রায়হান হত্যা : ২০ লাখ টাকায় আপসের প্রস্তাব দেন কাউন্সিলর কামরান!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৩
সিলেট প্রতিনিধি:: পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে রায়হান আহমদ হত্যা মামলা ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপোস করে নিতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কাউন্সিলর মখলিসুর রহমান কামরান। এমন অভিযোগ করেছেন নিহতের মা সালমা বেগম।
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় বৃহস্পতিবার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিযোগ করেন। দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ. কিউ. এম. নাসির উদ্দীনের আদালতে মামলার এক সাক্ষীর জেরা অনুষ্ঠিত হয়।
আদালতের কার্যক্রম শেষে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, ‘শুরু থেকেই মামলা তুলে নিয়ে আপস করার জন্য আসামিরা নানাভাবে আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে। প্রলোভনও দেয়া হচ্ছে।
‘এমনকি সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরানের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দিয়েছে আসামিরা।’
তিনি বলেন, ‘শওকত নামে স্থানীয় একজনের মাধ্যমেও ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দিয়েছিল আসামিরা। সবশেষ জেলগেটে আসামিদের সঙ্গে দেখা হলে রায়হানের চাচাকে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেন এসআই আকবর। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি।’
তবে এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান কামরান। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, ‘রায়হানের মায়ের এমন বক্তব্য সঠিক নয়। শুনেছি শওকত নামের স্থানীয় একজনের মাধ্যমে এ প্রস্তাব দিয়েছিল আসামিরা, আমার মাধ্যমে নয়।’
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী মামলা করেন। এরপর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি মামলার তদন্ত করে। তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আর প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পিবিআই ২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক আশেক এলাহী, কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।
গত বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযুক্ত এক পুলিশ সদস্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমান এখনও পলাতক। বাকি চার আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করা হয়েছে।
বর্তমানে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। এই মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার মোট সাক্ষী ৬৯ জন।
বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ এ. কিউ. এম. নাসির উদ্দীনের আদালতে আসামি কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) মো. হারুন অর রশিদের পক্ষের আইনজীবী একজন সাক্ষীকে জেরা করেন। এই সাক্ষী আগেই আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। হারুন অর রশিদের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুনরায় তাকে জেরা করা হয়।
রায়হান হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, ‘সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে। সাক্ষী ৬৯ জন থাকলেও মারা যাওয়া ও বিভিন্ন কারণে কয়েকজন কমে গেছেন। সাক্ষী যারা বাকি রয়েছেন তারা চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট। আশা করছি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।’