সিলেটে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি: গ্রেফতারের দুই ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার মুক্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০১৯
দেলোয়ার হোসাইন, নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট :: সিলেট উইমেনস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকির মামলায় গ্রেফতারের আগেই জামিন নেন ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন চৌধুরী। গত ১৪ মে মঙ্গলবার দুপুরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে যখন বের হন তখনই নগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় সরোয়ার জামিন নেয়ার কথা বললেও পুলিশ তাকে ছাড়েনি। তবে থানায় নেয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সারোয়ারের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের কাগজপত্র নিয়ে থানায় যান। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া জামিনের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে ওসি সেলিম মিয়া জানান, গ্রেফতারের সময় সারোরয়ার জামিন নিয়েছেন বলে জানিয়েছিল। কিন্তু কাগজপত্র প্রদর্শন না করায় তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শেষে যখন তার আইনজীবীরা সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিনের কাগজপত্র প্রদর্শন করেন তখন তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৩ মে সোমবার রাতে সারোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ও অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হাসান। এছাড়া গত ১১ মে শনিবার ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. নাজিফা আনজুম নিশাতের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং- ৬১৭) করেছিলেন ডা. ফেরদৌস হাসান।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা জানিয়েছেন, জামিন হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জিডি ও মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানা হাজত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে সারোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ক্রিটিক্যাল রোগী নিয়ে আমরা যাই। গিয়ে রোগী দেখার অনুরোধ করলেও প্রায় ২০ মিনিট ডাক্তার আসেনি। পরে আমি যখন আমার পরিচয় দিয়ে ডাক্তারদের সহযোগিতা কামনা করি তখনই তারা আমার নেত্রী ও দেশরতœ শেখ হাসিনাকে নিয়েও মন্তব্য করেন। এতে আমি রেগে তাদের ধমকিয়েছি। আর কিছুই করিনি। বিষয়টিকে ঘোলাটে করে তুলতে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, সকালে সিলেটের আদালতে হাজির হয়ে তিনি জামিন নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মে বিকেলে ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পেটের পীড়ায় ভোগা একজনকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় রোগীর সঙ্গে একজন থেকে বাকিদের বাইরে যেতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এ সময় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন চিকিৎসক নাজিফা আনজুম নিশাতকে ছুরি দেখিয়ে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ওই চিকিৎসক। নিশাত নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি উল্লেখ করে পোস্ট দিলে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ দেখা দেয়। বৃহ¯পতিবার সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনার পর থেকে আন্দোলনে রয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। প্রথম দিন থেকেই কর্ম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে গত ১৪ মে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তাররা সিলেট চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়াও ইন্টার্ন ডাক্তাররা তাঁরা তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইন্টার্ন ডাক্তাররা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারোয়ার হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেন। মানববন্ধন বক্তব্য রাখেন ডা. নিজাম আহমদ চৌধুরী, ডা. হিমাংশু শেখর দাস, ডা. মাহবুব, ডা. দ্বীপ, ডা. সজীব, ডা. জাবের, ডা. ইশফাক জামান সজীব, ডা. জাবেদ আহমদ, ডা. রিপন, ডা. তিতাশ কুমার, ডা. সোলেমান বাবু, ডা. আফজাল, ডা. সুশান্ত, ডা. সাব্বির আহমদ, ডা. হরশিত বিশ্বাস, ডা. প্রবাল, ডা. হৃদয় প্রমুখ।