যশোরের নোয়াপাড়া থেকে উদ্ধার ফরহাদ মজহার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুলাই ২০১৭
দেশ ডেস্ক: কবি, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট ফরহাদ মজহারকে যশোরের নোয়াপাড়া থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গত রাত সাড়ে ১১টায় র্যাব-৬ এর মেজর রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে উদ্ধার করে। র্যাব হেডকোয়ার্টারের সিনিয়র এএসপি (মিডিয়া) মিজানুর রহমান জানান, হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তিনি খুলনা থেকে বাসার উদ্দেশে ফিরছিলেন। এর আগে গতকাল ভোরে আদাবরের নিজ বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন তিনি। এরপর পরিবারের স্বজনদের নিজের ফোন থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান। এমনকি তাকে মেরে ফেলা হবে এমন শঙ্কার কথাও বলেন স্ত্রী ফরিদা আখতারকে। পরবর্তীতে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের কথা বলা হয়। এরপর থেকে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। থানায় পরিবারের অভিযোগের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করে। দুপুরের পর পুলিশ জানায় মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে তার অবস্থান মানিকগঞ্জের পর খুলনা অঞ্চলে পাওয়া যায়। ফোন ট্র্যাকিং এর তথ্য নিয়ে সন্ধ্যায় খুলনায় অভিযান চালায় র্যাব ও পুলিশ। খুলনা পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ৮টায় খুলনা নিউমার্কেট এলাকার গ্রীল হাউজ রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করেন। রেস্টুরেন্টের মালিক আবদুল মান্নান এ তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ ওই রেস্টুরেন্টের সিসি ক্যামেরা জব্দ করে। পরে ফরহাদ মজহারের ফোন ট্র্যাকিং করে দেখা যায় তিনি যশোরের পথে রয়েছেন। যশোর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস নোয়াপাড়া বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলের সামনে পৌছালে র্যাব গাড়িটিকে থামার সঙ্কেত দেয়। ওই বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা হয়। তিনি গাড়ির মাঝখানের একটি সিটে বসা ছিলেন। এ সময় তার পরনে সাদা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি ছিল। তার পকেটে হানিফ পরিবহনের টিকিট পাওয়া গেছে। টিকিটটি ছিল খুলনা থেকে ঢাকার। র্যাবের মেজর রফিকুল ইসলাম ফরহাদ মজহারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনেন। এ সময় অভয়নগর থানার ওসিসহ পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে অভয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ওদিকে সকালে পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ফরহাদ মজহারের আদাবরের বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। তবে তার ফোন ট্র্যাকিং করে অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। ফরহাদ মজহার আদাবরের হক গার্ডেনের ৪ তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সিসি টিভি’র ফুটেজ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফরহাদ মজহার গতকাল ভোর ৫টা ৫ মিনিটের দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তবে বাড়ির দারোয়ান ছাড়া তার বাইরে বের হওয়ার কথা ওই সময় কেউ জানতেন না। ফরহাদ মজহার দুইটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এরমধ্যে একটি মোবাইল অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার করেন। ৫টা ২৯ মিনিটে ফরহাদ মজহার নিজেই ওই মোবাইল ফোনটি থেকে তার স্ত্রী ফরিদা আখতারকে ফোন করেন। এ সময় তিনি বলেন, তাকে কে বা কারা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ফোনে বাঁচানোর আকুতি জানান। অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলবে বলেও তিনি জানান। এর কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন করেন। তিনি মুক্তিপণের কথা জানান। বলেন, তারা ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেছে মুক্তিপণ হিসেবে। এরপর সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে পরিবারের লোকজন আদারব থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে ফরহাদ মজহারের অপহরণের ব্যাপারে অভিযোগ করেন। এর পরপরই পুলিশ তেজগাঁও থানার ডিসি বিপ্লব কুমারসহ আদাবর থানার পুলিশ কর্মকর্তারা তার বাড়িতে যান। তারা পরিবারের লোকজন, বাসার দারোয়ান ও আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। ওই বাসার সিসিটিভি’র ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ সময় পুলিশের সামনেই আবারো ফোন করে মুক্তিপণের টাকার কথা জানান ফরহাদ মজহার। স্ত্রী ফরিদার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ফরহাদ মজহার সাধারণত: রাত ৩-৪টার দিকে ঘুম থেকে ওঠেন। এরপর লেখালেখি করেন। রোববারও ওই সময় তাকে লেখালেখি করতে দেখা যায়। সোমবার ভোরের দিকে স্ত্রী ওঠে দেখেন তিনি নেই। এরপর তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। এদিকে সিসিটিভি’র ফুটেজে দেখা যায়, ভোর ৫টা ৫মিনিটে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় একজন দারোয়ান গেট খুলে দেন। ফরহাদ মজহারের অপহরণের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যম কর্মীরা তার বাসায় ভিড় জমায়। এছাড়া ঘটনার পর থেকে তার বাসায় পুলিশের একটি দল অবস্থান করছে।