যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া যুদ্ধের দামামা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০১৭
দেশ ডেস্ক: আবার যুদ্ধের দামামা বাজছে। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া এখন দৃশ্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ট্রিগারে একটি মাত্র চাপ দিলেই বেরিয়ে পড়বে পারমাণবিক অস্ত্র। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যাবে আরেকটি ধ্বংসলীলা। তাতে কে হারবে বা কে জিতবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সত্যিই যদি এ দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে এর বড় একটি প্রভাব পড়বে এশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিকে থোড়াই কেয়ার করে পাল্টা হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তারা সরাসরি বলে দিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখন্ডের আওতায় থাকা গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। এর ফলে নতুন করে উত্তেজনা কোরিয় উপদ্বীপ অঞ্চলে উত্তেজনার পারদ টগবগ করছে। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে যেকোন সময় যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ফের পারমাণবিক হামলার হুমকি দিলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। সেই জবাব হবে ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ বা আগুনে জবাব। কিন্তু ট্রাম্পের এমন হুঁশিয়ারিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা ট্রাম্পের চেয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেছে, গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে এমন রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায়। ওদিকে গুয়াম থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রিপোর্টে বলছে, উত্তেজনাকর এই অবস্থায় আর্থিক বাজার এলোমেলো হয়ে গেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকরা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাগাড়ম্বরতা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। পিয়ংইয়ং বলেছে, তারা গুয়ামে হামলা পরিকল্পনা সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করছে।
উল্লেখ্য, গুয়ামে বসবাস করে প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ। সেখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতে আছে একটি সাবমেরিন স্কোয়াড্রন, একটি বিমানঘাঁটি ও কোস্ট গার্ড গ্রুপ। কোরিয়ান পিপলস আর্মির একজন মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএন’কে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা এখন শুধু নেতা কিম জং উনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। তিনি সিদ্ধান্ত দেয়ামাত্র পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। ওদিকে গুয়ামের গভর্নর এডি ক্যালভো উত্তর কোরিয়ার হুমকি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাদের কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। তাই যেকোনো হামলা মোকাবিলা করার জন্য তারা প্রস্তুত। তবে এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয় নি। হুমকির মাত্রা বা থ্রেট লেভেল পরিবর্তনও করা হয় নি। তিনি বলেন, গুয়াম হলো আমেরিকার ভূখ-। এটা শুধু একটি সামরিক স্থাপনাই নয়। ওদিকে উত্তর কোরিয়া অন্য এক বিবৃতিতে বলেছে, যেকোনো হামলা পরিকল্পনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ- সহ সকল শত্রুর শক্ত ঘাঁটি নির্মূল করা হবে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে শক্তি ব্যবহারে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে অবরোধ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দিক থেকে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ আরোপ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। মঙ্গলবার নিউ জার্সিতে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে যুক্তরাষ্ট্রকে আর কোনো হুমকি না দেয়া। তা দেয়া হলে তার জবাব দেয়া হবে এমন আগুনে, যা পৃথিবী কখনো দেখেনি।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে কোনো গোপনীয়তা রাখে নি। তারা দম্ভ করে বলেছে, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হামলা চালাতে সক্ষম। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র বিষয়ক কর্মসূচি বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বানকে অবজ্ঞা করছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং বলছে, যুক্তরাষ্টের যেকোনো শত্রুতামুলক হামলা প্রতিরোধে বৈধ আন্তঃদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে তারা। উল্লেখ্য, ১৯৫০-৫৩ থেকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কৌশলগত যুদ্ধ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের। শান্তি চুক্তির চেয়ে অস্ত্রকে বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে এ সংঘাতের সূত্রপাত। এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় ও জাপানের কাছে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার সেনা। ওদিকে আজ বুধবার জাপানের নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলার ৭২তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।