সুযোগ দিন, পাশে থাকবো —সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমাল মাসরুর
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০১৭
‘জেরেমি করবিনের পলিসিই আমার নির্বাচনী পলিসি’
দেশ রিপোর্ট: ৮ই জুনের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আর বাকি আছে মাত্র ৫দিন। আর তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। বিশেষকরে পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীন ও বো আসনের প্রার্থীরা নির্ঘুম ক্যাম্পেইনে ব্যস্ত। এই আসনে লেবার, কনজার্ভেটিভ, লিবারেল ডেমোক্রেট, গ্রীন পার্টিসহ অন্যান্য দল থেকে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও শুরু থেকেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন লেবার দলীয় প্রার্থী রুশানারা আলী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আজমাল মাসরুর। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে গত দুই সপ্তাহের প্রচারণায় আজমাল মাসরুর অনেকটা এগিয়ে গেছেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। লেবার দলীয় প্রার্থী রুশানারা আলীর মোকাবেলায় আজমাল মাসরুরের বিজয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভোটাররা।
লেবার প্রার্থী রুশানারা আলী যেহেতু গত সাত বছর এমপি ছিলেন তাই নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁকে ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হচ্ছে। জনবিচ্ছিন্নতা বা নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে না থাকার বিষয়টি শুরু থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে।
কিন্তু এদিক থেকে আজমাল মাসরুর বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। যেহেতু তিনি আগে এমপি ছিলেন না, তাই তাঁকে ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। যেদিকেই ক্যাম্পেইনে যাচ্ছেন সাড়া পাচ্ছেন। তাঁর সুন্দর কথাবার্তা মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
আজমাল মাসরুর গত ২৯ মে সোমবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের নিউ রোডস্থ একটি কমিউনিটি হলে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এতে তিনি ৮ই জুনের নির্বাচনে তাঁকে নির্বাচিত করার আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, তিনি যেহেতু স্বতন্ত্র প্রার্থী তাই নির্বাচিত হলে দলীয় কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। নির্বাচিত হলেন এলাকার মানুষকে অগ্রাধিকার দেবেন। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধায় পাশে থাকবেন। তিনি বলেন, তিনি লেবার পার্টির একজন সক্রিয়া কর্মী ছিলেন। তরুণ বয়সে বার্কিং এণ্ড ডেগেনহ্যান লেবারের সেক্রেটারি ছিলেন , কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ারের ইরাক নীতির বিরোধীতা করে দল থেকে বেরিয়ে আসেন। তাই তাঁর রাজনীতি হচ্ছে লেবার পার্টির পলিসি নিয়ে। তাঁর নির্বাচনী পলিসি লেবার লীডার জেরেমি করবিনের পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ। তাই নির্বাচিত হলে জেরেমি করবিনের পলিসি অনুযায়ীই কাজ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৯ মে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণার পর পরই আমি আমার স্বতন্ত্র প্রার্থীতা ঘোষণা করি। প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র হলেও কমিউনিটির বিভিন্নস্তরের মানুষ আমার পেছনে রয়েছেন। আমাকে বিজয়ী করতে দিন-রাত তাঁরা ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে। তাঁরা বেথনাল গ্রীন ও বো’তে একটা পরিবর্তন দেখতে চান। আর জনগণ মনে করেন আমার মাধ্যমেই এই পরিবর্তন সম্ভব। নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে আমি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি এবং প্রচণ্ড আশাবাদী, ৮ই জুনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এই এলাকার মানুষের আশা আকাাখার প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, আমি নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে যে এলাকায় যাচ্ছি, মানুষ সাবেক এমপি রুশানারা আলীকে সুখে-দুঃখে তাঁদের কাছে না পাওয়ার বেদনার কথা তুলে ধরছেন। বলছেন, আমরা এমন একজন এমপি চাই, যিনি যেকোনো সুবিধা-অসুবিধায় আমাদের পাশে থাকবেন। পার্লামেন্টে আমাদের এলাকার দাবী-দাওয়া আদায়ে বলিষ্ট ভুমিকা রাখবেন। আমি তাঁদেরকে কথা দিয়েছি-এমপি নির্বাচিত হলে, আমার মূল কাজ হবে জনগণের পাশে থাকা। গত ৭ বছর এলাকার মানুষ তাদের এমপির সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নির্বাচিত হলে সেই বঞ্চনা ঘুচাতে আমি আমার সর্বশক্তি নিয়োগ করবো।
সংবাদ সম্মলনে আজমাল মাসরুর বলেন, এই আসনের সাবেক এমপি রুশানারা আলীর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ও অনুশোচনার অভিযোগ মোটেই অহেতুক নয়। আপনারা একটু খোঁজ নিলেই রুশানারা আলীর বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগের প্রমাণ পাবেন। রাইটটুদেম নামক একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়েবসাইট অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, জনগণের এসব অভিযোগ শতভাগ সত্য। উক্ত ওয়েবসাইটে প্রদত্ত্ব তথ্য অনুযায়ী, রুশানারা আলী ২০১৫-১৬ সালে তাঁর এলাকার ৭৩ শতাংশ লোকের কোনো ইনকোয়ারির (অনুসন্ধান) জবাব দেননি। অর্থাৎ বেথনাল গ্রীন ও বো এলাকার ৭৩ শতাংশ মানুষ তাঁর সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়েছেন। জনগণের ইনকোয়ারির জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে সারাদেশের এমপিদের মধ্যে তাঁর অবস্থান অনেক নিচে।
অথচ তিনি ২০১৫/১৬ সালে গোটা বৃটেনের লেবারদলীয় এমপিদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করেছেন। তাঁর অফিসের স্টাফের বেতন ১৫৬ হাজার ৭৪৩ পাউন্ড।
আসলে জনবিচ্ছিন্নতার মুল কারণ হচ্ছে, তিনি নিজ দলের লীডার জেরিমি করবিনের বিরোধীতায় এত বেশি সময় নষ্ট করছেন যে, এরপর আর নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই আসন্ন নির্বাচনে নিজের মূল্যবান ভোট প্রয়োগের আগে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। রুশানারা আলীকে আবার নির্বাচিত করবেন নাকি পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমাকে বেছে নেবেন।
আজমাল মাসরুর বেথনাল গ্রীন ও বো এলাকাবাসীর প্রতি আমার আকুল আবেদন রেখে বলেন, যারা সমাজবাদী লেবার নেতা জেরিমি করবিনকে সমর্থন করেন তাঁরা আমাকে ভোট দিন। কারণ আমি সারাজীবন সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করে আসছি ।একটা কথা নিশ্চিত করে বলতে চাই, এমপি নির্বাচিত হলে আমার অগ্রাধিকার হবে জনগনের সুবিধা-অসুবিধায় কাছে থাকা, তাদের যেকোনো সমস্যায় পাশে থাকা। আমি আগেই বলেছি, জনগণের সকল কেসওয়ার্ক যাতে যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা হয় এ লক্ষ্যে প্রতি মাসে চারটি সার্জারি পরিচালনা করবো। সার্জারী স্টাফগণ যাতে প্রতিটি কেসওয়ার্ক পূূখানুপুুখভাবে পর্যালোচনা করে সে ব্যাপারে আমার বিশেষ নজরদারি থাকবে। সাবেক এমপি রুশানারা আলী মাসে দুইটি সার্জারী করতেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, তারা সার্জারিতে গিয়ে রুশানারা আলীর সাক্ষাৎ পাননা। তাঁদেরকে রুশানারা আলীর স্টাফের সাথে কথা বলে ফিরে আসতে হয়।
তিনি বলেন, আমি যখনই নির্বাচনী এলাকার কোথাও ক্যাম্পেইনে যাচ্ছি, সাধারণ মানুষ অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা অপরাধের কথা বলছেন। মানুষ এক ধরনের ভীতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে সিংহভাগ ইয়ূথ সার্ভিস বন্ধ করে দিয়ে তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। লেবার পার্টির এমপি হওয়ায় এসব ব্যাপারে রুশানারা আলী সম্পুর্ণ নীরব ভুমিকা পালন করছেন। তাঁর এই নীরবতা প্রমাণ করে তিনি কনজার্ভেটিভের ফান্ডিং কাট পলিসিকেই লালন করছেন।
আজমাল মাসরুর বলেন, এমপি নির্বাচিত হলে তরুণ সম্প্রদায়, ভলান্টিয়ার সেক্টর, পুলিশ, কাউন্সিল এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করবো। তাঁদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নাইফ ক্রাইমের কারণ নির্ণয় ও প্রতিরোধের উপায় খুঁজে বের করবো। সংবাদ সম্মেলনের আগে আজমাল মাসরুর-এর নির্বাচনী ক্যাম্পেইন এজেন্ট রেজাউল হক-এর উপস্থাপনায় এক কমিউনিটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কমিউনিটি নেতা হাসনাত এম হোসাইন এমবিই, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, টাওয়ার হ্যামলেটস পিপলস অ্যালায়েন্স এর সভানেত্রী কাউন্সিলার রাবিনা খান, কাউন্সিলার আবুল আসাদ, সেন্ট পিটার্স বেঙ্গলী এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আতিক মিয়া, স্কুল শিক্ষক আফজাল হোসেইন সিদ্দিক, বুধবারী বাজার ইউনিয়ন ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট মোঃ শামসুল হক, মাওলানা রফিক আহমদ, যুবনেতা আখলাকুর রহমান, শামসুল তালুকদার, কমিউনিটি নেত্রী মুনিরা রহমান, মিসবাহ খান ও আলী মুসা।
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা যথাসময়ে উপযুক্ত প্রার্থী পেয়েছি। আজমাল মাসরুর পার্লামেন্টে কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করার সবধরনের যোগ্যতা রাখেন। তিনি কমিউনিটির ইস্যুগুলোকে অন্তর থেকে অনুভব করেন। ইস্যুকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করে না, যা অনেক রাজনীতিকই করে থাকেন। তাঁরা বলেন, সাবেক এমপি রুশানারা আলীর গত সাত বছরের জনবিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়ে আজমাল মাসরুরই হবেন সবচেয়ে জনঘনিষ্ট এমপি। উল্লেখ্য, আজমাল মাসরুরের সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য সম্পর্কে এমপি প্রার্থী রুশানারা আলীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।