রক্তাক্ত মানচেস্টার, কাঁদছে বৃটেন : আত্মঘাতী বোমায় শিশুসহ নিহত ২২, আহত ৬৪
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০১৭
দেশ ডেস্ক: রক্তাক্ত মানচেস্টার। কাঁদছে বৃটেন। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ। সোমবারের রাতের আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে গোটা দেশ শোকে মুহ্যমান। আতংকে দেশবাসী- কখন কী ঘটে। ২০০৫ সালের ৭ জুলাইর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর এটিই সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ম্যানচেস্টার হামলার পর ইউকে’র নিরাপত্তা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে ৪ সহস্রাধিক সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সন্দেভাজন হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। তার নাম সালমান রামাদান আবেদী। তিনি লিবিয়ান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। বুধবার বিকেলে লিবিয়ার ট্রিপলী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার ভাই হাশিম আবেদী ও তার পিতা রামাদান আবেদীকেও। হামলার ঘটনায় ৮ই জুনের নির্বাচন স্থগিত করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। -খবর বিবিসি, ডেইলি মেইল, দ্য টেলিগ্রাফ ও আল জাজিরার।
মানচেষ্টার হামলা: ২২ মে সোমবার রাতে ম্যানচেস্টারের এরিনা কনসার্ট হলে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই শক্তিশালী বিস্ফোরণে শিশুসহ ২২ জন নিহত এবং ৬৪ জন আহত হন। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে হামলাকারী সালমান আবেদী নিহত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ব্রিটিশ পুলিশ এই হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে ম্যানচেস্টার নগরীর দক্ষিণাঞ্চল থেকে ২৩ বছর বয়সী এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। হামলার পরপরই ব্রিটেনের সব দল তাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করেছেন।
সোমবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ম্যানচেস্টার এরিনায় ২৩ বছর বয়সী মার্কিন গায়িকা আরিয়ানা গ্র্যান্ডে তার কনসার্ট শেষ করার পর যখন দর্শকেরা উঠে বের হতে শুরু করে, তখনই এই বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যদর্শীরা। কনসার্ট হলে প্রায় ২১ হাজার শ্রোতা-দর্শক ছিল- যাদের বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে দিগি¦দিক ছুটতে গিয়ে অনেকে নিখোঁজ হয়। তাদের ফিরে পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনেরা। এ সময় কনসার্ট হল ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মাঠের মধ্যেই আহত বহু লোককে চিকিৎসা দেয়া হয়। গুরুতর আহতদের স্থানীয় ছয়টি হাসপাতালে নেয়া হয় চিকিৎসার জন্য। হামলার পরপরই ম্যানচেস্টার এরিনার কাছেই অবস্থিত ভিক্টোরিয়া রেল স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ ওই এলাকা থেকে লোকজনকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এই হামলার প্রেক্ষাপটে সরকারের জরুরি কোবরা কমিটির সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন, ম্যানচেস্টারে হামলার ঘটনা কিভাবে ঘটল সেই বৃত্তান্ত জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের পাশে তার সরকার আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ম্যানচেস্টারের হামলা ভয়াবহ ঘটনা। তিনি বিস্ফোরণে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং যারা সেখানে জরুরি সহায়তা দিচ্ছেন তাদের প্রশংসা করেছেন। এই কনসার্টে তরুণ প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে ছিল। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেক বাবা-মা কনসার্টে আসেন। বড় ধরনের কনসার্ট ভেনু হিসেবে ইউরোপজুড়ে বেশ জনপ্রিয় এই ম্যানচেস্টার এরিনা।
দেশটির পরিবহন পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানান, অ্যারিয়ানা গ্র্যান্ডে তার কনসার্ট শেষ করে মঞ্চ ত্যাগ করার পরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। অ্যারিয়ানার মুখপাত্র জানিয়েছেন, অ্যারিয়ানা অত আছেন। পরে টুইটারে এই সন্ত্রাসী ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন অ্যারিয়ানা। বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত লোকজন ছুটোছুটি করতে থাকেন। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে পুরো হলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে অন্তত ৬০টি অ্যাম্বুলেন্স কাজ করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড এ ঘটনাকে ‘বর্বর হামলা’ বলে উল্লেখ করেছেন। ম্যানচেস্টার পুলিশের চিফ কনস্টেবল বলেছেন- আমরা ধারণা করছি, একজন হামলাকারীই এই হামলা চালিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন হামলাকারী’। হামলায় নিহত সবচেয়ে কম বয়সী মেয়েটির বয়স আট বছর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা : অকস্মাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের সাথে সাথে চার দিকে রক্তে সয়লাব হয়ে যায়। বিপ্তিভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় মানুষের নিথর দেহ। এখানে-ওখানে বিচ্ছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে পুরো কনসার্ট হলে। কোনো মানুষ মারা যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। তারপরই জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে মৃত্যুকে মেনে নিচ্ছেন। প্রত্যদর্শীরা এসব বর্ণনা দিয়েছেন। হামলার সময়ের বিবরণ দিয়ে টোরি নামে একজন বলেন, কনসার্টে তার সাথে তার ১২ বছরের বোনও ছিল। তিনি বলেন, আমরা এরিনা থেকে বেরিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। লোকজন সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে লাগল। আমি আমার বোনের মাথা শক্ত করে চেপে ধরলাম এবং মাথা নামিয়ে চেয়ারের নিচে ঢুকিয়ে দিলাম। কারণ দেখতে পেলাম শত শত মেয়ে দৌড়ে আসছে এবং যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। এরপর তিনি বাইরে স্বজনদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমি আমার ছেলে-বন্ধুকে ফোন করে বলি, কী ঘটতে যাচ্ছে জানি না এবং কী করব তাও বুঝতে পারছি না। সে তখন আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ার চেষ্টা করতে বলে। তিনি জানান, তখন চার দিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এবং পচা গ্যাসের গন্ধ নাকে আসছিল। এরপর যখন তারা বাইরে এলেন তখন অনেককে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তাদের মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা। আরেকজন প্রত্যদর্শী বলেন, বহু মানুষকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন এবং অনেককে দেখে মৃত বলে মনে হচ্ছিল। অ্যান্ডি হলি নামে এক প্রত্যদর্শী বলেন, তার স্ত্রী ও মেয়ে ওই কনসার্টে গিয়েছিল। তাদের আনতে গিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই শক্তিশালী বিস্ফোরণে তিনি বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়েন। পরে উঠে দেখতে পান, রক্তাক্ত লোকজন পড়ে আছেন। মানুষজনের মধ্যে স্ত্রী-কন্যাকে খুঁজতে থাকেন তিনি। তাদের না পেয়ে পুলিশের কাছে যান। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-কন্যাকে খুঁজে পান। তারা ভালো আছে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নর্থ ল্যাঙ্কাশায়ারের অ্যাবি মুলেন। তিনি বলেছেন, আমার কয়েক সেন্টিমিটার সামনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সাথে সাথে গুলির মতো মানুষের ত্বক, শরীরের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন অঙ্গ উড়ে এসে আমার চুলে, শরীরে, ব্যাগে আটকে গেছে। রক্তের বন্যা চার দিকে। দিশাহারা মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। এ দৃশ্য আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না। লিডসের গ্যারি ওয়াকারের তার দুই মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন কনসার্টে। তিনি বলেন, আমি মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য অপোক্ষায় ছিলাম। আমরা সেখানে কনসার্টের শেষ গানটি শুনলাম। দু’চারজন তখন কনসার্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিছু একটা ঝলসে ওঠার মতো মনে হলো। অমনি বিস্ফোরণ। চার দিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল। ভয়ে আমার পা কাঁপতে লাগল। এ সময় আমার স্ত্রী আমাকে শুয়ে পড়তে বললেন। আমি তাকে নিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লাম। আমার স্ত্রী পেটে আঘাত পেয়েছে। তার সম্ভবত একটি পা ভেঙে গেছে। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা থেকে প্রায় তিন মিটার দূরে ছিলাম আমি। বিস্মিত হচ্ছি যে, আমি বেঁচে গেছি। তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রী আহত হওয়ায় তাকে একটি টেবিলের ওপর শুইয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। মেয়ে আবিগেইল ওই অডিটরিয়ামে উপস্থিত ছিল বোন সোফিকে নিয়ে। আবিগেইল বলেছেন, আমার তখন আর কিছুই মনে হয়নি। শুধু মনে হয়েছে আমার বোন কোথায়, সে ঠিক আছে তো? তাকে কাছে পেয়েই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তখন সবাই দৌড়াচ্ছে। চিৎকার করছে। রক্তে সয়লাব মেঝে। ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। যে যেদিকে পারছে দৌড়াচ্ছে। সে এক অবর্ণনীয় দৃশ্য।
সর্বোচ্চ সতর্কতা, নামছে সেনাবাহিনী: যুক্তরাজ্যজুড়ে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। পরিস্থিতিকে বর্ণনা করতে ইংরেজিতে ‘ক্রিটিক্যাল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শিগগিরই যেকোন সময়ে আরো হামলার ঝুঁকি রয়েছে বলে সরকারের পক্ষে আশংকা করা হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। হামলা ও পরবর্তীতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার তার মন্ত্রী পরিষদকে নিয়ে বৈঠক করেন। তারপর তিনি বলেন, সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি মোতায়েন করা হবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের। আগামী দিনগুলোতে বড় কোন ইভেন্টে মোতায়েন করা হতে পারে সেনা সদস্যদের। বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এর আগে রিপোর্টে বলা হয়েছে মোতায়েন করা হবে ৫০০০ সেনা সদস্য। তবে এ সংখ্যা সঠিক নয়। এ সংখ্যা হবে কয়েক শত। বর্তমানে যুক্তরাজ্যজুড়ে যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে অতীতে মাত্র দু’বার এমনটি করা হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জয়েন্ট টেরোরিজম এনালাইসিস সেন্টার থেকে। এটি পুলিশ, সরকারির বিভিন্ন বিভাগ ও এজেন্সির বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ। এ গ্রুপটি এর আগে ২০০৬ সালে এমন সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। সেবার বিমান পরিবহনে তরল বোমা হামলার ষড়যন্ত্র নস্যাতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। ওদিকে ম্যানচেস্টার হামলার তদন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের এসিসট্যান্ড কমিশনার মার্ক রাউলি।
সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয়: হলিউড শিল্পীর কনসার্টে সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। হামলাকারীর নাম সালমান রামাদান আবেদি। লিবিয়ান অরিজিন। ১৯৯৪ সালের নিউইয়ারে ম্যানচেস্টারে সালমান রামাদান আবেদির জন্ম। প্রাইমারি স্কুল শেষ করে তিনি সলফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। তিনি ম্যান ইউনাইটেডের কট্টর সমর্থক এবং ভালো ফুটবলার ছিলেন। কর্নেল গাদ্দাফির শাসনামলে তার পরিবার দেশ ছেড়ে ইউকে আসেন। লন্ডনে কিছুদিন অবস্থানের পর ম্যানচেস্টারে বসবাস শুরু করেন তারা। আবেদির বাবা ডিউজবারি মসজিদে মোয়াজ্জিন ছিলেন। তারা বর্তমানে লিবিয়ায় ফিরে গেছেন। আবেদিরা এক বোন এবং দুই ভাই। আবেদি কিছুদিন আগে লিবিয়া থেকে ফিরেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। হোম সেক্রেটারি এম্বার রোড জানিয়েছেন, বিশেষ কিছু কারণে আবেদিকে পুলিশ বা ইউকের নিরাপত্তা বাহিনি জানত। সে কিছুদিন আগে সিরিয়া সফর করে এসেছে বলেও ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। ইউকের বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ম্যানচেস্টার পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এদিকে গত ২২ মে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হামলার পর মঙ্গলবার রাতে সাউথ ম্যানচেস্টার থেকে আরো ৩ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে হামলায় নিহতদের বিশ্বব্যাপি স্মরণ করা হচ্ছে। ফুল দিয়ে, নিরবতা পালনের মাধ্যমে এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ইউকের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারে বাতি কিছুক্ষনের নিভানো হয় জন্য। দুবাইয়ের সর্বোচ্চ ভবন পুরোটাই ঢেকে দেওয়া হয় ইংল্যান্ডের পতাকা দিয়ে। নিউইয়র্কে একই কায়দায় তাদের স্মরণ করা হয়। এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে ম্যানচেস্টারে সোমবার আত্মঘাতী হামলায় নিহতদের স্মরণ করা হয়।
বাকিংহ্যাম প্যালেসের সামনে ছুরিসহ গ্রেপ্তার ১: যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যেই লন্ডনে রানির বাসভবন ও দপ্তর বাকিংহ্যাম প্যালেসের সামনে ছুরি হাতে থাকা একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২৪ মে বুধবার একটি গাড়িতে করে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সেন্ট পল ক্যাথিড্রালে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে প্যালেসের সামনে একটি বিপণিবিতান থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, হ্যান্ডকাফ পরা মাটিতে বসা ওই ব্যক্তিকে ঘিরে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁদের কাছেই আরেক পুলিশ অফিসারের হাতে ধারালো কোনো অস্ত্র রয়েছে, যা সম্ভবত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লন্ডন মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ম্যানচেস্টারে হামলার পর সশস্ত্র সেনারা যখন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সামনে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে এই ঘটনা ঘটল। বুধবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে গ্রেপ্তারের ওই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। এর আগে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার নিয়োগের জন্য বাকিংহ্যাম প্যালেসে গার্ড বদলের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
ওলডহ্যামে মসজিদে অগ্নিসংযোগ: বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহত্তর ম্যানচেস্টারের ওলডহ্যামের জামিয়া কাসিমিয়া জাহিদিয়া ইসলামিক সেন্টারে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মসজিদের প্রধান ফটকের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। মঙ্গলবার রাত ২.৫৫ টায় ওলডহ্যামের এই হামলার ঘটনার রিপোর্ট হয়েছে বলে জানায় ম্যানচেস্টার পুলিশ। তবে অগ্নিসংযোগের এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিষয়টির তদন্ত চলছে। ম্যানচেস্টারের ভিক্টোরিয়া পার্ক মসজিদে, যেখানে কনসার্টের বিস্ফোরণে হতাহতদের জন্য প্রার্থনা করার লক্ষ্যে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের প্রত্যেকটি মসজিদের ইমামরা জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে ইমামরা ওলডহ্যামের মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেন তাঁরা। মসজিদের ইমাম, মোহাম্মদ সাদিক বলেন, একজন পথচারী আগুন দেখে ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেন। তিনি আরও বলেন, এটি একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি তিন বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে আছি। এমন বিষয়ের সাথে মসজিদের কাউকে কখনো সংযুক্ত হতে দেখিনি। তারা কেন মসজিদকে টার্গেট করলো? সে সময়ে কেউই মসজিদের ভিতরে ছিলেন না বলে ইমাম মোহাম্মদ সাদিক জানান। স্টেনস্টেড এয়ারপোর্টে ১জন আটক ইংল্যান্ডের এসেক্সের স্টেনস্টেড এয়ারপোর্ট থেকে একজনকে আটক করেছে কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে আটককৃত ব্যক্তি সিরিয়া যাওয়ার প্লান করেছিল। ৩৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গত ১২ মে মঙ্গলবার তার্কি যাওয়ার পথে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে আটক ব্যক্তি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পরিকল্পনা করছিল। তবে সোমবার রাতে ম্যানচেস্টারের সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। আটককৃত ব্যক্তির দু’টি আবাসিক এলাকায় তাল্লাশী চালিয়েছে পুলিশ। ব্রিটেনে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুলিশী কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।