দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০১৫
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আজকে বাংলাদেশের এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণরূপে হাসিনা দায়ী। বাংলাদেশে এখন একটি রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে, যা চালাচ্ছেন হাসিনা। তিনি যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন, তার সৈন্য-সামন্তরা সেভাবে কাজ করছে। অন্য কারও আদেশ-নির্দেশ সেখানে চলে না।’
রবিবার রাতে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনের রিভারব্যাংক পার্ক প্লাজা হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘নাগরিক সভা’য় তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি তাকে শুধু ‘হাসিনা’ বলে সম্বোধন করেন।
যুক্তরাজ্য সফররত খালেদা জিয়ার সম্মানে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি ওই সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাওয়ার পর দেড় মাসে এই প্রথম তিনি প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখলেন। সভা চলাকালে হোটেলের সামনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদের পরিচালনায় সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকেও দর্শক সারিতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মোটেও ভালো নেই। দেশে এখন আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বাংলাদেশে এখন কায়েম হওয়া রাজতন্ত্র চালাচ্ছেন একজন লেডি হিটলার। সবকিছু তার কথামতো চলে। দেশে গণতন্ত্র নেই। সেজন্য একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। ইতালির নাগরিক তাভেল্লা চেজার হত্যার মুহূর্তে কূটনৈতিক পাড়ার সড়কের বাতি বন্ধ ছিল কেন? তার জন্য কি বিএনপি দায়ী?’
ভয় দেখানো হচ্ছে: খালেদা জিয়া বলেন ‘জঙ্গিদের কথা বলে হাসিনা বিদেশিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। বুঝাতে চাইছেন, তিনি ক্ষমতায় না থাকলে এবং বিএনপি এলে জঙ্গিদের উত্থান হবে। জঙ্গি জঙ্গি হাসিনাই বলেছে, কিসের জন্য? যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠান, পল্টনে সিপিবির সভা, রমনার বটমূলে, গোপালগঞ্জের গির্জায় ও নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের সভায় বোমা হামলার ঘটনা আওয়ামী লীগের আমলেই ঘটেছিল; কিন্তু একটা জঙ্গিও তারা ধরেনি।’
বৈধতা পেয়ে যেত: চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চিত্র বর্ণনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘হাসিনার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে চাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ওই নির্বাচনে অংশ নিলে এই সরকার দেশে-বিদেশে বৈধতা পেয়ে যেত।’
সবকিছু ভুলে যেতে হবে: বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না- মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি ধ্বংস নয়, গড়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। সবকিছু ভুলে যেতে হবে। আওয়ামী লীগকে হটাতে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিএনপিকে ভাঙা যাবে না: আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপিকে একেবারে শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপিকে ভাঙা যায় না, ভাঙা যাবে না। ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনও সেরকম চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু পারেনি। সত্যি কথাই বলি, এরশাদ তেমন করেনি।’ তিনি বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা ও মঈন উদ্দিন জড়িত।’
জামিন পান না: বিএনপির নেতা-কর্মীদের জামিন দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি শীর্ষনেত্রী। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন থেকে মেধাবী ও যোগ্য অনেককে বের করে দেয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৪শর বেশি কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে।
দেশে ফিরতেই হবে: দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস লন্ডনে অবস্থানের কারণ ব্যাখ্যা করে বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, চিকিত্সা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি লন্ডনে একান্ত ব্যক্তিগত সফরে এসেছেন। পরিবারের লোকজন তাকে আরো কিছুদিন রেখে দিতে চায়। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন দেশের কী অবস্থা। সেজন্য আমাকে দেশে ফিরে যেতেই হবে।