পূর্ব লন্ডনে হাফিজ আব্দুল জলিল এর ইন্তেকাল : ব্রিকলেন মসজিদে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০১৯
দেশ রিপোর্ট, ৬ এপ্রিল : পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীন টুরিন স্ট্রিটের বাসিন্দা হাফিজ আব্দুল জলিল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন)। ৫ এপ্রিল শুক্রবার ব্রিকলেন জামে মসজিদে জুমার নামাজের সময় তিনি আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর বেলা পৌনে ৩টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর । তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে, ২ মেয়ে, বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ব্রিকলেন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম সাপ্তাহিক দেশকে জানান, হাফিজ আব্দুল জলিল আমাদের মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ছিলেন । শুক্রবার জুমার নামাজের সময় তিনি ব্রিকলেন মসজিদের মূল হলে খানিকটা পেছনের দিকে নামাজ পড়ছিলেন। সুন্নাত নামাজ শেষে খুতবা শুরু হওয়ার দুই মিনিট আগে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন খুতবার আজান বিলম্বিত করে তিনি অসুস্থ হাফিজ আব্দুল জলিল এর কাছে এগিয়ে যান । এসময় অন্যান্য মুসল্লিরা হাফিজ আব্দুল জলিলকে চারদিক থেকে ঘিরে দাঁড়ান। সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতরে কোনো ডাক্তার থাকলে এগিয়ে আসতে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। এসময় একজন চিকিৎসক এগিয়ে আসেন এবং অসুস্থ আব্দুল জলিলকে ফার্স্ট এইড (প্রাথমিক চিকিৎসা) দেন । একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক তাঁর কাছে আব্দুল জলিল এর শারিরীক অবস্থা খুব ভালো মনে হচ্ছেনা উল্লেখ করে ইমাম নজরুল ইসলামকে শাহাদাহ শোনাতে অনুরোধ করেন । তখন ইমাম নজরুল ইসলাম তাঁকে শাহাদাহ শোনাতে শুরু করেন । হাফিজ আব্দুল জলিলও সাথে সাথে শাহাদাহ পড়ছিলেন । আস্তে আস্তে আল্লাহু আল্লাহু উচ্চারণ করছিলেন । কিন্তু অবস্থা অবনতির দিকে গেলে মসজিদ থেকে অ্যাম্বুল্যান্স কল করা হয় । কিছুক্ষণের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স ব্রিকলেন পৌঁছে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায়।
শনিবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর বড় ছেলে মারুফ মানসুর (২২) সাপ্তাহিক দেশকে জানান, তার পিতার লাশ এখনও হাসপাতালে রয়েছে । তাঁরা জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন । পোস্ট মর্টেম লাগবে কিনা এখনও জানা যায়নি। আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে লন্ডনেই তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হবে। জানাজার সময়সূচি পরে জানানো হবে। তিনি তাঁর বাবার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, হাফিজ আব্দুল জলিল-এর দেশের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের উজানীপাড়া গ্রামে। তিনি ১৯৯৪ সালে বৃটেন আসেন । প্রবাস জীবনের প্রথম দিকে তিনি বেথনাল গ্রীনের স্থানীয় একটি মসজিদে কিছুদিন ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায় ।
শোক প্রকাশ : এদিকে হাফিজ আব্দুল জলিল এর ইন্তেকালে যুক্তরাজ্যে প্রবাসী শাহবাজপুরবাসীর সংগঠন শাহবাজপুর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মনজুর রেজা চৌধুরী, সেক্রেটারি মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী ও ট্রেজারার মোহাম্মদ রহিম গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
অপর এক শোকবার্তায় শাহবাজপুর ইউনিয়নের অধিবাসী (লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক) তাইসির মাহমুদ হাফিজ আব্দুল জলিল এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন । তিনি তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ।
এক শোকবার্তায় ব্রিকলেন মসজিদের প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সাজ্জাদ মিয়া ও সেক্রেটারি হেলাল উদ্দিন আলী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। আলহাজ্ব সজ্জাদ মিয়া বলেন, হাফিজ আব্দুল জলিল ব্রিকলেন মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি ছিলেন । মসজিদের সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। তিনি একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন।
এছাড়াও হাফিজ আব্দুল জলিল এর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তাঁর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলহাজ্ব শামসুদ্দিন, মোঃ বদরুল ইসলামসহ অনেকেই বেথনাল গ্রীনস্থ বাসায় ছুটে যান এবং শোকাহত পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানান ।