সৌদি সরকারের নতুন হজনীতি অনিশ্চয়তায় হজযাত্রীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:০৯:২৪,অপরাহ্ন ১৯ জুন ২০২২
ফয়সল মাহমুদ :: সৌদি সরকারের নতুন ঘোষিত হজনীতির কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বৃটেনের হজযাত্রীদের হজযাত্রা। নতুন নিয়মের কারণে যারা আগে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন আদৌ তারা যেতে পারবেন কিনা, আবার যেতে না পারলে বুকিংকৃত অর্থ ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন নিয়মে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য থেকে সিলভার, গোলডেন এবং প্লাটিনাম-এই তিন ক্যাটাগরিতে হজে যেতে পারবেন হাজীরা। তবে হজের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে নতুন পদ্ধতির কারণে বিপাকে পড়েছেন ইউরোপ আমেরিকা ও কানাডার হজযাত্রীরা।
করোনার কারণে দুই বছর বিদেশীদের জন্য হজগমন বন্ধ ছিলো। চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব সরকার ঘোষণা দেয় যে, এই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে ইউরোপ থেকে ৪৫ পার্সেন্ট এবং যুক্তরাজ্য থেকে ১২ হাজার যাত্রী হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সে অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের ১২ হাজার হজযাত্রী ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে এয়ার টিকিট কনফার্মকরণসহ হোটেল বুকিং সম্পন্ন করেছিলেন। হজে যাওয়ার জন্য কর্মস্থল থেকে অগ্রীম ছুটিও নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১১ জুন সৌদি থেকে জানানো হয়, হজযাত্রীদেরকে একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর লটারি করা হবে। লটারিতে বিজয়ী হলে তাঁর জন্য ই-ভিসা ইস্যু করা হবে। তবে যারা ফ্যামিলি নিয়ে বা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে হজে যেতে চান, তাদের ক্ষেত্রে লটারির ফলাফল কী হবে সেক্ষেত্রে কোনো নির্দেশনা অনলাইনে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ স্বামী যদি লটারীতে বিজয়ী হোন এবং স্ত্রী যদি বিজয়ী না হোন এ ক্ষেত্রে তিনি কি স্বামীর সাথে যেতে পারবেন-এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
হোয়াইটচ্যাপেল রোডের হাসান ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস এর পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম মওদুদ হাসান সাপ্তাহিক দেশকে বলেন, নতুন নিয়মের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কতজন যেতে পারবেন, আর লটারিতে জেতার পর আবার কিভাবে পেমেন্ট নিবে, ওয়েবসাইট নিরাপদ কি-না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। আমরা প্রতি বছর হজের যাবতীয় সার্ভিস দিয়ে থাকি। কিন্তু এবার হাজীরা কী কী সার্ভিস পাবেন- তা আমরা বলতে পারছিনা। কারণ আমাদেরকে এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেসকল হাজী পূর্বে বুকিং দিয়েছিলেন তাদের ডিপোজিটের অর্থ থেকে ট্রাভেল এজেন্টরা ইতোমধ্যে এয়ার টিকেট বুক করা-সহ মক্কা মদিনাতে হোটেল বুকিং বাবদ অগ্রীম অর্থ পরিশোধ করেছেন। সৌদি সরকার যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এই টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ না দেয় তাহলে আমাদেরকে বিরাট সমস্যায় পড়তে হবে।
পূর্ব লন্ডনের বেনজনসন রোডের লাব্বায়েক ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিফজুর রহমান চৌধুরী নতুন হজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সাপ্তাহিক দেশকে বলেন, শেষ সময়ে এসে নতুন নিয়ম চালু করার কারণে এবছর অনেকে হজ করতে পারবেন না। আবার যারা বুকিং দিয়ে ফেলেছেন তারা আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ হজ করে থাকেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে নতুন হজনীতি ঘোষণা করা হলেও এতে বলা হয়নি, আসন্ন হজে কতজন যেতে পারবেন।
উল্লেখ্য, নতুন ঘোষিত নিয়মে তিনটি ক্যাটাগরিতে হজে যেতে পারবেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুসলমানেরা। তা হলো: সিলভার, গোলডেন ও প্লাটিনাম। সিলভার ক্যাটাগরি হচ্ছে ১২ দিনের প্যাকেজ। এই প্যাকেজের মুল্য প্রায় ৬২০০ পাউণ্ড। গোলডেন প্যাকেজের মুল্য ৬৫০০ পাউন্ড এবং প্লাটিনাম প্যাকেজের মুল্য ৯৫০০ পাউন্ড তবে প্যাকেজগুলোতে কী কী সুবিধা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
বুধবার (১৫ জুন) রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় সৌদি আরবের হজ সংক্রান্ত ওয়েব পোর্টাল ভিজিট করে জানা যায়, হজের আবেদন গ্রহণ ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়ে গেছে। এখন আবেদন যাচাই-বাছাই ও লটারি চলছে। ১৫ জুন শুরু হওয়া ইলেক্ট্রনিক লটারি কার্যক্রম ১৮ জুন পর্যন্ত চলবে। আবেদনকারীরা ওয়েবসাইট ভিজিট করে তাদের পার্সোনাল ডিটেইলস দিয়ে লগ ইন করে অবেদনের স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন।
এদিকে বিবিসির করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ প্রতারণা শুরু হয়। ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের হজ এবং ওমরাহ ট্রাভেল এজেন্টদের অনেক ব্যবসায়ী এই সময় তাদের একটি বড় ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেন। যুক্তরাজ্যের হজ ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রির কিছু অবৈধ অপারেটর হজযাত্রীদের হাজার হাজার পাউন্ড অর্থ নিয়ে উধাও হয়েছে বলেও বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে বড় করে সংবাদ ছাপা হয়েছে। তাই এবার নতুন প্রক্রিয়ায় কম খরচে হজ পালন করতে পারবেন হাজীরা। তবে বিবিসি’র এই বক্তব্যের সাথে একমত নন অনেক হজযাত্রী। তাঁরা মনে করেন, নতুন নিয়মের কারণে হাজিদের নানা জটিলতায় পড়তে হবে।