গ্রেনফিল টাওয়ার ট্রাজেডির পর ঘটছে একের পর এক অগ্নিদূর্ঘটনা : আগুন আতঙ্ক পিছু ছাড়ছেনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৭
দেশ রিপোর্ট: আগুন আতঙ্ক পিছু ছাড়ছেনা লন্ডনবাসীর। একের পর এক ঘটে যাচ্ছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। নর্থ লন্ডনের গ্রেনফিল টাওয়ার ট্রাজেডির মধ্য দিয়েই সূত্রপাত ঘটে অগ্নিদূর্ঘটনার। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহেই কোথাও না কোথাও ঘটছে অগ্নিদূর্ঘটনা। আশ্চর্য হলেও সত্য, এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়। পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস যেনো অগ্নিকাণ্ডের অকুস্থলে পরিণত হয়েছে। তবে গত সপ্তাহের শেষদিকে সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে আরো এক বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ক্যামডেনে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সেখানকার লক মার্কেটের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে গেছে। আগুন আতঙ্ক পুর্ব লন্ডনবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছে।
১৪ জুন বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গ্রেনফিল টাওয়ারে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। পাঁচ সদস্যের বাঙালি পরিবার আগুনে পুড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় যখন লন্ডনজুড়ে শোকের ছায়া পরদিনই বাঙালি অধ্যুষিত ওয়েটনি মার্কেটে ঘটে আরো একটি অগ্নিকাণ্ড। রামাদ্বান মাসে গভীর রাতে মার্কেটের উপরতলার একটি ফ্লাটে আগুন ধরলে ফায়ার ব্রিগেড ওই পরিবারকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনার দুই চারদিন পরই অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীনের টুরিন স্ট্রিটে। অগ্নিকাণ্ডে একটি চারতলা ভবনের উপরতলার ২টি ফ্লাট পুড়ে যায়। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে পূর্ব লন্ডনের রিজেন্ট লেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটে আরো একটি নির্মিয়মান ভবনে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় ওই ভবনের।
এখানেই থেমে নেই অগ্নিদূর্ঘটনা। কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ব লন্ডনের সেন্ট পলসওয়ে রোডে চারতলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবনের উপরতলার ফ্লাটে ঘটে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী এক তরুণী আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে চতুর্থতলা থেকে ঝাপ দিয়ে নিচে পড়ে মর্মান্তিভাবে মৃত্যুবরণ করেন। দমকলবাহিনী দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
এরই মধ্যে হ্যাকনী এলাকায়ও ঘটে আরো একটি অগ্নিকান্ড। আর সর্বশেষ ৯ জুলাই রোববার ঘটলো আরো এক বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা ক্যামডেনের লক মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড।
আগুনে পুড়ে যায় ওই মার্কেটের বেশির ভাগ অংশ। কয়েক মাইল দূর থেকেও আকাশে দেখা যাচ্ছিল আগুনের লেলিহান শিখা। এ সময় চারপাশের এলাকা অন্ধকার ধোয়ায় ছেঁয়ে যায়। ৭০ জনেরও বেশি অগ্নিনির্বাপণকারী দীর্ঘ চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তারা কয়েক মাইল দূর থেকে আগুন ও ধোঁয়া দেখতে পেয়েছেন। ওই মার্কেটের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন জ্বলছে মার্কেটের ছাদেও। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের সাথে রয়েছে এসিড আতঙ্ক। আছে রাস্তাঘাটে হাঁটাচলার সময় গাড়ি উপরে তুলে দেওয়ার ভয়। সবকিছু মিলিয়ে চরম আতঙ্কে কাটছে লন্ডনের ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির দৈনন্দিন জীবন।
তবে কেন এসব অগ্নিকাণ্ড ঘটছে তার যথাযথ কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ ঘৃণা বা শক্রুতা করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে- এমন কোনো প্রমাণও নেই।
আগ্নিকান্ডের কারণ জানতে চাইলে পুলিশের টাওয়ার হ্যামলেটস বারা কামান্ডার স্যু উইলিয়াম সাপ্তাহিক দেশকে বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণেও অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে। তবে ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ড সবসময়ই কিছু না কিছু ঘটে থাকে। ঘটনাগুলো আগে আমাদের গোচরিভুত কম হতো। এখন বেশি গোচরিভুত হচ্ছে কারণ গ্রেনফিল টাওয়ার দূর্ঘটনার পর আমরা অধিক সতর্ক। একটি ছোট অগ্নিকান্ড সংঘটিত হলেও সেটা তৎক্ষনাত মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে। তাই চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে টাওয়ার হ্যামলেটসের একজন বয়োবৃদ্ধ বাঙালি বাসিন্দা সাপ্তাহিক দেশকে বলেন, তিনি তার দীর্ঘজীবনে এমন উপর্যুপরি অগ্নিকাণ্ড দেখেননি। এখন কেন এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। তবে তিনি মনে করেন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এ এক বিশেষ সতর্কবার্তা।