বিয়ানীবাজারে লন্ডন প্রবাসীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৩
সিলেট প্রতিনিধি :: বিয়ানীবাজারে বৃটিশ বাংলাদেশি পঞ্চাশোর্ধ এক নাগরিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দু’মাস আগে নৃশংস এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে। নিহত জালাল উদ্দিন একই গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর পুত্র।
এ ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিহতের মেয়ে আপন চাচাসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
পরে আদালতের নির্দেশে বিয়ানীবাজার থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সেই মামলায় আদালতের নির্দেশে দুইমাস পর কবর থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের পারিবারিক কবর¯’ান থেকে পুলিশ তার লাশ উত্তোলন করে।
এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান, ওসি দেবদুলাল ধর ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লুৎফুর রহমান উপ¯ি’ত ছিলেন। নিহত জালাল উদ্দিন একই গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর পুত্র।
নিহতের মেয়ে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী জোবায়দা জালাল এর মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, তার পিতা জালাল উদ্দিনের (৫৫) দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে। এজন্য ২০১৯ সাল থেকে তিনি দেশে বসবাসরত ছিলেন। গত ১৯ আগস্ট জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার বড় চাচা সুনাম উদ্দিনসহ পরিবারের লোকজন ওইদিন তার পিতাকে মারধর করেন। বিকালেই মৃত্যুর আগে তিনি বিষয়টি ¯’ানীয়দের অবহিত করেছেন।
এদিকে নিহতের সন্তানাদি প্রবাসে থাকায় বড় চাচা সুনাম উদ্দিন পুলিশকে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরদিন জানাজা শেষে লাশ দাফন করেন। পিতাকে মারধরের খবর পেয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সিলেটের পুলিশ সুপার বরাবর মেয়ে জোবায়দা জালাল প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করেন এবং পরে দেশে এসে গত ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন। মামলায় নিহতের বড় ভাই সুনাম উদ্দিন (৬০), তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবিয়া বেগম (৩৬), পালিত কন্যা মান্না বেগম (২২) ও একই এলাকার পাথারিপাড়া গ্রামের আব্দুল হাছিবকে অভিযুক্ত করেছেন। আদালতে মামলার পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
তবে জালাল উদ্দিনের স্বাভাবিক মৃত্যু না হত্যা, এ বিষয়ে গ্রাামবাসী কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে বলে দেখা যায়।
মামলার বাদী জোবায়দা জালাল বলেন, বড় চাচা আমাদেরকে হার্ট অ্যাটাকে বাবার মৃত্যুর কথা বলেছেন। পরে স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারলাম তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ততক্ষণে বাবার লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আদালত থেকে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়ার পরও দ্রুত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
মামলার প্রধান অভিযুক্ত সুনাম উদ্দিন বলেন, আমাদের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ঘটনার দিন পুকুরে মাছ ধরা নিয়েও জালাল উদ্দিনের সঙ্গে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। তবে তার সঙ্গে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, প্রবাসে ভাইয়ের সন্তানদের ধারণা থেকেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কথা বলেছি।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের ভাগ্নে কাশিম উদ্দিন বলেন, বড় মামা ধাক্কাধাক্কি করে পুকুরপাড় থেকে ছোটো মামাকে সরিয়ে দিতে দেখেছি। তবে মামাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে মনোমালিন্য থাকায় তাদের বিবাদের সময় সেখানে যাইনি। ইউপি সদস্য কয়ছর আহমদ বলেন, প্রবাসীর মৃত্যু নিয়ে আমরা কিছুই জানি না বা আমাদের কেউ জানায়নি। তবে যেহেতু নিহতের মেয়ে মামলা করেছেন সেজন্য পোস্টমর্টেম করা জরুরি। তাহলে গ্রামবাসী মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পারবেন।
মুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ আল মামুন বলেন, প্রবাসীর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় বেশ মাতামাতি হচ্ছে। এজন্য আমিও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে মামলা রেকর্ডসহ আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।