৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ব্রাডি সেন্টারে ৯ম বইমেলা: কুৎসা চর্চাকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪৮:১২,অপরাহ্ন ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
দেশ ডেস্ক, ০৫ সেপ্টেম্বর :: বহুসংস্কৃতির চারণভূমি যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলার উদ্যোগ নিয়েছে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য। সংগঠনের ব্যানারে আগামী ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেণ্টারে ৯ম বইমেলা দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে । এ উপলক্ষ্যে গত ৩০ আগস্ট লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মেলার বিস্তারিত কর্মসূচী লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন সংগঠনের সেক্রেটারী কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল।
লিখিত বক্তব্যে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে উল্লেখ করা হয়, প্রথম দিন সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বিশেষ অতিথি, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মসূচী। এছাড়া থিয়েটার হলে আলোচনা সভা, পদক প্রদান, কবিদের কণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং সব শেষে বিলেতের শিল্পীরা পরিবশেন করবেন সঙ্গীতানুষ্ঠান।
লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্ন-উত্তরে অংশ নেন সংগঠনের সভাপতি গবেষক ফারুক আহমদ, সেক্রেটারি কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল, কার্যকরী কমিটির অন্যতম মেম্বার ড. মুকিদ চৌধুরী ও ট্রেজারার কবি একেএম আবদুল্লাহ।
উল্লেখ্য, গত বছর এ সংগঠনের উদ্যোগে বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা ছিলো না। এবার যখন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়ার কথা সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয় তখন এ প্রসঙ্গে সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন, গত বছরও আপনাদেরকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছিলো কিন্তু শেষে কোনো ধরণের সহযোগিতা পাননি কিংবা বাংলাদেশ হাইকমিশনও আপনাদের মেলায় কোনো ধরণের ভূমিকা বা উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। এবারও কি শেষমেষ একই পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে আপনাদের?
উত্তরে সংগঠনের সভাপতি ফারুক আহমদ বলেন, না আমরা এবার তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবও রাখা হয়েছে যাতে আমরা এই মেলায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি কর্ণার রাখি যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ রাখা হবে। তাছাড়া এ বছর বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শতবর্ষ কর্মসূচীও নিয়েছে, সেটার পাঠ হিসেবেও আমরা এটিকে মূল্যায়ন করতে চাই।
‘তাহলে কি অন্য কোনো সরকারের অধীনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার অন্য কারোর নামে ‘মঞ্চ’ বা ‘কর্ণার’-করার আবেদন রাখার আবেদন করলে সেটাও আপনারা পূরণ করবেন সাপ্তাহিক সুরমার পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে, ফারুক আহমদ বলেন, না আর কারোর নামে আমরা এমনটি করবো না। এ সুযোগ আর কাউকে দেয়া যাবে না। এটি কেবল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামেই হবে।
সুরমার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা আপনাদের বক্তব্যের শেষের দিকে উল্লেখ করেছেন, বইমেলা ও উৎসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা ও লালনের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিকড়ের সন্ধান দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাঙালির মেলবন্ধন রচনা করা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বিলেতের টাওয়ার হ্যামলেটস বারার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মাদার টাং শিক্ষাপ্রদানের বাজেট কর্তন করা হয়েছে এবং আগামী বছর থেকে একেবারেই উঠিয়ে ফেলা হবে। এর প্রতিবাদে অনেককেই দেখা গেছে কিন্তু আপনাদের এ ব্যাপারে নীরবতার কারণ কি?
এর জবাবে প্রথমে সভাপতি ফারুক আহমদ বলেন, আমাদের এটি নজর এড়িয়ে গেলেও আমরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবো। পরবর্তীতে ড. মুকিদ চৌধুরী বলেন, আমি মনে করি এ বিষয়ে আমাদের দৃঢ় ভূমিকা রাখা উচিৎ। সুরমার পক্ষ থেকে সাংবাদিক কবি কাইয়ূম আবদুল্লাহ প্রশ্ন রাখেন, আপনারা গত বছর কবি সাহিত্যিকদের পদক দিয়েছিলেন এবারও কী সেটা করবেন?
পদক বা পুরষ্কার সম্পর্কে ড. মুকিদ চৌধুরী বলেন, পদক বা পুরষ্কার প্রদান করবে আগামী প্রকাশনী যে পদকটির নামকরণ করা হয়েছে দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরী স্মৃতিপদক হিসেবে। এটি আমাদের সংগঠনের কোনো উদ্যোগ নয়, কিন্তু আমাদের অতিথি প্রকাশনী আমাদের অনুষ্ঠানের পরিসরটি কেবলমাত্র ব্যবহার করবে। যেহেতু প্রবাসী যে কাউকে এই পদকটি প্রদান করা হবে আর পদকটি একজন প্রবাসী লেখকের নামে সে হিসেবে আমরা এটিকে আমাদের মূল্যায়ন বলেই মনে করি।
এবার বইমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। তাঁর সঙ্গে থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রণালেয়র ৩ সদস্যের বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। গত বছরের পদক প্রদানের ব্যাপারে সেক্রেটারী কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল বলেন, কবি কাইয়ূম আবদুল্লাহ যে প্রশ্নটি করেছে তা যথার্থ হলেও আমরা গত বছরই বলেছিলাম, এটি কোনো নিয়মিত পদক প্রদান নয়। আমরা হয়তো মাঝে মধ্যে কাউকে মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নিতে পারি। আবার কোনো বছর কাউকে নাও দেয়া হতে পারে। সে হিসেবে আমরা এ বছর কোনো পদক প্রদান করছি না।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আপনাদের এই সংগঠনকে ‘রাজাকারবান্ধন’ আখ্যায়িত করে রিপোর্ট করা হয়েছে সে বিষয়ে বক্তব্য কি জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, আপনারা জানেন, গত বছর অনাকাঙিক্ষতভাবে আমাদেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েছে। এ বিষয়ে আমরা গতবছর সকল সাংবাদিককে অবহিতও করেছিলাম। তারা গত বছরের বইমেলাকে ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু তারা বসে নেই। আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির লক্ষ্যে সেই গ্রুপটিই এমন ধরনের স্থুল কুৎসা চর্চা করে যাচ্ছে যা কেউ বিশ্বাসও করেনি। তবে অবশ্যই আমাদেরকে এসব দুষ্টুচক্রের মোকাবেলা করতে হবে এবং আপনারাও এব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করবেন আশা রাখি। সবশেষে বইমেলার বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক চৌধুরী জানতে চাইলে ট্রেজারার কবি একেএম আবদুল্লাহ তা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, এবারের বইমেলার কর্মসূচীর মধ্যে আরো রয়েছে, দ্বিতীয় দিনে ৩টি সেমিনার। প্রথম সেমিনার শুরু হবে দুপুর ১২টায়। বিষয়: বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে সরকারের পরিকল্পনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. শেখ মুসলিমা মুন, ডেপুটি সেক্রেটারী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। দ্বিতীয় সেমিনার শুরু হবে বিকেল আড়াইটায়। বিষয়: অনাবাসী সাহিত্য। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিলেতবাসী কবি হামিদ মোহাম্মদ। তৃতীয় সেমিনার শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৩টায়। বিষয়: লেখক ও প্রকাশক সম্পর্ক। সেমিনার ৩টিতে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী, ড. শাহাদুজ্জামান, শামীম আজাদ, নঈম নিজাম, ওসমান গণি, ড. মুকিদ চৌধুরী, এমাদদুল হক চৌধুরী ও মিলটন রহমান। সংবাদ সম্মেলনের শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে সবাইকে বইমেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়।