বিশিষ্টজনের সম্মানে কাউন্সিল অব মস্কের ঈদ ডিনার : ‘ওয়ান টাওয়ার হ্যামলেটস’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৭
দেশ রিপোর্ট: প্রতিবারের মতো এবারও টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র, পুলিশ কমান্ডার, কাউন্সিলার ও মুসলিম-ননমুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো কাউন্সিল অব মস্কের বার্ষিক ঈদ ডিনার। ৫ জুলাই বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রথম তলায় প্রায় ৩শ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই ঈদ ডিনার অনুষ্ঠানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ‘ওয়ান টাওয়ার টাওয়ার হ্যামলেটস’ গড়তে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।
কাউন্সিল অব মস্কের চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামসুল হক-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল হীরা ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, টাওয়ার হ্যামলেটস বারা পুলিশ কমাণ্ডার স্যু উইলিয়াম, সিটিজেন্স ইউকের নির্বাহী পরিচালক নেইল জেমসন সিবিই, টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান এলান গ্রীন, ইস্ট লন্ডন মস্ক এণ্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, জর্জ গ্রীন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জিল বাকার, মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ড. ওমর আল হামদুন, ট্রাডিশনাল হালাল ফুড অথোরিটির চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন খান, অপারেশন ম্যানেজার তানভির পার্কার ও ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তা জাকির খান।
মেয়র জন বিগস বলেন, আমি এমন একটি বারার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি যেখানে ৫০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে। যে মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষকে বহুমুখী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে একীভূত একটি বারা। আমাদের মধ্যে কেউ যাতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
বারা পুলিশ কমাণ্ডার স্যু উইলিয়াম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দূর্ঘটনা কমিউনিটিতে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুলিশ কমাণ্ডার হিসেবে আমার দায়িত্ব বারার সর্বস্তরের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, হেইট ক্রাইম হোক আর এসিড অ্যাটাক হোক- কোনো ধরনের অপরাধ সহ্য করা হবে না।
নেইল জেমসন সিবিই কনজার্ভেটিভ সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের সমালোচনা করে বলেন, এটি একটি অকেজো আইন। এটি কারো জন্য কোনো উপকারে আসছে না। শিক্ষক, সোশ্যাল ওয়ার্কার সকলেই এই প্রোগ্রামের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুসলিম সংগঠনগুলোর সাথে সরকার সুসম্পর্ক রাখছে না। তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না।
প্রসঙ্গত: তিনি এমসিবি’র কাজে সরকারী সহযোগিতা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী সবচেয়ে বড় সংগঠন। অথচ সংগঠনটি সরকারের সাথে বসার ও কথা বলার সুযোগ পায় না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সময় থেকে নিয়ে ডেভিড ক্যামেরনের দুই মেয়াদ এবং থেরেসা মের সরকারের সময়ও একটি সাক্ষাতের সুযোগ পায়নি। টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান এলান গ্রীন ফিন্সবারী পার্কে সন্ত্রাসীর গাড়িচাপায় নিহত বাঙালি মুসলিম হিরন মিয়ার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। শান্তির পক্ষে দাঁড়ানোর অর্থ হলো অশান্তির প্রতিবাদ করা। প্রধান শিক্ষিকা জিল বাকার বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকগণও কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যুতে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে ছেলেমেয়েরা ভালো ফলাফল করছে। আমাদের কমিউনিটির ভবিষ্যত ভালো।
ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান কাউন্সিল অব মস্কের বিভিন্ন কার্যক্রমের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস প্রদান করছে। মানুষ শুধু উপাসনার জন্যই মসজিদে যায় না, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেরও উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে মসজিদ। তিনি হেইট ক্রাইমকে হেইট ক্রাইম হিসেবে বিবেচনা নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান। তিনি সরকারের প্রিভেন্ট প্রোগ্রামের সমালোচনা করে বলেন, এই বিশেষ প্রোগ্রাম মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে বিভক্ত করছে। কাউন্সিল অব মস্কের চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামসুল হক বলেন, বৃটেনের মুসলমানেরা বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। আমাদেরকে ধর্য্য, সম্প্রীতি ও সাহসিকতার মধ্যদিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। টাওয়ার হ্যামলেটসের মসজিদগুলো এ ক্ষেত্রে বিরাট ভুমিকা রাখছে। তিনি বলেন, কোনো ধর্মেই সন্ত্রাসের স্থান নেই। যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস করে তারা সমাজের শত্রু। তাদের মোকাবেলায় মুসলিম-ননমুসলিম সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
কাউন্সিল অব মস্কের সেক্রেটারি জেনারেল হীরা ইসলাম গ্রেনফিল টাওয়ারে অগ্নিদূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, আমরা আশাকরি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। আমাদেরও উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব লন্ডনে হেইট ক্রাইম ও অগ্নিদূর্ঘটনা বৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কমিউনিটির মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় পুলিশ ও ফায়ার ব্রিগেড সার্ভিসের যথাযথ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের স্পনসর ছিলো ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপ, ট্রাডিশনাল হালাল ও চ্যারিটি সংস্থা ইসলামিক হেলপ।