এমসি একাডেমীর প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী : আরিয়ানা গার্ডেনে বসেছিলো মিলনমেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুলাই ২০১৭
বহির্বিশ্বে বসবাসরত গোলাপগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ‘এমসি একাডেমীর প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী-২০১৭ গত ৯ জুলাই রোববার লন্ডনের আরিয়ানা ব্যানকুয়েটিং হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছর থেকে এর প্রস্তুতি চলছিল। আয়োজকরা ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান উপহার দেবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এমসি একাডেমীর প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের ব্রিটিশ-বাঙালি সন্তানেরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রাক্তণ ছাত্রীদের স্বামী এবং ছাত্রদের সহধর্মীনীরা। অর্থাৎ তারা ধার করে কাউকে অতিথি করবেন না। মিডিলসেক্স ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের কোলঘেষে গড়েওঠা বাঙালি মালিকানাধীন আরিয়ানা ব্যানকুয়েটিং হলকে তারা এমসি একাডেমীর সাজে সাজাবেন। তাদের অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ থাকবেন এই স্কুলের প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি ঘোষণা আয়োজকেরা অনেকটা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত করেছেন। ক’দিন আগে থেকেই প্রাক্তণ ছাত্রছাত্রীরা আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, স্কটল্যান্ড ও ওয়েল্স থেকে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের ঘরে এসে ওঠেন।
ইংল্যান্ডে বসবাসরত ছাত্রছাত্রীরা স্বপরিবারে ওই দিন ভোর থেকে রওয়ানা দিয়ে সকাল এগারোটা থেকে আসতে শুরু করেন। দুপুর সাড়ে বারোটায় অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা থাকলেও রাস্তায় আটকেপড়া ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ অনুরোধে দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। আরিয়ানার প্রবেশ পথ ছিল দৃষ্টিনন্দন তোরণ দিয়ে সাজানো। হলে প্রবেশের ডানপাশে টেবিলে ছিল মন্তব্যখাতা। যাতে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা তাদের অনুভূতিগুলো লিখে রাখতে পারেন। বামপাশে ছিল ‘এম সি একাডেমী রিইউনিয়ন ২০১৭’ নামাঙ্কিত বিশেষ টুপি। এই টুপিগুলো পরেই তারা হলে প্রবেশ করেন। তার পরেই একে একে সাজানো ছিল রিসেপশন ড্রিঙ্ক, পান-সুপারির, ফুস্কা, আইসক্রিম, চা-বিস্কিট ইত্যাদি নানা ধরণের খাবারের স্টল। হলে পেছনের বড় আঙিনাজুড়ে ছিল বাচ্চাদের বাউন্সিং কাসেলসহ নানা ধরণের খেলার সামগ্রী। তারা এই সকল খেলার সামগ্রী নিয়ে দিনব্যাপী খেলায় মেতেছিল।
বেলা দেড়টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়, আরিয়ারার আঙিনায়, এম সি একাডেমীতে তারা যেভাবে প্রতিদিন অ্যাসেম্বলিতে সারিবদ্ধ হয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করতেন ঠিক একইভাবে। এতে প্রাক্তণ ছাত্রছাত্রীদেরকে নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক মিনহাজ আহমদ চৌধুরী ও ফারুক আহমদ। তারপর তারা যেভাবে সেই কৈশোরে সারিবদ্ধভাবে শ্রেণিকক্ষে যেতেন ঠিক একইভাবে হলে প্রবেশ করেন। পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের পর মিনহাজ আহমদ চৌধুরী ও ফারুক আহমদের স্বাগত বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে এম সি একাডেমীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে এই স্কুলের কৃতীছাত্র রায়হান চৌধুরীর নির্মিত একটি প্রমাণ্যচিত্র দেখানো হয়। প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর পরে অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে মিসবাহ মাসুমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন, ‘শতাব্দীর মিলিত প্রাণে: ফিরে দেখা এমসি একাডেমী’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, স্কুলের প্রবীণ ছাত্র আব্দুল মুহিত চৌধুরী, আব্দুল জলিল চৌধুরী, খালেদ আহমদ, হেলাল উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রমূখকে নিয়ে ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান সম্পাদক ফারুক আহমদ ও সম্পাদক মিসবাহ মাসুম।
বিকেল সাড়ে তিনটায় মধ্যাহ্যভোজের পরে শুরু হয় ভর্তির বছর ক্রমানুসারে ফটো সেশন। বিকেল পাঁচটা থেকে ছিল ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিচারণ। এতে স্মৃতিচারণ করেন আব্দুল হেকিম চৌধুরী, জিহাদ আকবর চৌধুরী, নোমানুল ইসলাম চৌধুরী, ফারুক আহমদ চৌধুরী, জাহেদ আহমদ, মুমিনুল হক চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ুম কামাল, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, তমিজুর রহমান রঞ্জু, নাসিম আহমদ চৌধুরী, সাহেদ আহমদ প্রমুখ। ৬.১৫ মিনিটে আরম্ভ হয় র্যাফেল ড্র। এতে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র, স্কুলের একাকালীন ছাত্র এবং পরবর্তীকালে শিক্ষক আ ম অহিদ আহমদ এবং বর্তমান স্পিকার সাবিনা আক্তার। র্যাফেল ড্রতে প্রথম পুরস্কার পান লন্ডন-সিলেট (তাদের ভাষায় লন্ডন-এমসি একাডেমী-লন্ডন) রিটার্ন টিকিট। পুরস্কারটি লাভ করেন রেজাউল ইসলাম বিল্লাহ। দ্বিতীয় পুরস্কার পান মোহাম্মদ দিলওয়ার হোসেন ল্যাপটপ এবং তৃতীয় পুরস্কার ছিল একটি সামসাং ট্যাবলেট। উল্লেখ্য, এগারটি পুরস্কারের মধ্যে ৮টি পুরস্কার লাভ করেন মহিলারা। বিকেল সাড়ে ছয়টায় থেকে নয়টা পর্যন্ত ছিল বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করে- আলাউর রহমান, শাম্স তামান্না, নাজমুন তান্নি, আশরাফুর রাজা চৌধুরী এবং এমসি একাডেমীর ছাত্র জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
বিভিন্ন পর্বে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন রায়হান চৌধুরী, ফারজানা আহমদ, মিসবাহ মাসুম ও রেজাউল ইসলাম বিল্লাহ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মিনহাজ চৌধুরী, ফারুক আহমদ, খলিলুর রহমান চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন আহমদ, জাহেদ আকবর চৌধুরী (জিহাদ), আব্দুল কাইয়ুম কামাল, আব্দুল হেকিম চৌধুরী, মুহিবুর রহমান (মুহিব), আব্দুল বারি নাসির, মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, তমিজুর রহমান রঞ্জু, আহমেদুল চৌধুরী সেলিম, জাহেদ আহমদ, ফারুক আহমদ চৌধুরী, মুমিনুল হক চৌধুরী, রায়হান চৌধুরী, আফসারুল হোসেইন চৌধুরী (পান্নু), হারুনুর রশীদ মুজিব, মিসবাহ মাসুম, সৈয়দ মোস্তফা লায়েক, রেজুউল ইসলাম বিল্লাহ, আফজল আহমদ চৌধুরী, উবায়দুল হক শিপন, দুলাল আহমদ, নাসিম আহমদ চৌধুরী, সাহেদ আহমদ, শামিম আহমদ, এজাজুর রহমান, হোসেন আহমদ, দিলোয়ার আহমেদ চৌধুরী, রাশেদ আহমদ চৌধুরী, রাজিব আহমদ চৌধুরী, সেলিম আহমদ চৌধুরী প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মধ্যে সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও সাপ্তাহিক জনমতের নির্বাহী সম্পাদক সাঈম চৌধুরী। পুরো অনুষ্ঠানটি ‘রিয়েল সিলেট’ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিবেশন করে এম সি একাডেমীর ছাত্র দুইজন কৃতী ছাত্র। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি