শেষ হলো ৩ দিনব্যাপী লন্ডন ইসলামী বইমেলা: পাঠক, দর্শকের পদচারণায় মুখরিত ছিলো মেলাঙ্গন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০১৯
আবদুল্লাহ আল মামুন, লন্ডন :: ‘একটি ভালো বই পড়ুন‘- এই স্লোগানকে সামনে রেখে, শেষ হলো লন্ডন ইসলামী বইমেলা-২০১৯। ২৩ নভেম্বর শনিবার লন্ডন মুসলিম সেন্টারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বইমেলা শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আপিল বিভাগের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ।
মেলা আয়োজক কমিটির প্রধান আল কোরআন একাডেমী লন্ডন-এর চেয়ারম্যান ড. হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ- এর সভাপতিত্বে ও টিভি প্রেজেন্টার খায়রুল হাসানের সঞ্চালনায় প্রথমে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ আনিসুর রহমান। বইমেলায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদের খতিব শায়খ আবদুল কাইয়ুম, টিভিওয়ানের ডাইরেক্টর শায়খ আবদুর রহমান মাদানী, ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ট্রাস্টি ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী এমবিই, শিক্ষাবিদ শায়খ মোসলেহ ফারাদী, দারুল উম্মাহর খতিব শায়খ আশিকুর রহমান ও চ্যানেল এস-এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মাহি ফেরদৌস জলিল।
বক্তরা আয়োজক কমিটি ও আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান ড. হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদের এ মহতি উদ্যোগের প্রশংসা করেন। বক্তরা আশা প্রকাশ করেন, এ ইসলামী বইমেলা সত্যিই আমাদের কমিউনিটিতে বইপড়ার আন্দোলনকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলবে। আগামীতেও যাতে এই বইমেলা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে সে জন্যে বক্তরা কমিউনিটির সকলের আন্তরিক সহযোগিতার আহবান জানান। মেলায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ড.আবুল কালাম আজাদ, আবদুল্লাহহিল মামুন, জনাব দেলোয়ার খান, মাওলানা আবদুল কাদের সালেহ ও হাফেজ মাওলানা শফিকুর রহমান প্রমূখ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।
ইসলামী বইমেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ড. হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ বলেন, আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে আমরা এবার ৮ম বারের মতো উদ্বোধন করতে যাচ্ছি ইসলামী বইমেলা-২০১৯। এ জন্যে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করছি । তিনি আরো বলেন, প্রথমবার যখন আমরা বইমেলার আয়োজন করেছিলাম তখনও নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়েই এর সূচনা হয়েছিলো। তারপরও মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আমরা বৃটেনের মাটিতে খুব সুন্দরভাবে বইমেলা সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। কমিউনিটির সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় এবার ৮ম বারের মতো আবারও আমরা মেলার আয়োজন করতে পেরেছি। আমার আশা ও বিশ্বাস আমাদের কমিউনিটির সকলের সহযোগিতা থাকলে এই ইসলামী বইমেলা আগামীতে আরো বড় হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, বিলেতের মতো একটি দেশে আমাকে এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করায় আমি অনেক গর্বিত ও আনন্দিত। আমি মেলা আয়োজক সংস্থা আল কোরআন একাডেমী লন্ডনকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বইমেলা ও ইসলামী বইয়ের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে বলেন, এ ধরনের বইমেলা সত্যিই ইসলাম ও মুসলমানদের জন্যে বিশাল বিপ্লব বয়ে আনবে। যুগে যুগে কোরআন আমাদের ভালোর দিকে পথ দেখিয়েছে, তেমনি একটি ভালো বইও। একমাত্র কুরআনই আমাদেরকে ভালো পথে নিয়ে আসার জন্যে যথেষ্ট। তিনি ভালো বই পড়া এবং ইসলামী বইমেলার সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন এবং বাঙ্গলী কমিউনিটির সবাইকে এই বইমেলার পাশে থাকার অনুরোধ জানান ।
এবারের বইমেলায় কমিউনিটির অনেক গুনীজন, আলেম ওলামা ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পুরো ৩ দিনই প্রবাসের কবি, সাহিত্যিক ও লেখকরা তাদের কবিতা, ছড়া ও ইসলামী গান দিয়ে মেলাকে আরো প্রানবন্ত করেছে। এবারের ইসলামী বইমেলায় ছোট ছোট বাচ্চারা দর্শকদের অনেক নজর কেড়েছেন। বইমেলায় এবার কোরআন, হাদিস, তাফসির, সীরাত বইসমূহের পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন সৃজনশীল ইসলামী সাহিত্যের বই। প্রবাসী কবি, সাহিত্যিক ও লেখকদের নিয়ে বসেছিল সাহিত্য ও কবিতার আসর। এবারের ইসলামী বইমেলায় বিগত বছরগুলোর সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে বই বিক্রি ও ক্রেতা পাঠকদের পাদভারে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর মেলায় আসা ছিল চোখে পড়ার মতো। গত ৮ বছরে প্রায় ৮০ হাজারের ওপরে বই বিক্রি হয়েছে বলে মেলা আয়োজক কমিটি জানান।
বইমেলায় এবার বাংলা বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজী ও আরবী বই থাকার কারনে অন্যান্য কমিউনিটির ক্রেতারা বই কিনতে আসেন। নাইজেরিয়ান, সোমালিয়ান ও অনেক ইউরোপীয় বইপ্রেমীও মেলা পরিদর্শন করেন। ৩ দিনের এ বইমেলায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারনে বিপুল ক্রেতার সমাগম মেলাকে উৎসবমুখর করে তোলে। বইমেলা উপলক্ষ্যে পেন্সিল নামে একটি মননশীল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এবার যেসব প্রকাশক ও স্টলগুলো মেলায় আসেন তাদের মধ্যে আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স, লাইম পাবলিকেশন্স, ইস্ট লন্ডন বুক শপ, সালমা বুক শপ, আল বানী একাডেমী, রেনেঁসা সাহিত্য মজলিস, আহসান পাবলিকেশন্স, খাদিজা ইসলামিক স্টোর, মুসলিম এক্সপ্রেশান ও আর রাহমাহ ইসলামিক ষ্টোর অন্যতম ।
প্রতিবারের মতো এবারের মেলায় ছোটদের বেশ কিছু ইংরেজী বই শিশু-কিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়। আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্সের আমার শখের কোরআন মাজীদ,‘মাই চেরিস্ট কোরআন মাজীদ‘ ও সদ্যপ্রকাশিত তাফসীরে ওসমানী ছিলো পাঠক, দর্শক ও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। প্রিয়নবীর ওপর লেখা সীরাত এ্যালবামও ক্রেতা পাঠকদের বিশেষভাবে নজর কাড়ে। কোরআনের তাফসীর, হাদিস ও বিভিন্ন ইসলামিক বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল বইও পাঠক ও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে।
বইমেলার ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সরোয়ার রেজা, ইকবাল মানুসর আহমদ, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল হামিদ। এছাড়া বিভিন্নভাবে মেলায় আরো সহযোগিতা করেন রুহুল আমিন আকন্দ, কাজী শাহীন, রফিক উদ্দিন, তালিব আলী, ব্যারিষ্টার আশরাফ, হাবিব খান ও মহিউদ্দিন সুমন প্রমূখ। বইমেলার শেষ দিন বিকালে সমাপনী বক্তব্যে হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ইসলামী বইমেলা সফলভাবে আয়োজন করতে পেরে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শোকর আদায় করেন। ২৫শে নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে মেলা কমিটির সদস্য সচিব আবদুুল লতিফের সঞ্চালনায় ও উপদেষ্টা প্রবীণ সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরীর উপস্থিতিতে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তিনি এবারের বইমেলায় যারা স্পন্সর, বিজ্ঞাপন, স্টল দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানান। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সকলকেও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, লেখক, ক্রেতা ও পাঠকসহ যারা মেলার সার্বিক তত্বাবধানে ও সহযোগিতায় ছিলেন তাদের সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি