সিইসি’র সাথে বৈঠককালে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ : ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন দেখতে চায়না যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০১৭
ঢাকা থেকে বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের এখনও বাকি আছে প্রায় দেড় বছর। কিন্তু এরই মধ্যে সবদলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাস্ট্রদূতগণ তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্বের প্রভাবশালী দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করে দুই দেশের অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। দুই রাষ্ট্রদূতই পরিস্কারভাবেই বলেছেন, তাঁরা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কিংবা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন দেখতে চান না। রাষ্ট্রদূতদ্বয় তাঁদের পৃথক পৃথক বৈঠকে সবদলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের জোর তাগিদ দেন।
গত ৩১ মে বুধবার সিইসি’র সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সাক্ষাতের পর ৬ জুন মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করলেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক। সাক্ষাতকালে অ্যালিসন ব্লেক বলেন, তারা বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। অবশ্য ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, কমিশনও লেভেল প্লেয়িং ফিলড তৈরির মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক ও দেশি-বিদেশি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চায়। যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তাদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা হয়। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান অ্যাড্রিন জোন্স, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজাজুর রহমান ও ইউকে এইড এর প্রতিনিধি আইসলিন বেকার। সাক্ষাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে অ্যালিসন ব্লেক সাংবাদিকদের বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। এখানে আমরা কারো পক্ষ হয়ে আসিনি। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্য এসেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিতকরণ এবং এ লক্ষ্যে যারা কাজ করছেন তাদের পক্ষে সমর্থন জানানোর জন্য আমরা এসেছি। কমিশনের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
সাক্ষাতের বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, এটা সিইসির সঙ্গে তার প্রথম ও সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ। আলোচনায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আমাদের পুরনো কিছু নির্বাচনের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ না থাকার বিষয়টি তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া দু’একটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহিংসতার কথা তারা জানিয়েছেন। জবাবে সিইসি তাদের বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেবল দেশে নয়, সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এ সময় হাইকমিশনার বলেছেন, এভাবে অন্যসব নির্বাচন করতে পারলে ইসির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যুক্তরাজ্যের দূত নির্বাচনের বড় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সিইসি প্রত্যাশা করেছেন জুলাই থেকে তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবেন। এতে করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দূরত্ব করে আসবে, ইসির প্রতি তাদের আস্থা বাড়বে। আশা করি সকল দল নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে গত ৩১ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট সিইসির সাথে সাক্ষাতকালে বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সব দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। মার্শা বার্নিকাটসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিইসির সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা দীর্ঘ ওই সাক্ষাৎ পর্বে নির্বাচন কমিশনের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। এক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন যেন ‘প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকবে’ প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্ধৃতি স্মরণ করে দিতে চাই।’ এদিকে আগামী ১১জুন ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ২০ জুন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে।