টেমসের পাড়ে বসে সুরমা পারের ঐতিহ্যবাহী সিলেট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পাইলটিয়ানদের মিলন মেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল : মুছে যাওয়া স্মৃতিগুলি আমায় যে পিছু ডাকে, কিংবা স্মৃতি তুমি বেদনা-এই লাইনগুলি প্রত্যেকটি মানুষের মুখে মুখে লেগেই থাকে । কিন্তু যদি হয় শৈশবের স্মৃতি তাহলে তো আর কথা নেই-কারণ নিরবে নিভৃতে শৈশব কৈশোরের স্মৃতির কথা মনে পড়লেই দু’চোখ জড়িয়ে পড়ে বেদনার অশ্রু।
এবার বিদ্যালয়ের জীবনের শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনের স্মৃতিগুলিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে, ‘প্রবাহের স্রোতে এসো মাতি উল্লাসে, দূর প্রবাসে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে, প্রবাসে বসবাসরত সিলেটের সুরমা পারের সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন পাইলটিয়ান এলুমনাই ইউকে আয়োজন করলো পাইলটিয়ান মিলন মেলা ২০২২।
লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক প্রাক্তণ ছাত্রের উপস্থিতিতে জমকালো অনুষ্ঠানে পুরানো সাথীদের সাথে পুনঃমিলনে চাঞ্চল্য আসে পুরো মিলনায়তনে । কারী একরামুল হকের কুরআন তেলাওয়াত ও রিংকু সিংহার পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্টানের প্রথমে কামরুল আহছানের পরিচালনায় প্রয়াত প্রাক্তণ শিক্ষক ও ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় ।রিংকু সিংহার তত্তাবধানে জাতীয় সংগীত এর পরপরই পরিবেশিত হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রদের উদ্যোগে মিলন মেলার সংগীত।
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আদলে নির্মিত ফটকের পাশাপাশি প্রবীণদের মনোরঞ্জন ও শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছিলো ক্যারম বোর্ড, চানাচুর, চটপটি কিংবা ফুসকার ব্যবস্থা।
চানাচুর, ফুসকার পাশিপাশি চলছিল জম্পেশ আড্ডা ।এক পর্যায়ে প্রাক্তণ ছাত্র ও সাংবাদিক মোঃ এমরান আহমেদ এর পরিচালনায় মিলন মেলা উপলক্ষে উন্মোচিত হয় স্মরনিকা ‘প্রবাসে প্রবাহ’ এর মোড়ক । প্রাক্তণ ছাত্র ও এটিএন বাংলার হেড অব মার্কেটিং মোঃ আদিল চৌধুরীর পরিচালনায় সম্মাননা জানানো হয় মিলন মেলার সকল স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনদাতাকে ।২০১৬/১৭ সালে সদ্য প্রাক্তন ছাত্রদের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয় প্রাক্তন ছাত্র ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন সময়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পুরো পাকিস্তানের সর্বাধিক নাম্বার প্রাপ্ত মোঃ আব্দুর রকিবকে ।গান নাচ আর কবিতার ফাঁকে ফাঁকে সম্মান জানানো হয় পাইলট এলুমিনাই এর পক্ষ থেকে প্রথমবার মিলন মেলা আয়োজনকারি মিজানুর রহমান মিজান, সুয়েব আদমজী, তৌহীদ ফিতরাত হুসেইন, শাহেদ শামস, মোহাম্মদ একরাম সিদ্দিক উজ্জ্বল ও মোহাম্মদ শামসুল করিম টিটুকে।
মাহবুব শুভ ও আব্দুল হাফিজ শিপলু, আবু আরেফ, নজরুল ইসলাম ও মঞ্জুর চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় মধ্যাহ্ন ভোজনের সময় ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিটি টেবিলে টেবিলে গিয়ে মাহমুদ হাছানের নবীন প্রবীনের পরিচয় পর্বটি ছিল প্রশংশনীয়।
ইমরান চৌধুরী, আব্দুল ফাত্তাহ চৌধুরী রানা ও আব্দুল্লাহ ফাতেনীর তত্তাবধানে র্যাফল পরিচালনা ছিল অভুতপূর্ণ। তবে অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে র্যাফেল ড্র পরিচালনা করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক সায়েক আহমেদ সওদাগর।
মোহাম্মদ আখলাকুর রহমান ও মেকদাদ খানের তত্তাবধানে মিলন মেলায় আগত সকল প্রাক্তন ছাত্রের মধ্যে উপহার হিসেবে মিলনমেলার লগোসম্বলিত, ব্যাজ মগ, চাবি রিং, ব্যাগ ও কলম প্রদান করা হয়। সঞ্জিত দাশের সহযোগিতায় ও আশরাফুল ওয়াহিদ দুলালের পরিচালনায়
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় পর্দার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভিডিও, স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হয় ।এ সময় কবি জিয়াউর রহমান সাকলায়েনের কন্ঠে পৃথিবীর সব বাবাদের উদ্দেশ্যে ‘বাবা’
কবিতাটি প্রদর্শন এর সময় ছল ছল চোখে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা অতীতে।প্রদর্শিত হয় স্কুলের বিভিন্ন চিত্র।
রাত ৮ টার সময় ব্রিটেন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
মোঃ সাকিব আলম চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ জাহিদ, আবিদুর রহমান, আব্দুল্লাহ নাইম, মাহফুজুর রহমান তায়েফ, আযহার উদ্দিন, শামাম আহমেদ, অপু তালকদার, মাহমুদুল হাছান চৌধুরী, শাহনেওয়াজ সুবান রাজা, রেজোয়ান, আদনান, মোহাম্মেল প্রমুখ যখন সেচ্ছাসেবক তখন নেই কোনও নেতৃত্বের বাহাদুরি, নেই কোনো উশৃংখলতা । নবীণ প্রবীণদের এই মিলনে উপস্থিত বয়সের ভারে নুয়েপড়া প্রবীণরা যেন তালে তাল মিলিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা শৈশবে । তাই তারা আয়োজক উত্তরসূরীদের প্রশংশা করতে কুন্ঠাবোধ করেন নি।
সর্বপরি সুরমা পারের সন্তানরা যখন টেমসের পাড়ে মিলন মেলায় শৃঙ্খলা ও শ্রদ্ধা ভালবাসা সবাইকে আবদ্ধ করলেন তা ছিলো চোখে পড়ার মতো । একে আপরের প্রতি শ্রদ্ধা সরুপ তারা তাদের সহপাঠী এই অনুষ্ঠানের অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদ হাসানকে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে সম্মাননা জানাতে কার্পন্য করেন নি।
দিন শেষে রাত যখন আসে তখন বিদায়ের প্রাক্কালে যান্ত্রিক জীবনের একটি দিন পুরানো সহপাঠীদের সাথে কাটিয়ে বিদায় বেলা বিষাদ মনে অশ্রুসিক্ত নয়নে যেন আহবান করছিলো এই দেখা যেন শেষ দেখা না হয়, আবার দেখা হবে বন্ধু।