সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের অভিযোগ : খালেদা জিয়া লন্ডনে ষড়যন্ত্র করছেন, বিএনপির বিবৃতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৭
আ’লীগের বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী- যুক্তরাজ্য বিএনপি
দেশ, ২৭ জুলাই: যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন গত ২৪ জুলাই সোমবার পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি বেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক শাহ শামীম। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিন, হরমুজ আলী, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলা হয়, লন্ডনে বসে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের করছেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রদত্ত বক্তব্য সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন:
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মাত্রিক উন্নয়নে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রশংসিত।’ দেশে জঙ্গীবাদ নির্মূল, সন্ত্রাস দমনসহ আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশকে শান্তি ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনা দেশে যখন উন্নয়নের এই ধারা সৃষ্টি করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের এই উন্নয়নকে ব্যহত ও বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তিনি লন্ডনে এসে এই ষড়যন্ত্রের জাল পাকাচ্ছেন। খালেদা জিয়া ইতোপূর্বে আন্দোলনের নামে দেশে জ্বালাও-পোড়াও হত্যা খুন, নানা দখলবাণিজ্যসহ বাসে আগুন দিয়ে ২৫৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে দেশে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন।
খালেদা জিয়া ও তার পুত্র বাংলাদেশের গরীব দুখি মেহনতি মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, হাওয়া ভবনখ্যাত দুনীর্তি এবং জিয়া অরফেন ট্রাস্টের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করেছে তার পুত্র তারেক রহমান ও তিনি। জিয়া অরফেন দুর্নীতি মামলা মোকাবিলা না করে একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে টালবাহানা করে ৫৪ বার আদালতের কাছে সময় চেয়ে বিচার কার্যকে বিলম্বিত করে চলেছেন। আমরা ঘোষণা করতে চাই, খালেদা জিয়ার এ সমস্ত দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালিরা প্রতিহত করবে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা বাংলাদেশের ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলো। তখন মহান মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। এই বিলেতে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করতে প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা ছিলো অনন্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। সুতরাং এখানকার প্রবাসীরা খালেদা জিয়া ও তার দুর্নীতিবাজ পুত্রের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নেতৃবৃন্দ। আ’লীগের বক্তব্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী
সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃদ্বয় আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষেদাগার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য নতুন কিছু নয়। দেশে অথবা বাইরে যেখানেই তিনি থাকুন না কেন তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও মিথ্যা অপপ্রচার থাকবেই। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে যখন চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়া লন্ডন এসেছিলেন তখনও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা থেকে থেকে শুরু করে সরকারের অবৈধ মন্ত্রী-এমপিসহ সিনিয়র নেতারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ ত্যাগ এবং ষড়যন্ত্র করার উদাহরণ কেবল গণতন্ত্র হত্যাকারী ও দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী আওয়ামী লীগের মধ্যেই রয়েছে। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময় সেটি প্রমাণিতও হয়েছে। তারা বলেন, সেই সময় সেনা সমর্থিত সরকারের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপ সত্ত্বেও দেশ ত্যাগ করেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এজন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার দুই সস্তান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও বিশিষ্ট ক্রীড়ানুরাগী মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দেশের কথা, জনগণের কথা চিন্তা না করে শেখ হাসিনাই তখন বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। পরে মঈন-ফখরুদ্দিনদের সাথে আঁতাত করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
বেগম খালেদা জিয়া কখনোই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। দেশে সংঘটিত বোমা হামলা, খুন, গুম, চাঁদাবাজিসহ সব অনৈতিক কাজের সাথে ভোটারবিহীন সরকারের দলের লোকজনই জড়িত। অবৈধ সরকার তাদের ব্যার্থতা ঢাকতেই দেশনেত্রী বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ক্ষমতাসীনদের এমন কথাবার্তা হিংসা ও হানাহানির রাজনীতিকে উসকে দিবে। রাজনীতিতে হিংসা, হানাহানি মানুষ পছন্দ করে না কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং অবৈধ মন্ত্রী এমপিরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলতেই রাজনীতিতে হিংসা ও হানাহানি উস্কে দিচ্ছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও ব্যাংক ডাকাত জয় দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিই শুধু ধ্বংস করছে না, বিরোধী মতের নেতাকর্মীরদের গুম খুন করার মাধ্যমে রক্তের হুলি খেলায় মেতে উঠেছে। দেশকে এক জ্বলন্ত কারাগারে পরিণত করেছে। গুম খুনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি কায়েম করে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গিলে খাচ্ছে। বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য প্রবাসী কমিউনিটিসহ দেশের জনগণের প্রতি আহবান জানানো হয় এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমেই গুম, খুন, ব্যাংক ডাকাতি ও দুর্নীতি দুঃশাসনের বিচার অচিরেই দেশের মাটিতে সম্পন্ন করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।