এনএইচএস-এ আপনার চাকরি খুঁজে নিন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অসাধারণ সুযোগ-সুবিধাসহ সত্যিকারের অর্থপুর্ণ একটি পেশা শুরু করতে এনএইচএস-এ যোগ দিন এবং সমাজে সেই সব পরিবর্তন আনুন, যা আপনি দেখতে চান।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) একটি দারুণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা আপনাকে তাদের প্রেরণাদায়ী দলের একজন সদস্য হওয়ার এবং একটি দারুণ ক্যারিয়ার শুরু করার দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। ৩৫০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের চাকরি, ইউকে সরকারের বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি এবং সেরা পেনশন পরিকল্পনার মতো অফারের মধ্য দিয়ে এনএইচএস আপনাকে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবনে সত্যিকারের পরিবর্তন আনার সুযোগ করে দিচ্ছে। এনএইচএস বর্তমানে এন্ট্রি লেভেলের স্বাস্থ্যকর্মী, ডিগ্রি লেভেল নার্সিং, অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনালসহ এ ধরনের অনেক চাকরিতে পুরো ইংল্যান্ডজুড়ে নিয়োগ করছে। আপনার জন্য যথোপযুক্ত কাজটি খুঁজে পেতে, এনএইচএস এর ‘হেলথ ক্যারিয়ারস’ ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং আরও তথ্যের জন্য সাইন আপ করুন।
ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এনএইচএস ৩৫০ টিরও বেশি বৈচিত্রময়, মূল্যবান ও রিওয়ার্ডিং চাকরি দিচ্ছে। আপনার যেকোনো দক্ষতা, সম্ভাবনা, যোগ্যতা বা আগ্রহ থাকলে, এনএইচএস-এ আপনার জন্য সুযোগ রয়েছে।
আপনি সরাসরি রোগীদের সাথে, হাসপাতালে, অ্যাম্বুলেন্স ট্রাস্টে বা কমিউনিটিতে কাজ করতে পারেন এবং আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন, বিশেষজ্ঞ হতে পারেন বা বহু শাখার একটি অনন্য দলের অংশ হতে পারেন।
এনএইচএস-এ ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যায়। কারো জীবনে সত্যিকারের কোনো পরিবর্তন আনার অনুভুতির পাশাপাশি, এটি ভাল বেতন, ক্যারিয়ারে উন্নতির সুযোগ এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার জন্য সাহায্য দিয়ে থাকে এনএইচএস।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একজন নতুন এবং যোগ্য নার্স হন, তাহলে আপনি সর্বনিম্ন ২৮,৪০৭ পাউন্ড বেতন পাবেন ব্যান্ড ৫ এ। আপনি প্রতি বছর আপনার পড়াশোনার খরচের জন্য ৮,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে একটি নতুন অনুদান পাওয়া যাচ্ছে, যেটি পরিশোধ করতে হবে না। নার্সিং অথবা মিডওয়াইফারি পড়াশোনার জন্য প্রতি বছর ৫,০০০ পাউন্ড এবং অন্যান্য উপযোগী শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি বছর আরও ৩,০০০ পাউন্ডের অনুদান রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা সহায়ক কর্মীরা প্রাথমিক বেতন হিসেবে ২২,৩৮৩ পাউন্ড পান। অন-কল বা ওভার টাইম কাজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের সুযোগও থাকতে পারে।
আপনি ইউকের সবচেয়ে ভাল পেনশন স্কিমগুলির মধ্যে একটি পাবেন এবং আপনার চাকরিদাতা আপনার পেনশন খরচে সাহায্য করতে আপনার বেতনে ২০.৬% অতিরিক্ত প্রদান করবেন।
কেবল চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই আপনি বড় কিছু অর্জন করতে পারবেন
৩০ বছর বয়সী নিনা জাসপাল একজন কাইজেন-প্রোমোশন অফিস স্পেশালিস্ট এবং ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল কভেন্ট্রি এবং ওয়ারউইকশায়ার এনএইচএস ট্রাস্টের সাবেক কার্ডিয়াক নার্স প্র্যাকটিশনার।
নিনা চার ভাই-বোনের সবচেয়ে বড়, সেই পথ ধরেই তার ছোট বোন তার মতোই একজন চিকিৎসাকর্মী হয়েছেন।
কভেন্ট্রিতে বড় হওয়া সময়ে, নিনা তার বয়স্ক দাদা-দাদীর দেখাশোনা করতেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এক সময়ে বুঝতে পারেন যে, নার্সিংকে একটি পেশা হিসেবে নির্বাচন করতে পারে। তিনি বলেন, “আমি যখন আমার এ-লেভেল শেষ করলাম, প্রথমে দিকে আমি জানতাম না আমি কি করতে চাই। কিন্তু আমাদের বাবা আমাদেরকে শিক্ষার গুরুত্ব, কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা শিখিয়েছিলেন, যার কারণে আমি ভাবলাম নার্সিং আমার জন্য একটি ভাল ও ফলপ্রসূ ক্যারিয়ার হতে পারে। আমি স্টার্লিং ইউনিভারসিটিতে বয়স্কদের জন্য নার্সিং বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রী করেছিলাম, এরপর বাড়িতে ফিরে কভেন্ট্রিতে কার্ডিয়াক নার্স হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলাম। “তিনি আরও বলেন, “আমি আট বছর নার্স হিসেবে ক্লিনিক্যালি কাজ করেছি এবং র্যাঙ্কের দিক থেকে আমি প্রমোশন পেয়েছি। আমি কার্ডিয়োলজি ওয়ার্ডে, কোরোনারি কেয়ার ইউনিটে এবং ক্যাথ ল্যাবে কাজ করেছি। তারপর আমি আরও প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং দুই বছর করে কার্ডিয়াক নার্স প্র্যাকটিশনার হিসেবে কাজ করেছি, যার মধ্যে এ-এন্ড-ই (একসিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সি) রয়েছে।”
এনএইচএস এ সুযোগ-সুবিধা ও চাকরির সন্তুষ্টি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “নার্সিংয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। এটি কেবল চিকিৎসা নয়। আপনি লীডারশীপ, ম্যানেজমেন্ট, ইমপ্রুভমেণ্ট অথবা রোগীর সুরক্ষা নিয়ে কাজ করতে পারেন- এখানে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।”
“রোগীদের যত্ন নেওয়া আমার জন্য একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। দলগতভাবে কাজ করা প্রতিদিনই এক নতুন অভিজ্ঞতা। হৃদরোগের নার্স হিসেবে আমি রোগীদের সাথে সময় কাটানো এবং সাধ্যমতো যত্ন করতে ভালোবাসি। তাদের সুস্থ হওয়া দেখা আমার জন্য খুব আনন্দের এবং এটি সাধারণত আপনার চোখের সামনেই খুব দ্রুত ঘটে। একজন রোল মডেল হওয়া, প্রতিদিনের যত্ন প্রদান করা এবং কর্মীদের অন্যান্য ও জুনিয়র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া- সবই আমার কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও আমার আরও একটি কাজ হলো কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা এবং আমাদের সমাজে ভাল পরিবর্তন আনতে চাওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করা।”
নিনা বর্তমানে সংস্থার সবার সাথে কাজ করেন, তারা ডাক্তার হোক বা না হোক। তিনি বলেন, “আমি আমার নার্সিং জীবনে অনেক কাজ করেছি এবং এনএইচএস হরিজন এর সাথেও কিছু সময় কাজ করেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমি ছয় মাস জাতীয় স্তরে কাজ করেছি, বড় পরিসরে যেসব পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেগুলি কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে তা দেখেছি। পাশাপাশি, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে নীতি তৈরি ও প্রেরণ করতে দেখেছি। আমার ভাল লেগেছে। আমি আরও ছয় মাস কাজ করেছি কাইজেন প্রমোশন অফিস টিমের সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য, যা সেবাকার্যক্রম উন্নত করার সম্বন্ধে ছিল। আমি আরও ছয় মাস কাইজেন টিমের সাথে সেবা উন্নত করার বিষয়ে কাজ করেছি। কিন্তু এটি স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া এবং ওয়ার্ডে কাজ করা সকল লোককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ছিল। একই সময়ে দুই ধরনের সুযোগ পেয়ে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, যেখানে আমি শিখেছি আমরা রোগীদের জন্য কিভাবে আরও ভাল সেবা প্রদান করতে পারি, পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে কিভাবে আমার সঙ্গী স্টাফদেরকে সাহায্য করতে পারি।”
যখন নিনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় চাকরির কোন দিকটি তাঁর বেশি ভালো লেগেছে, তিনি হাসিমুখে বলেন, “মানুষের চিন্তা বদলানো এবং তাদের সাহায্য করা। যে জিনিস সবসময় একটি নির্দিষ্ট পন্থায় করা হয়েছে, তা বদলানো কঠিন। আমরা মানব আচরণ নিয়ে কাজ করছি, এটি মাঝে মাঝে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কিন্তু যখন আপনি মানুষকে একসাথে আনেন এবং রোগীদের জন্য ভাল সেবা প্রদান করেন, তা অনেক বড় একটি প্রাপ্তির ব্যাপার।“
এনএইচএসে তার বর্তমান ভূমিকার পাশাপাশি, নিনা কমিউনিটিতেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন এবং এশিয়ান কমিউনিটিতে হৃদরোগের সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ”আমার হৃদরোগ নার্স হিসেবে কাজ ছিল হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন রোগীদের সাথে কলে থাকা। আমি দেখলাম যে এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর তরুণ রোগী, ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, এবং তারা এশিয়ান ছিলেন। তাই, আমি ব্রিটিশ সিখ নার্সেসে যোগাযোগ করলাম, অন্যান্য সদস্য নার্সদের সাথে মিলে কমিউনিটির জন্য হৃদরোগ শিক্ষা এবং সিপিআর প্রশিক্ষণ আয়োজ করলাম ’তাদের হৃদয় আবারও চালু করার জন্য’। আমরা স্থানীয় গুরুদ্বারা (সিখ মন্দির) যাই এবং সিপিআর কর্মশালা ও হৃদরোগ সচেতনতা প্রোগ্রাম প্রদান করি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে এই প্রশিক্ষণ দিয়েছি।“
সবাইকে এনএইচএস-এ যোগদানের জন্য উৎসাহিত করে তিনি বলেন, “এই সুযোগটি নিন এবং মনে রাখুন, কোনো প্রশ্নই অহেতুক প্রশ্ন নয়। আপনি যদি কিছু জানেন না, তাহলে আপনি পেশাদার কোর্স ও সেমিনারে যেতে পারেন। আপনার চারপাশে সর্বদা এমন লোক রয়েছে যারা একই রকম পরিস্থিতি পার করে আসছেন।”
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি কোন পর্যায়ে চাকরি শুরু করছেন সেটা বিষয় নয়, সব ক্ষেত্রেই আপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। মূল বিষয়টি হলো আপনাকে লেগে থাকতে হবে। আর এভাবেই আপনি সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারবেন এবং সফল হবেন।”