ‘আমি যে অভাবে বড় অইছি, হেই অভাবে আমার মাইয়াডা বড় অউক এডা আমি চাই না। অভাবের কারণে আমার জীবনডা তছনছ অইয়া গেছে। অর মাইয়াডার জীবনডা তছনছ, ছন্নছাড়া হউক এইডা অইতে পারে না। এই লাইগা ধনি মাইনসের কোলে অরে উডাইয়া দিছি। বাইচ্চা থাকলে ধনি মাইনসের পরিচয়ে বড় অইবে। অভাব থাকপে না অর জীবনে….।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তরুণী মা ময়না।