১৬ এমপির পৃথক নির্বাচনী ইশতেহার : জেরেমি করবিনের প্রকাশ্য বিরোধীতায় রুশানারা আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০১৭
দেশ রিপোর্ট:
লেবার নেতা জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিরোধীতা অব্যাহত রেখেছেন বেথনাল গ্রীন এন্ড বো এলাকার লেবার দলীয় এমপি প্রার্থী রুশানারা আলী। আগামী ৮ জুনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার দল থেকে প্রার্থী হওয়া লন্ডনের ১৬জন এমপির সাথে জোট পাকিয়ে বিকল্প নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন তিনি। দলীয় নেতৃত্বের ধারার বাইরে গিয়ে কেবল লন্ডনের জন্য প্রণীত বিকল্প ওই ইশতেহারে ইউরোপের একক বাজারে বৃটেনের পূর্ণ সদস্য পদ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। “স্টপ হার্ড ব্রেক্সিট: হোয়াই লন্ডন নিডস দ্যা সিঙ্গেল মার্কেট” শিরোনামে প্রকাশিত এক পুস্তিকাটি (ইশতেহার) যৌথভাবে রচনা করেছেন সাবেক শেডো বিজনেস সেক্রেটারি চুকা উমুনা ও হেইডি আলেক্সান্ডার। লন্ডনের জন্য আলাদা প্রতিশ্রুতি দেয়া লেবারের ওই ১৬ এমপির মধ্যে আরো রয়েছেন নিউহ্যামের এমপি স্টিফেন টিমস, স্টেলা ক্রিসি, কারেন বাক, ডেভিড লামি, সিমা মালহোত্রা ও এন্ডি সৗটার।
পুস্তিকায় বলা হয়েছে, ইউরোপের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর সরাসরি নির্ভরশীল লন্ডনের সাড়ে ছয় লাখ লোকের চাকরি। এই বাণিজ্যের পথে যে কোনো অন্তরায় অর্থনৈতিক উন্নতিতে মন্থর গতি সৃষ্টি করবে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস করবে। ব্রেক্সিটের পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক সমর্থন থাকার কারণে কৌশলগত কারণে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বেশ কিছুদিন যাবত ইউরোপের সিঙ্গেল মার্কেটে থাকা ও ইউরোপের জনগণের অবাধ যাতায়াতের বিষয়টিকে দলীয়ভাবে পুরোটা খোলাসা করছিলেন না। অবশ্য ১৭ মে মঙ্গলবার দলীয় নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে কনজারভেটিভ পার্টির ব্রেক্সিট-সংক্রান্ত শ্বেতপত্র বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। এই ঘোষণার পর লন্ডনের লেবার দলীয় এমপিদের নিজ নিজ নির্বাচনী প্রচারণায় সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও দলীয় নেতা জেরেমি করবিনের প্রতি আনুগত্য কিংবা তাঁর রাজনৈতিক আদর্শকে গ্রহণ করছেন না লন্ডনের অনেক এমপি। রুশানারা আলী নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ব্যবহৃত লিফলেটে দলীয় নেতা জেরেমি করবিনের ছবি ব্যবহার না করে লন্ডন মেয়র সাদিক খানের সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করেছেন।
চারপৃষ্ঠার নির্বাচনী পুস্তিকার কোথাও দলের নেতা জেরেমি করবিনের নাম পর্যন্ত উল্লখ করেননি রুশানারা আলী। অথচ যে সাদিক খানকে লেবার পার্টির বড় নেতা হিসাবে মনে করেন রুশানারা আলী, সেই সাদিক খানই জেরেমি করবিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখার আশা প্রকাশ করে লেবার পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারের অধিকাংশ প্রস্তাবকেই স্বাগত জানিয়েছেন। গত কয়েক দশকের ইতিহাসে লেবার পার্টির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জেরেমি করবিনের প্রতি বাঙালি এমপি রুশানারা আলীর আনুগত্যের ঘাটতি এবং বৈরী মনোভাব খুব পুরনো নয়। লিডারশীপ নির্বাচনে জেরেমি করবিনের অংশগ্রহণ এবং লিডার নির্বাচিত হওয়ার পরই এর শুরু।
গত বছরের ২৯ জুন রুশানারা আলী জেরেমি করবিনকে দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেলেন। দলীয় নেতা হিসাবে জেরেমি করবিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, “ভদ্রলোক হিসাবে আমি তাঁকে যেভাবে চিনি, তিনি যদি তাই হোন তবে তিনি (পদত্যাগ করে) ভালো কাজটিই করবেন এবং আমাদের কমিউনিটি, আমাদের দেশ ও আমাদের দলের স্বার্থ তিনি আগে দেখবেন”। জেরেমি করবিনের নেতৃত্বের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সেদিন রুশানারা আলী আরো বলেছিলেন, “সামনের দিনগুলোতে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য, সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার জন্য এবং সম্ভাব্য ম্যধবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য লেবার পার্টিতে (জেরেমি করবিন ছাড়া) শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার”। পৃথক ইশতেহারে রুশানারার সমর্থন দুঃখজনক- মোমেন্টাম : এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটস মোমেন্টামের নেতৃবৃন্দ সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, লেবার পার্টির নির্বাহী কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত ইশতেহারকে পাশ কাটিয়ে লন্ডনের ১৬ এমপি কর্তৃক আরো একটি ইশতেহার প্রকাশ ও তাতে আমাদের বেথনাল গ্রীন ও বো’র লেবার দলীয় এমপি প্রার্থী রুশানারা আলীর সমর্থন দেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা সবকিছুর পরও রুশানারা আলীসহ লেবার পার্টির সকল প্রার্থীকে ৮ জুনের নির্বাচনে ভোট দেয়ার আহবান জানাই। এদিকে রুশানারা আলীসহ ১৬ এমপি কর্তৃক প্রকাশিত পৃথক নির্বাচনী ইশতেহারকে টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টি সমর্থন করে কি-না জানতে স্থানীয় লেবারের চেয়ার ক্রিস ওয়েভার্সের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাছাড়া লন্ডন লেবার পার্টির সাথে যোগাযোগ করেও তাঁদের কোনো মতামত পাওয়া যায়নি।