ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা দিশেহারা : ১ মাসে ১৫ বাংলাদেশী গ্রেফতার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০১৭
দেশ রিপোর্ট: ব্রিটেনের বাংলাদেশী কারি ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা কর্মী নিয়োগে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন তেমনি অবৈধ কর্মী নিয়োগ করে মোটা অঙ্কের জরিমানারও সম্মুখীন হচ্ছেন। কর্মী নিয়োগের ব্যয় বেড়ে যাওয়া, রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্রেক্সিটের প্রভাব সবকিছু মিলে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে বলে মনে করছেন এই খাতের অভিজ্ঞরা। গত একমাসে ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ১৫ জন বাংলাদেশীকে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্টে কাজ করার অভিযোগে আটক করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
ইংল্যাণ্ডের নর্থাম্বারল্যান্ডের ছোট টাউন আল্নিকে অবস্থিত বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট মিভেসিতে গত ২১ জুলাই রাতে অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। সেখান থেকে চার বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। আটক চার জনের বয়স ২৭, ২৮, ৩২ ও ৩৪ বছর। এদের প্রত্যেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, তাঁদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরন করে এই চারজনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ দিতে না পারলে প্রত্যেকের জন্য ২০ হাজার পাউন্ড হিসাবে ৮০ হাজার পাউন্ড জরিমানা দিতে হতে পারে মিভেসি রেস্টুরেন্টের মালিককে।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রেস্টুরেন্টটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। রেস্টুরেন্টের মালিক আমিনা বেগম ও রায় উদ্দিন। আমিনা বেগম অভিযান চলাকালীন সময়ে রেস্টুরেন্টে ছিলেন না। তবে তিনি পরবর্তীতে স্থানীয় সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, আটক হওয়া দুই ব্যক্তিকে তিনি কেবল কথাবার্তার ভিত্তিতেই নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁরা নিয়োগের সময়ে আমিনাকে বলেছিল, তাদের ভিসা আবেদন ঝুলে আছে এবং তা নবায়ন হয়ে যাবে। তৃতীয়জন কেবল এক সপ্তাহ আগে কাজে যোগদান করেছিল। ফলে তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পাননি তিনি। তবে চতুর্থ ব্যক্তিকে তিনি স্পন্সর করেছেন বলে জানান আমিনা, যিনি গত পাঁচ বছর যাবত ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন। অভিযানের পর মিভেসি রেস্টুরেন্ট তাঁদের নিয়মিত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, এসেক্সের বাসিলডন এলাকার বিলেরিকেই টাউনে গত ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ইমিগ্রেশন পুলিশ অভিযান চালায় দ্যা রাজ রেস্টুরেন্টে। হাই স্ট্রিটের বিপরীতে হলি কোর্টে রেস্টুরেন্টের অবস্থান। অভিযানে ২৭ ও ৩১ বছর বয়স্ক দুই বাংলাদেশীকে আটক করে পুলিশ। দুই ব্যক্তিরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা অবৈধভাবে ব্রিটেনে অবস্থান করছিলেন। তাঁদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সঠিক নিয়ম মেনে ওই দুই বাংলাদেশীকে নিয়োগ দেওয়ার কাগজপত্র ও প্রমাণ দেখাতে বলা হয়েছে দ্যা তাজ রেস্টুরেন্টকে। প্রমাণাদি দেখাতে না পারলে ৪০ হাজার পাউন্ড জরিমানা গুনতে হতে পারে রেস্টুরেন্ট মালিককে।
অন্যদিকে, গত ৭ জুলাই শুক্রবার নর্থ-ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের আলভার্সটন ও আসকাম এলাকার দুটি রেস্টুরেন্টে একই সময়ে অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। আলভার্সটনের নাজ রেস্টুরেন্ট এবং আসকামের টেইস্ট অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে চার বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। তাদেরকে রেস্টুরেন্টগুলোতে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে আটক করা হয়। নাজ রেস্টুরেন্ট থেকে আটক হওয়া ৩৩ বছর বয়স্ক লোকটি একজন অবৈধ ইমিগ্রেন্ট। আর টেইস্ট অব ইন্ডিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে আটক হওয়া তিন জনের বয়স ৩৩ থেকে ৩৯ পর্যন্ত। তাদেরকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে এবং বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, সারে অঞ্চলের আর্লসউড এলাকার স্টেশন এপ্রোচ ওয়েস্টে অবস্থিত রুচিতা রেস্টুরেন্টে গত ৪ জুলাই মঙ্গলবার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। সন্ধ্যা পৌনে সাত টায় শুরু হওয়া ওই অভিযানে চার বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। এর মধ্যে দুই জনের বয়স ২৮ ও ২৯। দুই জনেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদেরকে এখন আটক রেখে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্য দুই বাংলাদেশীর বয়স যথাক্রমে ২৯ ও ৪৫ বছর। হোম অফিসে এই দুই ব্যক্তির ভিসার আবেদন ঝুলে আছে। তবে তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দিয়েছে। যতদিন পর্যন্তনা ভিসার আবেদন সুরাহা হবে ততোদিন পর্যন্ত ইমিগ্রেশন বিভাগে নিয়মিত হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ওই দুই জনকে।
এদিকে, স্ট্যাফোর্ডশায়ারের লিক এলাকার কাছাকাছি বটমহাউজের আশবর্ন রোডে অবস্থিত ক্লোভস ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ইমিগ্রেশন অভিযানের পর স্টাফ শূন্যতার কারণে বন্ধ করে দিতে হয়। ঘটনাটি ঘটে ২৯ জুন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ছয় টার দিকে। কাজের অনুমতি না থাকার কারণে রেস্টুরেন্টের তিন কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিন জনের দুই জন বার্মার নাগরিক আর তৃতীয় ব্যক্তি ৩৬ বছর বয়স্ক বাংলাদেশী।