শপথ নিলেন ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি, কী আছে রাষ্ট্রপতি ভবনে?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৭
দেশ ডেস্ক: ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন রামনাথ কোবিন্দ। ২৫ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অন্য বিধায়কদের উপস্থিতিতে শপথ নেন তিনি। এনডিটিভির খবরে জানা যায়, শপথ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘আমাদের এমন এক ভারত গড়ে তুলতে হবে, যা বিশ্বকে আর্থিক নেতৃত্ব দেবে। নৈতিক আদর্শও প্রতিষ্ঠা করবে। এই দেশে বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, রয়েছে। আমরা একে অন্যের থেকে আলাদা। তা সত্ত্বেও সবাই এক। ঐক্য থাকলেই সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়।’ ৭১ বছর বয়সী রামনাথ বিহার রাজ্যের সাবেক গভর্নর। তিনি ভারতের দ্বিতীয় দলিত সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রপতি। বক্তব্যে নতুন রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রাচীন ভারতের জ্ঞান ও সমকালীন বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের মাটি, পানি ও সংস্কৃতি নিয়ে আমরা গর্বিত। দেশের প্রত্যেক নাগরিককে নিয়ে গর্বিত।’ দেশের সব নাগরিককে রাষ্ট্রনির্মাণকারী বলে অভিহিত করেন রামনাথ কোবিন্দ। তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট কাজ, যা আমরা প্রতিদিন করি, তা নিয়ে আমরা গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, যে কৃষক মাঠে ফসল ফলান, তিনিও রাষ্ট্রনির্মাতা। যিনি বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কার করেন, তিনিও রাষ্ট্রনির্মাতা। শিক্ষক, ট্রাফিক পুলিশ, গৃহবধূ থেকে শুরু করে প্রত্যেকে রাষ্ট্রনির্মাতা।
কী আছে রাষ্ট্রপতি ভবনে: ভারতের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে স্বাগত জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন। দায়িত্ব গ্রহণ করে উঠেছেন তাঁর জন্য বরাদ্দ রাষ্ট্রপতি ভবনে। বিশ্বে রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য যেসব বড় বাসভবন রয়েছে, এর মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনও রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক কী কী আছে এই ভবনে। রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ এই সরকারি বাসভবনটি ৩৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত। চারতলা এই ভবনে রয়েছে ৩৪০টি কক্ষ। এর মধ্যে লিভিং রুম ৬৩টি। ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ইরউইনের জন্য এই ভবনটি তৈরির চিন্তা আসে ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার এডউইন লুটিয়েনছের মাথায়। ১৯২৯ সালে এই ভাইসরয় এই ভবনে ওঠেন। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল সি রাজাগোপালাচারি প্রথম এই বাসভবনে ছিলেন। তখন এর নাম ছিল গভর্নমেন্ট হাউস।
যখন ভবনটি তৈরি হয়, তখন এর নাম ছিল ভাইসরয়’স হাউস। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এই ভবনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গভর্নমেন্ট হাউস। পরে রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের সময় এর নাম হয় রাষ্ট্রপতি ভবন। ২৯ হাজার লোক ১৭ বছর ধরে এই ভবনটি তৈরি করেন। এই ম্যানশনে উপহারসামগ্রী রাখার জন্য একটি জাদুঘর আছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যেসব উপহার পেয়ে থাকেন, তা এই জাদুঘরে রাখা হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনে রয়েছে একটি ক্লক টাওয়ার। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত জে বি জয়সে অ্যান্ড কোম্পানি এটি তৈরি করে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ২৩ মিটার উঁচু এই ক্লক টাওয়ারটি নজর কাড়ে সবার। সেখানেও রয়েছে একটি জাদুঘর। রাষ্ট্রপতির পাওয়া উপহারসামগ্রী দ্বারা সজ্জিত এই জাদুঘর। রাষ্ট্রপতি ভবনের ৭৫ একরের বেশি জায়গাজুড়ে আছে বাগান। রয়েছে জলাধার, প্রজাপতি কর্নার, বরইগাছের উদ্যান, আমবাগান, ময়ূর পয়েন্ট, কমলালেবুর বাগান ও বন। আছে নানা জাতের হাজার হাজার গাছগাছালি, পশুপাখি। রাষ্ট্রপতি ভবনের ভোজ কক্ষ সুবিশাল খাবার ঘর। এখানে রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়। এই কক্ষটি ১০৪ ফুট লম্বা ও ৩৪ ফুট প্রশস্ত। একসঙ্গে ১০৪ জন বসে খেতে পারে।
কোথায় থাকবেন প্রণব মুখার্জি: পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখার্জির পালা শেষ হলো ২৪ জুলাই সোমবার। স্বভাবতই দিল্লির সুবিশাল রাষ্ট্রপতি ভবন ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। নির্বাচনের পরের দিন নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ওই ভবনের বাসিন্দা হয়েছেন রামনাথ কোবিন্দ। সাবেক হওয়ার পর কোথায় থাকছেন প্রণব মুখার্জি, এক প্রতিবেদনে তা জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস। বাংলাদেশের নড়াইলের জামাই প্রণব মুখার্জির বর্তমান ঠিকানা দিল্লির ১০ রাজাজি মার্গ। সাবেক হওয়ার পর এই ভবনের বাসিন্দা ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম। ২০১৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন। দুই লাখ বর্গফুটের রাষ্ট্রপতি ভবনে ৩৪০টি কক্ষ আছে। সেটি ছেড়ে প্রণব মুখার্জি যে বাড়িতে গেলেন, তার আয়তন প্রায় ১২ হাজার বর্গফুট। বাড়িটি মেরামতের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ওই বাড়ির বড় একটি অংশ প্রণব মুখার্জির সংগ্রহে থাকা বই রাখার উপযোগী করে তোলা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতি ভবনের দেখভালের জন্য দুই শতাধিক কর্মী থাকেন। সাবেক হওয়ার পর প্রণব মুখার্জির এই সুবিধা আর থাকছে না। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য থাকা বুলেটপ্রুফ মার্সিডিস বেঞ্চ সুবিধাও আর পাবেন না তিনি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কী কী সুবিধা পাবেন, সে ব্যাপারে উল্লেখ আছে রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত ‘প্রেসিডেন্ট ইমলিউমান্টস অ্যাক্ট ১৯৫১’-তে।
এটি অনুযায়ী, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিনা ভাড়ায় সুসজ্জিত বাংলো বাড়িতে থাকবেন। এটি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। তিনি দুটি টেলিফোন পাবেন। এর মধ্যে একটিতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে এবং অন্য মোবাইল ফোনে সারা দেশে রোমিং ফ্রি থাকবে। এর পাশাপাশি তিনি একটি গাড়ি, একজন ব্যক্তিগত সচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব, একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও দুজন অফিস সহকারী পাবেন। অফিস চালানোর খরচ বাবদ তিনি প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে বছরে ৬০ হাজার টাকা পাবেন। আমৃত্যু তাঁর চিকিৎসা খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। এর বাইরে তিনি একজন সঙ্গীকে নিয়ে উড়োজাহাজ, ট্রেন ও স্টিমারে সবচেয়ে ভালো আসনে ভ্রমণ করতে পারবেন। অবসরকালীন ভাতা হিসেবে তিনি প্রতি মাসে ৭৫ হাজার রুপি পাবেন। ভারতের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সাবেক হয়ে এই সুবিধাগুলো পাবেন প্রণব মুখার্জি।