করোনাভাইরাসে মারা গেলে মুসলমানদের জানাজা ও দাফন কেমন হবে? –যা বললেন ব্রিকলেন ফিউনারেল সার্ভিসের ডাইরেক্টর
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪৭:২৪,অপরাহ্ন ১২ মার্চ ২০২০
দেশ রিপোর্ট, ১২ মার্চ : যুক্তরাজ্যে ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশীর বসবাস। শুধু টাওয়ার হ্যামলেটসেই বাস করেন প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশী। সারাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে (পাকিস্তানী কমিউনিটির পরেই) বাংলাদেশীদের অবস্থান দ্বিতীয়।
মুসলমানদের মৃত্যুর পর ইসলামি রীতি অনুযায়ী মরদেহ গোসল দিয়ে জানাজা ও দাফন করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত সপ্তাহে মানচেস্টারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক ইতালিয়ান মুসলিম বাংলাদেশীর মৃত্যুর পর তাঁর জানাজা ও দাফন কীভাবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আর এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে মুসলিম বাংলাদেশীদেরকে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মত্যুবরণ করলে জানাজা ও দাফনের জন্য কি লাশ পরিবারের কাছে দেয়া হবে। ফিউনারেল সার্ভিসগুলো কি সাধারণ মৃত মানুষের মতো জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করবে? নাকি তাদের জানাজা ও দাফনের ব্যাপারে অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসব অনুসন্ধান করতে গিয়ে বুধবার বিকেলে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের মিডিয়া কর্মকর্তা অ্যালেক্স ডোনালডসন এর সাথে সাপ্তাহিক দেশ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মুসলিম ব্যাক্তিদের জানাজা ও দাফনের ব্যাপারে কী নিদের্শনা আছে কিছুই তিনি জানাতে পারেন নি। তিনি বলেন, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে পরবর্তীতে জানাবেন।
ইস্ট লন্ডন মসজিদে অবস্থিত হাজী তসলিম ফিউনারেল সার্ভিসে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা সাপ্তাহিক দেশকে জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করছেন। বৃটিশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছেন। আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হবে।
তবে ব্রিকলেন ফিউনালে সার্ভিসের ডাইরেক্টর পারভেজ কোরেশী আশার কথা শুনিয়েছেন। বুধবার সাপ্তাহিক দেশের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুসরন করতে হবে। তারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা মরদেহ সংগ্রহ করে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে পারবো। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হসপিটালের মর্চুয়ারি ইনচার্জের সাথে এ ব্যাপারে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি তাঁকে বলেছেন, এ ব্যাপারে কী করতে হবে তারাও পুরোপুরি ওয়াকেফহাল নন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী কীভাবে কোলড রুমে লাশ রাখতে হবে, কীভাবে জানাজা ও দাফন করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে ফিউনারেল সার্ভিসগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিলো সাধারণত কোনো ভাইরাস আক্রান্ত মরদেহ এলে কীভাবে হ্যান্ডেল করা হয়? জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় তাঁরা এ ধরনের মরদেহ দাফন করেছেন। এসব ক্ষেত্রে মর্চুয়ারি থেকে শক্ত রাবারের বডিব্যাগে লাশ সীলড করে দেয়া হয়। কঠোর নির্দেশনা থাকে ব্যাগটি কিছুতেই খোলা যাবে না। এ ধরনের মরদেহ গোসল দেয়া হয় না। ব্যাগের উপরে তায়াম্মুম করিয়ে জানাজা পড়ে এরপর সীলড অবস্থায়ই দাফন করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, গ্রেনফিল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৮ জনের জানাজা ও দাফন হয় ব্রিকলেন ফিউনালের সার্ভিসের মাধ্যমে। এদের মরদেহ এভাবেই বডিব্যাগে সীলড করে দেয়া হয়। তাঁরা গোসল দেয়ার পরিবর্তে তায়াম্মুম করিয়ে জানাজা পড়ে দাফন করেছেন।
এছাড়া কয় বছর আগে উইনচেস্টারে ৫০ বছর বয়স্ক একজন রেস্টুরেন্টকর্মী রেস্টুরেন্টের সিড়িতে পড়ে মারা যান। তাঁর মরদেহ প্রায় সাড়ে ৪ মাস কোলড রুমে রাখা হয়। এতে করে লাশটি একেবারে গলে গিয়েছিলো। সাড়ে ৪ মাস পর লাশটি বডিব্যাগে সীলড করে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন তায়াম্মুম করিয়ে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো মুসলিম মারা গেলে নিশ্চয় পাবলিক হেলথ নির্দেশনা দেবে কীভাবে জানাজা ও দাফন করতে হবে। তবে ব্রিকলেন ফিউনারেল সার্ভিস এ ধরনের মরহদেহ এলে তারা জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত আছেন।