মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট : সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বিলেতের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের নির্ধারিত মেয়াদ দুই বছর পার হলেও বর্তমান কমিটি নির্বাচন না দিয়ে বোর্ডের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার গ্রেটারেক্স স্ট্রিস্টে মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ট্রাস্টের সাবেক নেতৃবৃন্দরা। একই সঙ্গে তারা বোর্ডের পদত্যাগকারী চার সদস্যকে ডেকে ১৭ সদস্য মিলে দ্রুত বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের বিজিএমের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সভাপতি মির্জা আসহাব বেগ ও সাবেক সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, জেএমজি এয়ার কর্ণারের চেয়ারম্যান মনির আহমদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালে লন্ডনে আমাদের অগ্রজ, প্রবীণ মুরব্বীদের প্রচেষ্টায় বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট গঠন করা হয়। যার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিলো বিশ্বনাথের গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে এলাকার শিক্ষার বিস্তারে সহযোগিতা করা। শুরু থেকেই দুই বছর পর পর ট্রাস্টের বোর্ড ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করার বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৬ সালের নির্বাচনে আমরা নির্বাচিত হই এবং এই বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের পক্ষে আজ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, আমরা আমাদের ট্রাস্টিসহ সংগঠনের শুভাকাঙ্খি ও সুধিজনদের জানাতে চাই যে, দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিলো। এরই অংশ হিসেবে আমাদের (২০১৪-১৬) নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনের বিষয়টি বোর্ডের প্রথম এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আরো দুই/তিনটি বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বার্র্মিংহামে অনুষ্ঠিত এজিএম-এ উপস্থিত ট্রাস্টিদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনকে অনুমোদন প্রদান করা হয়। গৃহিত এই সিদ্ধান্ত মোতাবেকই আমরা (ট্রাস্টের চেয়ার এবং সেক্রেটারি) বাংলাদেশে গিয়ে আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী ট্রাস্ট এ্যাক্টের আওতায় আমাদের সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন সম্পন্ন করি। এতে চেয়ার সেক্রেটারি ছাড়াও ঐ সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানকারী আরো পাঁচজন ট্রাস্টি রেজিস্ট্রেশন সম্পাদনকারী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।
নিবন্ধনের পর আমরা লক্ষ্য করি যে, আমাদের কিছুসংখ্যক ট্রাস্টি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেন নি উল্লেখ করে বলা হয়, তারা এই বলে অভিমত প্রদান করেন যে, এটি বেআইনিভাবে করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আমরা যথাক্রমে প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দশ লাখ টাকা উত্তোলন করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি।
এই বির্তক নিরসনকল্পে ৩ সদস্য বিশিষ্ট মেডিয়েশন কমিটি গঠন করা হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় আমরা দুইটি বিশেষ সাধারণ সভা করি। এর মাঝে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট এসজিএম-এ বাংলাদেশ থেকে প্রদত্ত লিগ্যাল অপিনিয়ন এর ভিত্তিতে সমস্যার সাময়িক সুরাহা হয় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনে সবার অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এরমাঝেই ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি ট্রাস্টের বিজিএমে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মতছির খাঁন সভাপতি, মিছবাহ উদ্দিন সেক্রেটারি ও আজম খানকে ট্রেজারার করে ২০১৭-১৯ সালের জন্য বোর্ড অব কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, ঐ বিজিএমে ট্রাস্টের নিবন্ধন নিয়ে অযথা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।
নির্বাচনের পরও যথারীতি নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হয় এবং এটি সঠিক কি-না তা নিয়ে বোর্ড সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পর বিগত বোর্ড কমিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রথমে যুক্তরাজ্যে সলিসিটর নোটিশ প্রদান করে। এই নিয়ে বোর্ডে তীব্র বির্তকের পর তারা সেক্রেটারি মিছবাহ উদ্দিনকে সাসপেন্ড করা, নতুন সংবিধান অনুমোদনসহ সংবিধানের বিপরীতে কাজ করার চেষ্টা করা হয়। এই সমস্ত কারণে চারজন বোর্ড মেম্বার পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকারীগণ হলেন যথাক্রমে ভাইস চেয়ার সাজ্জাদুর রহমান, সহকারী ট্রেজারার আবদুল ওদুদ সাহেল, বোর্ড অব মেম্বার মো. ফারুক মিয়া এবং মো. কবির মিয়া। পরে ২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি ট্রাস্টি সভার মাধ্যমে বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে বিভিন্ন সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা এবং দ্রæত নির্বাচন সম্পন্নের অনুরোধ জানানো হয়।
এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে মিডিয়েশন কমিটির সর্বশেষ সভা গত ০৮/০৭/২০১৯ তারিখে ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দুই পক্ষের ট্রাস্টি ও সাবেক সংসদ সদস্য জনাব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মুহিবুর রহমান ও প্রধান মেডিয়েটর জনাব পংকি খান (মরহুম) উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ আপস এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণ করা হয়।
এর কয়েক মাস পর হঠাৎ বর্তমান কমিটির চেয়ার জনাব মতছির খাঁন সাবেক চেয়ার, সেক্রেটারিসহ দলিল সম্পাদনকারীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নিবন্ধনটিকে অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের জন্য রিট দাখিল করেন। (রিট নং ৯৬৯১/২০১৯)।
এর মাসখানেক পর বর্তমান কমিটির সম্পাদক মিছবা উদ্দিন নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানিয়ে সিলেট জজকোর্টে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৫১/২০)। এই মামলায় বাদি বিবাদিদের কাছ থেকে মামলার সমুদয় খরচ আদায়ের জন্যও আরজিতে উল্লেখ করেন। এখানেই শেষ নয়, এই দুই মামলার পাশাপাশি অবৈধভাবে ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন ও দশ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বিভিন্ন মিডিয়ায় পূর্বের কমিটির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একটি প্রেস কনফারেন্সও করেন।
সংগঠনের নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন না দিয়ে বর্তমান কমিটি বোর্ডের কার্যক্রম চালাচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করি যে, বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে বর্তমান কমিটি কোনো ট্রাস্টি মিটিং করে তার অনুমোদন গ্রহণ করেন নি। এছাড়া আমরা দেখতে পাই যে, ইতোমধ্যেই (৫ ফেব্রæয়ারি ২০১৯ সালে) তাদের মেয়াদ দুই বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মামলার অজুহাত এবং এর পূর্বে কোভিডের অজুহাত দেখিয়ে তারা ৪ বছর পর্যন্ত নির্বাচন না দিয়ে বোর্ডের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, যদিও আমাদের ওপর দুই দুইটি মামলা, কিন্তু আমরা অনেক ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। ট্রাস্টের ক্ষতি হতে পারে এই কারণে কখনোই আমরা প্রতিবাদ করি নি। আমরা বিশ্বাস করি যে, ঐক্য এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থানই একটি সংগঠনকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছায়। সংগঠনে বিরোধ থাকতে পারে, মতের অমিল হতে পারে। তবে আমরা মনে করি ট্রাস্টিদের সাধারণ সভার মাধ্যমে যেকোনো বিরোধ নিরসন সম্ভব হবে।
মামলার রায় তাদের পক্ষে এসেছে উল্লেখ করে তারা বলেন, গত ০৪/০২/২০২২ ইংরেজি তারিখে ঢাকা হাইকোর্টে মামলার রায় আমাদের পক্ষে আসে ঐ সময়ে মামলার হিয়ারিং বা শুনানি থেকে বাদী মতছির খাঁন তার মামলা প্রত্যাহার করেন। যদিও এটি কমিউনিটিতে হাই প্রোফাইল মামলা হিসেবেও স্বীকৃত তবুও কোনো সংবাদমাধ্যম (টিভি/নিউজ পেপারে) এই বিষয়টি প্রচার করি নি।
এদিকে সিলেট জজ কোর্টের মামলা তার আপন গতিতে চলতে থাকে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে বিগত ২৭/০৮/২৩ ইংরেজি জজকোর্টের মামলার রায়ও আমাদের পক্ষে আসে। রায়ে মহামান্য বিচারক ট্রাস্টের রেজিষ্ট্রেশন আইনসম্মত হিসেবে উল্লেখ করে মামলাটি খারিজ করেন। উপরন্তু মাননীয় বিচারক মহোদয় এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ট্রাস্ট বাংলাদেশে বৈধভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে বলে আইনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
গণমাধ্যমের মাধ্যমে আয়োজকরা সংগঠনের ট্রাস্টি ও বিশ্বনাথবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের অগ্রজরা বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট সৃষ্টির মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর সহযোগিতা করে আসছে। আমরা এই ধারাটি অব্যাহত রাখতে চাই। বিগত চার/পাঁচ বছরে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠনের কর্মযাত্রা নানা কারণে বিঘিœত হয়েছে, আমাদের প্রাণপ্রিয় ট্রাস্টের বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এই সময়ে যে সকল ট্রাস্টি ও বোর্ডের চারজন সম্মানিত সদস্যসহ শুভাকাঙ্খিরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা সংগঠনের স্বার্থকে সব সময় বড় করে দেখেছি। আমাদের আর পেছনের পথে হাঁটা কিংবা হিংসাত্মক কাজে ফিরে তাকাবার সুযোগ নেই। আমরা সবাই অতীতকে ভুলে একমত হয়ে একযোগে প্রাণের এই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা এক থাকলে সব প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিশ্বনাথবাসীর পক্ষ থেকে তারা বর্তমান কমিটির কাছে দ্রুত বোর্ডের পদত্যাগকারী চারজন সদস্যকে ডেকে নিয়ে ১৭ সদস্য একত্রিত হয়ে অনতিবিলম্বে ট্রাস্টের বিজিএমের তারিখ ঘোষণার অনুরোধ জানান।