ভারতে দাম ২ হাজার রুপি, বাংলাদেশে ৪০ হাজার!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০১৭
দেশ ডেস্ক: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমস। তারা বলেছে, সীমান্তপথে গরু চোরাচালান বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশিদের থেকে বহুগুণ বেশি উৎসাহী কথিত ভারতীয় ব্যবসায়ী বা চোরাচালানিরা। দুই হাজার রুপি দামে যে বাছুর বিক্রি হয় ভারতে, সেই বাছুর বাংলাদেশে বিক্রি হয় ৪০ হাজার রুপিতে।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গরুর ওপর বিশেষভাবে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। কিন্তু তা বাস্তবে কিছুটা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো ছাড়া আর কতটা কি কাজ দিয়েছে তা একটা ভাবনার বিষয়।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশে গরুর বিরাট চাহিদা বেড়ে গেছে। গরু চোরাচালানকারিদের মধ্যে ঈদের আগেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে দুদেশের সীমান্তের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ২৪ পরগনা থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘ক্যাটেল করিডোরগুলো’ সক্রিয় গরু চোরাচালান প্রত্যক্ষ করছে। এবারের গরু চোরাচালানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, গরু চোরাচালানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে ফাঁকি দেওয়া। নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিতে চোরাচালানীরা বাংলাদেশে গরু পাচার করতে পাহাড়ি অঞ্চলের দুর্গম ভূ-প্রকৃতিকে ব্যবহার করছে। আসামের নিম্ন অববাহিকা অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের দুর্যোগ মোকাবিলা করছে। এই সুযোগে চোরাচালানকারীরা অভিনব উপায়ে পানি পথ ব্যবহার করছে। যেসব নদী কম খোরস্রোতা অথচ বর্তমানে বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর, সেইসব নদীপথে তারা কলা গাছ তৈরির ভেলার সঙ্গে বাছুর বেঁধে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এ ঘটনা মাইনকার চর থেকে বরাক উপত্যকা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের জলমগ্ন কাদা-চর থেকে মেঘালয়ের পার্বত্য অঞ্চলজুড়ে এভাবে চোরাচালানিদের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের তৎপরতা সব থেকে বেশি আসাম এবং উত্তরবঙ্গে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, ভারত-বাংলাাদেশ সীমান্তজুড়ে কেন এত বেশি গরু চোরাচালানি চলছে? এর উত্তর প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতিতে নিহিত। বাংলাদেশে ঈদুল আজহা মৌসুমে একটি বাছুর ৪০ হাজার রুপিতে বিক্রি হয়। অন্যদিকে ভারতীয় দিকে প্রায় দুই হাজার থেকে তিন হাজার রুপিতে এ ধরনের বাছুর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে একটি পূর্ণ বয়স্ক গরু ঈদের হাঁটে ৮০ হাজার থেকে সোয়া লাখ রুপি বিক্রি হয়। অন্যদিকে সেই একই ধরনের গবাদি পশুর দাম ৪০ হাজার রুপিতেও বিকোবে না। বর্তমানে বছরে আন্তঃসীমান্ত গরু বাণিজ্য পাঁচ হাজার রুপি কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে অনুমান করা হয়।
দি ইকোনমিস্ট টাইমসের রিপোর্টে আরও বলা হয়, গরু চোরাচালানিদের কাছে তাইি এই বাণিজ্যে ঝুঁকি নেয়ার বিষয়টি অনেক ব্যাপকমাত্রা লাভ করতে পারে। গরু বাণিজ্যর সঙ্গে সংশিষ্টদের মতে, এমনকি স্থানীয়ভাবে প্রজনন করা গরুর দাম বাংলাদেশে আকাশছোঁয়া। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলেছে, প্রধানত বিহার, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশের গরুগুলো আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের সীমান্ত রুটগুলো দিয়ে বাংলাদেশে হারিয়ে যাচ্ছে।