স্লিম ফিগারের জন্য করণীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
অতিরিক্ত চর্বি জমে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা দশভাগ বেড়ে গেলে তাকে আমরা মুটিয়ে যাওয়া বলে থাকি। সাধারণত মাঝবয়সে পৌঁছানোর পরপরই শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা শুরু হয়। তবে কিছু কারণে যে কোনো বয়সেই একজন মানুষ মুটিয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ এবং কম শারীরিক পরিশ্রমই এর প্রধান কারণ। এছাড়া কিছু হরমোন জাতীয় রোগ, পারিবারিক প্রবণতা এবং কোনো কোনো ওষুধও এর জন্য দায়ী।
আমাদের অনেকের জীবনেই স্থূলতা বা বাড়তি ওজন বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বাড়তি ওজন শুধু শারীরিক নয়, বিভিন্ন মানসিক ও সামাজিক সমস্যার কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাই আমরা বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ দেহ আর কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেতে চাই। হালকা-পাতলা ও ছিপছিপে শারীরিক গঠন সৌন্দর্যের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি চলাফেরা ও কাজকর্ম করা যায় সহজে। শরীর স্থূল হয়ে গেলে নানা অসুখ-বিসুখ শরীরে এসে বাসা বাঁধে।
সমস্যা দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত সে লক্ষে পৌঁছতে আমরা যে পথ অবলম্বন করি সেখানে। ওজন কমানোর কথা এলেই বা ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রথম যা করি তা হচ্ছে- খাবার নিয়ন্ত্রণ। আমাদের বাড়তি ওজনের জন্য যত শত্রুতা যেন শুধু খাবারের সঙ্গে। কয়েকদিন না খেয়ে থেকে অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে যান আর কেউ কেউ কিছুদিন কোনো পরিবর্তন না দেখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আবার আগের মতোই খেতে শুরু করেন। অতএব ফল শূন্য। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তিন মাস চেষ্টা করে ওজন কমানোর। এই তিন মাস একটু কষ্ট হলেও নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে- তারপর ওজন মেপে দেখুন।
এবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কয়েকটি নিয়ম সহজভাবে জেনে নেয়া যাক-
১. প্রচুর পানি পান করুন।
২. প্রতিদিন সকালে গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।
৩. প্রতিবার খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে একগ্লাস পানি পান করুন।
৪. কম ক্যালরিযুক্ত তাজা ফলমূল ও সবুজ শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে।
৫. উচ্চ শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য যেমন- চাল ও আলু নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে।
৬. সাধারণ চা বা কফির পরিবর্তে সবুজ চা পান করুন।
৭. শসা, ক্ষীরা, টমেটো ও ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৮. তিতা স্বাদযুক্ত সবজি বিশেষ করে করোলা বাড়তি ওজন কমানোর জন্য খুবই কার্যকর।
৯. মসলা জাতীয় খাবার যেমন- আদা, দারুচিনি, কালোমরিচ ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১০. খাওয়ার সময় অতিরিক্ত লবণ খেলে এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
১১. উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
১২. মিষ্টি শরবত, কোমলপানীয়, সব রকম মিষ্টি, তেলে ভাজা খাবার, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, শুকনা ফল, ঘি, মাখন, পনির, দুধের সর- এসব খাবার যত পছন্দেরই হোক বাদ দিতে হবে
১৩. রাতে খাবারের পর অনেকেই অতিরিক্ত কিছু খেতে পছন্দ করেন। এ অভ্যাস বর্জন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় এ খাবার শরীরে বাড়তি ওজন যোগ করে।
১৪. কোনো সফলতা উপভোগ করার সময় পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে খাবার খাওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে বরং কোথাও ঘুরে আসুন। এতে যেমন প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটবে, তেমনি ওজনও কমবে। বাইরে খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ফাস্টফুড জাতীয় ভারী ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
১৫. শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রণই আমাদের ওজন কমাতে পারে না, সেই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে যদি ৫০০ ক্যালরি কমানো যায় তাহলে ওজন কমে প্রতিসপ্তাহে আধাকেজি। আমরা প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে হাঁটি, সাইকেল চালাই অথবা সাঁতার কাটি তখন দেখা যায় ওজন কমছে ২ গুণ। যারা কায়িক শ্রম বেশি করেন তাদের ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। সময়ের অভাবে যারা আলাদা করে এক্সারসাইজ করতে পারেন না তারা সকালে ঘুম থেকে ওঠে বিছানায় বসেই কিছু হালকা ব্যায়াম করে নিন। আর কাছাকাছি দূরত্বে কোথাও যেতে হলে হেঁটে যান। ওপরে উঠতে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে চলুন। ছোটখাটো কাজ অন্যকে দিয়ে না করিয়ে নিজে করার অভ্যাস করুন।
১৬. শরীরের বাড়তি ওজন একদিনে বা এক সপ্তাহে বাড়েনি, তাই খুব অল্প দিনে কমে যাবে এটা ভাবাও ঠিক নয়, দীর্ঘ তিন মাসের পরিকল্পনা করুন ও ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন। কাঙ্ক্ষিত আকর্ষণীয় ফিগার পেতে নিয়ম মেনে চললে, দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যায়াম চর্চা করলে স্বপ্ন আপনার হাতে ধরা দিবেই। আপনি হয়ে উঠতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ফিগারের অধিকারী।