জঙ্গিবাদ উসকে দেয়ার অভিযোগে ৬ দেশের সম্পর্ক ছিন্ন : কাতারের পরিণতি কী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০১৭
দেশ ডেস্ক : ইরাক, মিশর ও সিরিয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার এবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগুচ্ছে। ৬টি প্রতিবেশী দেশ কাতারের সাথে শুধু সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়ে থেমে থাকেনি, বরং একটি দেশ তার নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, কেউ কাতারের প্রতি সহানুভূতি দেখালে কমপক্ষে ১৫ বছরের জেলদণ্ড দেয়া হবে। তাই এই টানাপোড়েনে পড়ে কাতারের পরিণতি কী হবে- তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আরব বিশ্বের মানুষ। আর যেহেতু বাংলাদেশের একটি বিশাল শ্রমজীবী গোষ্ঠি কর্মসূত্রে কাতারে বসবাস করেন, তাই ৬ দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি প্রবাসী বাঙালিদের উপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা সেই বিষয়টি মুখ্য আলোচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান সূত্রে জানা যায়, গালফ সহযোগিতা সংঘের (জিসিসি) সদস্য রাষ্ট্র কাতার। জিসিসির সদস্যভূক্ত চারটি দেশ বাহরাইন, সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত রয়েছে সম্পর্ক ছিন্নকারীদের দলে। সম্পর্ক ছিন্ন করা অপর দুই আরব দেশ হলো- ইয়েমেন ও লিবিয়া।
খবরে বলা হয়, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি ও জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় দেশগুলো। প্রথমে বাহরাইন এবং পরে সৌদি আরব এ ঘোষণা দেয়। পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, ইয়েমেন ও লিবিয়া একই পথ অনুসরণ করে। সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া দেশগুলোর মূল অভিযোগ, সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদাকে মদদ দিচ্ছে কাতার। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ছয় দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণাকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘ভিত্তিহীন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া’ সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছে কাতার। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কাতারের সঙ্গে ভূমি, সমুদ্রসীমা ও আকাশসীমার সব যোগাযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। বাহরাইনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাতারের সমুদ্র ও আকাশসীমার সব যোগাযোগ বন্ধ। একই সঙ্গে বাহরাইনে বসবাসরত কাতারের নাগরিকদের ১৪ দিনের মধ্যে দেশটি ছাড়তে বলা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত কাতারের কূটনীতিকদের দেশ ত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছে। মিসর জানায়, সব বন্দরে কাতারের যানবাহন ও আকাশযান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত এলেও একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিল না বিষয়টি। বেশ কয়েক বছর ধরেই কাতারকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
সম্প্রতি কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সৌদি আরবের সমালোচনা করে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহ আগে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা নিষিদ্ধ করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর আগে ২০১৪ সালে আরব দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে কাতারের হস্তক্ষেপের কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সরকার কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। সহানুভূতি দেখালে ১৫ বছরের জেল: জনসাধারণকে কাতারের প্রতি সহানুভূতি দেখানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে আরব আমিরাত। শুধু তাই নয় আমিরাতের কোনো নাগরিক কাতারের প্রতি সহানুভূতি দেখালে তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ এবং আল আরাবিয়ার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ৭ জুন বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আরব আমিরাতের অ্যাটর্নি জেনারেল হামাদ সাইফ আল শামসি জানিয়েছেন, কাতারের প্রতি সমবেদনা বা সহানুভূতি প্রকাশ করলে সাইবারক্রাইমের আওতায় বিচার করা হবে। যে বা যারা কাতারের প্রতি সমবেদনা জানাবে বা যারা আরব আমিরাতের অবস্থান নিয়ে অভিযোগ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শুধু সামাজিক মাধ্যমেই নয় যে কোনো লিখিত, মৌখিক বা যে কোনোভাবেই যদি কাতারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে সরকার। ফেডারেল পাবলিক প্রসিকিউসন এক ঘোষণায় জানিয়েছে, যারাই আরব আমিরাতের স্বার্থের জন্য হুমকি হবে তাদের তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা দিতে হবে।