নিউক্যাসেলে বিচার চলছে ধর্ষকচক্রের : টিনেজার মেয়েদের নেশা করিয়ে যৌন নির্যাতন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০১৭
লন্ডন, ১১ আগস্ট: ওরা ধর্ষক। যৌন নির্যাতনকারী। মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত। ওদের সংগঠিত চক্রের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ৪৬১ জন বালিকা বা যুবতী। এসব অপরাধীর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশীও। আরও আছে পাকিস্তানি, ভারতীয়, ইরাকি, ইরানিয়ান ও তুর্কি সম্প্রদায়ের যুবক বা যুবতী। এদের বেশির ভাগেরই জন্ম বৃটেনে। তারা বসবাস করছে বৃটেনের নিউক্যাসেলের ওয়েস্ট এন্ডে। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে এখন বিচার চলছে। এ পর্যন্ত এ চক্রের ১৮ জন পুরুষ ও নারী অপরাধীকে আটক করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওরা বিপন্ন অথবা বিপদগ্রস্ত যুবতীকে মদ পান করায় বা নেশায় আসক্ত করে। তারপর তাদেরকে যৌনতায় ব্যবহার করে। এ পর্যন্ত এমন চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৭৮ জন যুবতী। এ অভিযোগে মোট ৪৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওদেরকে ধরিয়ে দিতে গুপ্তচর নিয়োগ করেছিল বৃটিশ পুলিশ। বিনিময়ে ঘোষণা করা হয়েছিল ১০ হাজার পাউন্ড।
এ বিষয়ে নর্দামব্রিয়া পুলিশ প্রধান স্টিভ অ্যাশম্যান বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন এমন নির্লজ্জ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে। এ নিয়ে বৃটিশ মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, মানব পাচার, পতিতাবৃত্তিতে উদ্বুদ্ধ করার অপরাধে এ পর্যন্ত ১৭জন পুরুষ ও একজন নারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বেশির ভাগই এশিয়ান বংশোদ্ভূত। এ নিয়ে আদালতে শুনানি চলছে। তাতে জানা গেছে, চার বছর ধরে এই গ্রুপটি বিপন্ন বা বিপদে পড়া যুবতীদের টার্গেট করছে। তারা তাদেরকে মদ পান করায় না হয় তাদেরকে নেশা সেবন করায়। এরপর ওই যুবতীকে নিউক্যাসেলের রগরগে পার্টিতে নিয়ে যায়। এ চক্রের একজন মোহাম্মদ হাসান আলী। এক পার্টিতে ১৫ বছর বয়সী এক বালিকার সঙ্গে সাক্ষাত হয় তার। তারপর তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই বালিকা নিজেকে ১৮ বছর বয়সী বলে দাবি করে। কিন্তু হাসান আলি তার প্রকৃত বয়স জানা সত্ত্বেও তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ক্যারোলানা গ্যালোন স্বীকার করেছে যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য যুবতীদের পাচারের সঙ্গে জড়িত সে। আটক হওয়ার আগে এমন তিনটি ঘটনা ঘটিয়েছে সে। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, অপরিপক্ব টিনেজার মেয়েদের টার্গেট করে বয়স্ক পুরুষরা। তারা এমন টিনেজারকে আয়ত্তে নিয়ে তার ওপর প্রয়োগ করে কোকেন, ক্যানাবিস, এলকোহল অথবা মেফেড্রোন। এরপর তাকে ধর্ষণ করে অথবা রগরগে পার্টিতে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করে।
এসব অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে বৃটিশ পুলিশ পুরস্কৃত করেছে অভিযুক্ত একজন ধর্ষককে। যেসব পার্টিতে কম বয়সী মেয়েদের যৌন অপরাধে ব্যবহার করা হয় সেখানে গুপ্তচরের কাজ করার জন্য ওই ধর্ষককে দেয়া হয়েছে ১০ হাজার পাউন্ড। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে বৃটেনে। এ বিষয়ে নর্দামব্রিয়া পুলিশের প্রধান কনস্টেবল স্টিভ অ্যাশম্যান বলেছেন, আমাদের এ প্রজন্মের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অবৈধ যৌনতার বিস্তার। এ ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়কে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীর দেয়া তথ্য ও নির্যাতিত ১০৮ জনের সঙ্গে কথা বলার পর তার বাহিনী বড় ধরনের তদন্তে নামে। তাতে আটক করা হয় ধর্ষকদের। চারটি ঘটনার বিচার চলাকালে ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ২০ জন যুবতী এ সংক্রান্ত প্রমাণ দিয়েছেন। বলা হচ্ছে রদারহ্যাম, রোচডেলে, অক্সফোর্ড ও বৃস্টল শহরের কুখ্যাত এমন অপরাধের পর এটাই বৃটেনের যৌনতা সংশ্লিষ্ট চক্রের সপ্তম বৃহৎ চক্র।
আদালতে শুনানিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে ৩৭ বছর বয়সী বদরুল হোসেন। সে কোন দেশের তা বলা হয়নি। আরো আছে সাইফুল ইসলাম (৩৫)। তার বসবাস নিউক্যাসেলে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ২০১১ সালে ১৫ বছর বয়সী একটি বালিকাকে সে ধর্ষণ করেছে। এ জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তাকে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। যৌন হামলার অভিযোগে ২০১৫ সালের অক্টোবরে ২ বছরের জন্য জেল দেয়া হয়েছে নিউক্যাসেলের ইয়াসের হোসেনকে (২৮)। একটি শিশুর সঙ্গে যৌন কর্মকান্ডের জন্য ২০১৫ সালে নিউক্যাসেলের মোহাম্মদ হাসান আলীকে (৩৪) ৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে নেশাদ্রব্য ব্যবহার করে ধর্ষণ করার অভিযোগে রেদোয়ান সিদ্দিকীকে (৩২) ১৬ মাসের জেল দেয়া হয়। ওদিকে যাদের বিরুদ্ধে এখনও শাস্তি ঘোষণা করা হয়নি তার মধ্যে রয়েছে ক্যারোলান গ্যালন, মোহাম্মদ আজরাম, জাহাঙ্গীর জামান, নাসির উদ্দিন, আবদুল হামিদ মঈন, ইসা মুসাভি, মঞ্জুর চৌধুরী, তাহেরুল আলম, প্রভাত নেইল, নাদিম আসলাম, হাবিবুর রহিম, আবদুল সাবে, বদরুল হোসেন, মোহিবুর রহমান প্রমূখ।