নির্বাচনী আদালতের রায়কে লুৎফুরের চ্যালেঞ্জ : ‘রায় বাতিল করা হোক নতুবা আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী বিচার শুরু হোক’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০১৭
দেশ রিপোর্ট:
আদালতের যে রায়ের মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন লুৎফুর রহমান। ২০১৪ সালের মেয়র নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভের পর বছর না ঘুরতেই ২০১৫ সালে এক নির্বাচনী আদালতে লুৎফুরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়ে অভিযোগে বলা হয়, তিনি ওই নির্বাচনে দুর্নীতি ও অবৈধ তৎপরতার মাধ্যমে জয়লাভ করেছিলেন।
আদালতে লুৎফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁকে মেয়র পদ থেকে অপসারন, পাঁচ বছরের জন্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে নিষিদ্ধ করা এবং মামলার ব্যয় বাবদ ২৫০ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করার রায় দেয় আদালত। তবে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মেট্রপলিটন পুলিশ এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকার কারণে লুৎফুর রহমানকে ফৌজদারী (ক্রিমিনাল) বিচারের আওতায় না আনার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১৭ মে বুধবার রয়েল কোর্টস অব জাস্টিসে জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন লুৎফুর রহমান। আবেদনে লুৎফুর রহমান বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া নির্বাচনী আদালতের রায় বাতিল করা হোক নতুবা তাঁর বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ফৌজদারী (ক্রিমিনাল) বিচার শুরু করা হোক। ফৌজদারী বিচার শুরু হলে তিনি জুরি ট্রায়ালের মুখোমুখি হয়ে আত“পক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন।
লুৎফুরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার বাদীর নাম, নির্বাচনী আদালতের নাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নাম এবং পাবলিক প্রসিকিউশনের ডাইরেক্টারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে জুডিশিয়াল রিভিউয়ের আবেদনে। নির্বাচনী আদালতে প্রমাণিত বিষয়গুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার আইনের আর্টিকেল-৬ এর পরিপন্থী বলে আবেদনে উল্লেখ করেন লুৎফুর রহমান। ওই আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ক্রিমিনাল কোর্টে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন ব্যক্তিকে নির্দোষ হিসাবেই ধারণা করা হবে। নির্বাচনী আদালত এবং ফৌজদারী আদালত উভয় ক্ষেত্রেই অভিযোগ “সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত” হওয়ার বিধান রয়েছে। লুৎফুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার পল বওয়েন কিউসি বলেছেন, নির্বাচনী আদালত আসলে একটি আধা-ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা। নির্বাচনী প্রতারণার বিচার যখন ফৌজদারী মামলার আওতায় করা হয় তখন তার ‘উপাদানগুলো’ যেভাবে বাছ-বিচার করা হয় নির্বাচনী আদালতেও সেভাবে বাছ-বিচার হওয়া উচিত।
পল বওয়েন আরো বলেন, ২০১৫ সালের নির্বাচনী আদালতের রায়টি যেভাবে দেওয়া হয়েছে তাতে লুৎফুর রহমানকে ক্রিমিনালী গিলটি (ফৌজদারী অপরাধে অপরাধী) হিসাবেই দেখা হয়েছে বলে মনে হয়। ব্যারিস্টার পল বওয়েন আরো বলেন, “নির্বাচনী আদালতে দোষী প্রমাণিত হলেই যে আপনি ক্রিমিনাল কোর্টেও দোষী প্রমাণিত হয়ে গেলেন, তা নয়”। পল বওয়েন কিউসি বলেন, যদি ক্রিমিনাল কোর্টে সক্রিয় কোনো বিচার প্রক্রিয়ায় কেউ দোষী প্রমাণিত না হয় তবে সরকারী কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে দোষী হিসাবে বিবেচনা করতে পারেনা। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি পুলিশের সাথেও সংশ্লিষ্ট। কিন্তু নির্বাচনী আদালতের রায় “পড়ে মনে হয় তিনি যেনো ফৌজদারী অপরাধ (ক্রিমিনাল অফেন্স) করে ফেলেছেন”।
গত মার্চ মাসে লন্ডন মেয়রের পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিটির চেয়ার লুৎফুর রহমানকে ক্রিমিনাল আইনে বিচারের আওতায় না আনার জন্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তীব্র সমালোচনা করেন। লুৎফুরের বিষয়ে তদেন্ত “বড় ধরনের ব্যর্থতা” রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। লন্ডন মেয়রের পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিটিতে প্রশ্নোত্তর দিতে গিয়ে কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি বলেন, মেট পুলিশের নির্বাচনী প্রতারনার তদন্তে লুুৎফুরের নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে। কান্ডি বলেন, মেট পুলিশের কাজ আর নির্বাচনী আদালতের কাজের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আছে। জনশ্রুতি মতো তথ্য-প্রমাণ ক্রিমিনাল বিচার প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করা হয়না। লন্ডন মেয়রের পুলিশ এন্ড ক্রাইম কমিটির সাথে বৈঠকের পর পুলিশ জানিয়েছে, অতীতে যে ২৭টি ফাইল তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি সেগুলো তারা এখন দেখছে। তবে ওই ২৭টি ফাইল নির্বাচনী আদালত ইতোপূর্বে দেখেছে।