‘হত্যার পর পরনের সমস্ত কাপড় খোলে চুলার আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় বকুলীকে’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০১৫
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা:মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার খলিলপুর গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার মেজো মেয়ে খুরশীদাকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার এক বিয়ে পাগল লম্পট বিয়ে করে। খুরশিদাকে বিয়ের পর আরো একাধিক বিয়ে করে সে। সে কারণে লম্পট স্বামীকে খুরশিদা তালাক দেয়। এতে স্ত্রীর ওপর ক্ষুদ্ধ হয় লম্পট স্বামী। অনেক চেষ্টা পরও স্বামীকে গ্রহণ না করায় স্ত্রীকে ফাসাতে যড়যন্ত্র শুরু করে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের আপন চাচি বকুলী বেগমকে তার স্ত্রীর সাথে সমঝোতা করে দেওয়ার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান শ্বশুরের বাড়িতে নিয়ে আসে।
এরপর ওই দিন এই বাড়ির পরিত্যক্ত রান্না ঘরে বকুলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এ-সময় তার পায়ে বেঁধে রাখে একটি চিরকুট ও একজনের কাবিননামা। হত্যার পর মৃত দেহের মুখমণ্ডল চুলার মধ্যে শরীরে নিচের অংশ উলঙ্গ করে ফেলে রাখে। ফলে তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মাসুদুর রহমান দুইজনকে গ্রেফতার করার পর এই সব তথ্য বের করেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃতরা হলো মৌলভীবাজা সদর উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের মৃত সোলেমান মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন (৩২) ও কমলগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম কালেঙ্গা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে কাউছার মিয়া (৩১)। তাদেরকে বুধবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিহত বুকুলি বেগমের পরিচয় দিয়ে 1443715311হত্যার ব্যাপারে মুখ খুলেছে ধৃত কাউছার মিয়া। খুরশীদার স্বামীকে গ্রেফতারের স্বার্থে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতার নাম গোপন রাখছে পুলিশ।
বকুলী হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়েরের ৭ দিনের মাঝে লোমহর্ষক ঘটনার ক্লু উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ আরো জানায়, বকুলী ৪ ছেলে সন্তানের জননী। ইতিপূর্বে এই খুনের মূল হোতা মৌলভীবাজারের সোনাপুর গ্রামে নিজের ১২ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের পর যোনী পথে লাঠি ঢুকিয়ে হত্যা করে। এই মামলায় সে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত ফেরারি।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুজন জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বকুলী বেগমকে মৌলভীবাজারের সোনাপুর থেকে বেরীরপাড় স্ট্যান্ড নিয়ে আসে। এরপর সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার স্ত্রী ছবুরা খাতুন (৭০) এর বাড়ির রান্না ঘরে এনে খুন করে। হত্যার পর পরিত্যক্ত রান্না ঘরে মৃতদেহ ফেলে রাখে এবং বকুলীর শরীরে পরনের সমস্ত কাপড়চোপড় খুলে চোলায় মুখ নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বকুলীর মুখসহ শরীরের অধিকাংশ অংশ ঝলসে যায়।
Bokuli Begum Pic MB333তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাসুদুর রহমান জানান, নিহত বকুলীর লাশ ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। তখন নিহতের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধারের সময় বকুলীর বাম পায়ে হত্যাকারীরা কিছু কাগজপত্র বেধে দেয়। সেখানে সেলিনা বেগম নামে এক মহিলার একটি চিরকুটসহ তার কাবিননামা ও খুরশীদা, তার ভাইয়ের ছেলে দুলাল ও মেয়ের জামাই উজ্জ্বল, দেবরের ছেলে সোহেল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হিসেবে চিরকুটে উল্লেখ ছিল। এই চিরকুটের সূত্র ধরে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো.মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি এই নৃশংস হত্যাক্ডের মূল হোতাকে গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্ঠা চালিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগরিই এদের গ্রেফতার করতে পারবো।