লন্ডনে ইসলামোফোবিক অপরাধ বেড়েছে ৫ গুণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৭
লন্ডন, ১৬ জুন : লন্ডনে বরো মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামবিরোধী ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে ৫গুণ। মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যে বলা হয়েছে এ কথা। বলা হয়েছে, লন্ডন ব্রিজ ও বরো মার্কেটে সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামবিরোধী ঘৃণা থেকে এসব অপরাধ ঘটছে। এ বছর গড়ে প্রতিদিন বর্ণবাদী অপরাধ যে পরিমাণে ঘটতো ৬ই জুনের ওই হামলার পর তা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ। এ বছর গড়ে প্রতিদিন এমন অপরাধ ঘটেছে ৩৮টি। কিন্তু মঙ্গলবার বর্ণবাদী এমন অপরাধের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪টি। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হচ্ছে, এসব হামলার জন্য শুধুই ইসলামপন্থিদের দায়ী করা হচ্ছে। এ বছর তাই ইসলামবিরোধী ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মঙ্গলবার এমন ২০টি অপরাধের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে পুলিশ। অথচ এ বছর প্রতিদিন এমন অপরাধের গড় ছিল ৩.৫। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা হয়। ২০১৩ সালের মে মাসে দক্ষিণ লন্ডনে হত্যা করা হয় বৃটিশ সেনা সদস্য ফুসিলিয়ের লি রিগবিকে। এসব ঘটনার পরও ইসলামোফোবিক বা ইসলাম ভীতি বা ইসলাম বিরোধিতায় ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে এবার কিছুদিনের মধ্যে ম্যানচেস্টারে ও লন্ডনে পর পর কয়েকটি হামলার পর এ অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব হামলার পর সেখানে বসবাসরত মুসলিমরা নিন্দা জানিয়েছেন। ইমামরা হামলাকারীদের লাশের জানাজা পড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের লাশ দাফন করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। মুসলিমরা হতাহত ব্যক্তিদের ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, তারা সন্ত্রাসের পক্ষে নন। তারা চান শান্তি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের ওপর ধর্মীয় ও বর্ণবাদী অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের প্রকাশ করা ডাটা তারই প্রমাণ দেয়। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান অবশ্য এমন ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের বিষয়ে পুলিশে রিপোর্ট করতে জনগণকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতা দেখানো হবে। তিনি বলেছেন, লন্ডনে আমরা বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করলেও আমাদেরকে থাকতে হবে ঐক্যবদ্ধ। এটাই লন্ডনের জন্য বড় বিষয়। এই ভয়াবহ হামলার পর এই ধারায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। সাদিক খান আরো বলেন, সব লন্ডনিকে আমি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই। বিশ্বের কাছে আপনারা এমন একটি সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিন যে, আমাদের শহর এমন নৃশংস হামলায় বিভক্ত হয় না। সন্ত্রাসের কারণে লন্ডন কখনো ভীত নয়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, গত ২২শে মে ম্যানচেস্টারে অ্যারিনা কনসার্ট হলে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এরপর মুসলিম নেতারা সেখানে ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। মার্চে হামলা হয় ওয়েস্টমিনস্টারে। এরপরেই একই ঘটনা ঘটে। মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ক্রেইগ ম্যাকি বলেছেন, সন্ত্রাসী খালিদ মাসুদের চালানো হত্যাযজ্ঞের পর মুসলিমবিরোধী অপরাধের সামান্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন তিনি। তবে ইসলামোফোবিক বিষয়ক হেল্পলাইন ‘টেল মামা’র প্রতিষ্ঠাতা ফায়াজ মুঘল ইসলামবিরোধী অপরাধের উত্থানের বিষয়ে বলেছেন, সর্বশেষ লন্ডন হামলার পর এমন অপরাধ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০১১ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে বৃটেনে মুসলিমবিরোধী অপরাধ বেড়েছে অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ওয়েস্টমিনস্টারে সন্ত্রাসী হামলা ব্যতিক্রম। এ হামলার পর মুসলিমবিরোধী ঘৃণা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় নি। ম্যানচেস্টার হামলার পর তা বৃদ্ধি পায়। তারপর আস্তে আস্তে সেটা যখন কমে আসতে থাকে তখনই আবার লন্ডন ব্রিজে হামলা হয়। এর ফলে অনেক বেশি বেড়েছে এমন অপরাধ। তার ভাষায়, সন্ত্রাসীরা আমাদের সমাজ ও মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যেসব মুসলিম নিরপরাধ, যাদের সন্ত্রাস বা উগ্রবাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই তাদেরকে নিয়ে খেলছে এসব ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীরা।