নাগরিকত্ব বিল: প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎকণ্ঠা নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০১৭
দেশ ডেস্ক: বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন। তাদের শঙ্কা, বিলটি পাস হলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ১৩তম বৈঠকে এ বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্য-বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রবিবার অনুষ্ঠিত কমিটির ১৪তম বৈঠকে ওই কার্য-বিবরণীটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
কার্যবিরণীতে দেখা যায়, কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন বিষয়টির আলোচনার সূত্রপাত করেন। এই সংসদ সদস্য তার যুক্তরাজ্য সফরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আমি ৭টি সভায় অংশ নেই। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নাগরিক বিল নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
এর জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘প্রবাসীদের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী বিলটি পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, বিলে প্রবাসী দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে, তা যৌক্তিক।’
বিলটি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রবাসী এদেশে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে চান, বিলটি তাদের সম্পর্কিত। তারা নিজেদের স্বার্থে বিলটি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চান।’ সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিলটি পাস হলে কোনও প্রবাসী নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না তবে দ্বৈত নাগরিকেরা এদেশের কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’
ডা. দীপু মনি আরও জানান, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই বিলটি আনা হয়েছে। পৃথিবীর বহুদেশে এ ধরনের আইন রয়েছে।’
গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় বৈঠকে অনুমোদন লাভ করে। ওই বিলের ৭-এর (২) উপধারা অনুযায়ী ধারা ৬-এর অধীন নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার হারাবেন। যেমন জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোনও কর্মে নিয়োগ লাভ, স্থানীয় সরকারসহ যেকোনো পদে নির্বাচন এবং কোনও রাজনৈতিক সংগঠন করা। ৮ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, জাতীয় সংসদ সদস্য বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত, শৃঙ্খলা বাহিনীতে বা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কর্মে নিয়োজিত কোনও ব্যক্তি তার কাজে বা পদে নিয়োজিত থাকাকালীন দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না।’
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর ওই সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা না করার কারণে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশিত হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সঠিকভাবে ব্রিফিং না করার কারণে এটি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সদস্যরা।
এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ফারুক খান বা বলেন, ‘এই সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে যে প্রশ্ন উঠছে, তার সমাধান হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সফরে প্রতিরক্ষা নিয়ে কোনও চুক্তি হয়নি, হয়েছে সমঝোতা স্মারক। অথচ বিষয়টি নিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অনেক কথা উঠে এসেছে। বিষয়গুলো স্পষ্ট হলে অনেক অপ্রয়োজনীয় আলোচনা কমে যেত। প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত কী হয়েছে, তা জানা দরকার বলেও মন্তব্য করেন সরকার দলের এই প্রভাবশালী এমপি।’
বৈঠকে আওয়ামী লীগের গোলাম খন্দকার প্রিন্স বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি তো হয়নি বরং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে। মানুষের বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো মিডিয়ায় প্রচার হওয়া উচিত।’ জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনও প্রিন্সের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন আছে।’
ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিষয়গুলো সময় নিয়ে মানুষকে জানানো হবে বলে বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব জানান।
এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘সফরের আগে ব্রিফিংয়ে পরিষ্কারভাবে ৩৫টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা বলা হয়েছে। সবকিছু পূর্ব-নির্ধারিত হলেও স্বাক্ষরিত হওয়ার আগ-পর্যন্ত চূড়ান্ত বলে কিছু ধরে নেওয়া যায় না। চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চয়তা থেকে যায় বলেই ‘সম্ভাবনা রয়েছে’ বলা হয়।’’
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুধু একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে না। সামগ্রিক কনসেপ্টের ওপর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সফল হয়েছে বলে এ সময় মন্ত্রী দাবি করেন।
সফরের বিষয়টি মিডিয়ায় ভালোভাবে ব্রিফ না হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে কমিটির সভাপতি দীপু মনি বলেন, মিডিয়ার অব্যবস্থাপনার কারণে যদি সরকারের প্রচেষ্টা ও অর্জিত সফলতা যথাযথভাবে প্রতিফলিত না হয় তাহলে তা ক্ষতির কারণ।