রাজপথে হার্ডলাইনে থাকবে আওয়ামী লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশ ডেস্ক:: দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। বিভিন্ন স্তরের নেতারা এসব বৈঠকে বসছেন। সঙ্গে থাকছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। সাংগঠনিক সম্পাদকরাও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতাদের চাঙ্গা রাখা হচ্ছে। যেসব নেতারা এতদিন কর্মসূচির মঞ্চে উঠতেন না তাদের আবারো সক্রিয় করা হচ্ছে। কর্মসূচি নিয়ে তাদের পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে অক্টোবর মাসকে কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগ মনে করছে অক্টোবর মাসটা দেশের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা মাস। কারণ সরকার পতনের জন্য বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এই মাসকে টার্গেট করেছে বলে তাদের ধারণা।
তাই অক্টোবরকে পাল্টা টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগও। সরকার পতন ঠেকাতে কিংবা যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি উদ্ভব থেকে দেশকে সামাল দিতে রাজপথে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতে চায় দলটি। আর এজন্য বেছে নেয়া হচ্ছে মাসজুড়ে রাজপথের কর্মসূচি ও নানা পদক্ষেপ। এরইমধ্যে কেন্দ্র থেকে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো ও বিভাগীয় শহরের নেতাদের মৌখিকভাবে রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে যেকোনো ধরনের কর্মসূচি পালনে তারা যেন নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুত থাকে সেই বার্তা দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা মানবজমিনকে জানান, আমরা এতদিন অনেকটা রুটিন কর্মসূচি পালন করেছি।
বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচির গতিপথ পর্যালোচনা করেছি। এখন দেখছি তারা আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করছে। নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা দেখাচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজপথে বিরোধীদের কর্মসূচির পাশাপাশি টানা কর্মসূচি পালন করা হবে। কারণ জনগণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে। তাই দেশের আগামীর উন্নয়নের স্বার্থে তারা আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচির সঙ্গে থাকবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বিএনপি তাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করবে এটি সবাই বোঝেন। তাদের ভয়ে আওয়ামী লীগ ভীত নয়। আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছে। আমাদের মুখ্য কাজ হলো, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে জনগণের দুয়ারে দুয়ারে ভোট প্রার্থনা করা। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে ভোট কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করা এবং অনুগ্রহপূর্বক নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য সবিনয় অনুরোধ করার কার্যক্রম চলবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, নভেম্বরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই এর আগের সময়টা খুবই স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজপথ দখলে রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপি এরমধ্যে আগামী ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ ১২ দিনের কর্মসূচি পালন করছে। আওয়ামী লীগও ৪ঠা অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। এরমধ্যে দুই দলের কর্মসূচির কোনো কোনোটি একইদিনে, কাছাকাছি স্থানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পরই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ওই বৈঠকে দলীয় কর্মসূচি ও রাজপথের আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, আমরা এরইমধ্যে রাজপথে থাকার একটি খসড়া শিডিউল তৈরি করেছি। দলীয় সভাপতি দেশে ফিরলে তা চূড়ান্ত করা হবে। কিছু তারিখ ফাঁকা রাখা হচ্ছে। সেসব তারিখে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হবে। অর্থাৎ অক্টোবর মাসজুড়ে রাজপথে হার্ডলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে অক্টোবরে ঢাকায় দুটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ৭ই অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন উত্তরার দিয়াবাড়িতে সুধী সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে উত্তরা ও মিরপুর এলাকার সংসদ সদস্যদের প্রত্যেককে এক থেকে দুই লাখ করে লোক আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২০শে অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালু করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তান করার ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে আমরা দেশ ছেড়ে দিতে পারি না।
দেশকে যারা ধ্বংস করতে চায় তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা, শেখ হাসিনার সৈনিকেরা বসতে পারে না। এই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদেরকে রাজপথে প্রতিহত করতে হবে। এদিকে অক্টোবর নিয়ে এরইমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই অক্টোবরে আছে, আগামী অক্টোবরেও থাকবে। বিএনপি নাকি আমাদের তাড়িয়ে দেবে কয়েকদিনের মধ্যে। কেন শেখ হাসিনাকে সরে যেতে হবে? জনগণ তাকে চায়, বিকল্প ভাবে না। সংকটে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো তার সমকক্ষ কেউ নেই। নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের নিয়মে চলবো। আমাদের হুমকি দিয়ে লাভ নেই। সামনের নির্বাচন আমরা ফ্রি, ফেয়ার করবো। এর বাইরে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। যা করবো সংবিধান অনুযায়ী। কে নির্বাচনে এলো, কে এলো না এটা আমাদের বিষয় নয়। কে কারে নিষেধাজ্ঞা দিলো এটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা তো নির্বাচন করতে চাই। যারা বাধা দেবে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, হুমকি দিন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছেন? দুষ্টু ছেলে ইসরাইলকে থামাতে পারেন না, হাইতির গান ভায়োলেন্স থামাতে পারেন না? সূত্র: মানবজমিন