লন্ডনে দর্পণ বাংলা বুক ক্লাবের উদ্যোগে লেখক ও গবেষক মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামকে সম্মাননা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০২৩
আমিনুল ইসলাম মুকুল, লন্ডনঃ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সাহিত্য সংগঠন ‘দর্পণ বাংলা বুক ক্লাব লন্ডন’ এর উদ্যোগে বিশিষ্ট কবি মাওলানা ফখরুল ইসলামকে এক সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ দর্পণ মিডিয়া সার্ভিস, ২৭ সি প্রিন্সলেট স্ট্রিটে দর্পণ বুক ক্লাব লন্ডনের সহ-সভাপতি আসমা মতিনের সভাপতিত্বে এবং সলিসিটর মোহাম্মদ ইয়াওর উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আতাউর রহমান । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেট লেক্সটেল সলিসিটরের প্রিন্সিপাল আব্দুল্লাহ আল ইমরান খান, ব্যারিস্টার আরজুমান ফেরদৌস, শাহ মুনিম, আক্তার নিজাম, আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল হাই, ইব্রাহীম আলী, মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ও আব্দুল হামিদ।এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন কবি শামসুল ইসলাম, বেলাল আহমদ, আলাউদ্দিন প্রমুখ।
আয়োজনের শুরুতে কবি ও লেখক মাওলানা ফখরুল ইসলামকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কবি আসমা মতিন।সংবর্ধিত অতিথির হাতে সম্মাননা সার্টিফিকেট তুলে দেন প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে সাহিত্যি চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, কবি-সাহিত্যিকরা কলম সৈনিক হিসেবে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হন এবং প্রাণবন্ত লেখনীর মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জাতিকে এগিয়ে নিতে তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই অনুস্মরণীয়! তাদেরকে সম্মান ও স্বাগত জানানো আমাদের দায়িত্ব। আমাদের পরিবার এবং সন্তানদেরকে সঠিক পথে ধরে রাখতে ইসলামী সাহিত্য চর্চা ও শিক্ষা দিতে হবে।কোন অপশক্তি ও অপসংস্কৃতি আমাদের প্রজন্মকে যাতে নস্ট করতে না পারে সে দিকে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, সাহিত্যের সাথে সমাজের সম্পর্ক নিবিড়। প্রত্যেক সমাজের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তেমনি সমাজের সাথে সম্পর্কিত সাহিত্যও কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। সে নিজের মধ্যে এমন কিছু ঐতিহ্য সৃষ্টি করে নেয় যা আর কোথাও পাওয়া যায় না। একেক পরিবেশ ও একেক ঐতিহ্য এবং আকীদা-বিশ্বাসের একাত্মতা সব কিছু মিলে একটা বিশেষ ধরণের চিন্তাধারার জন্ম দেয়। বিশেষ চিন্তাধারা আবার একটা বিশেষ প্রকাশভঙ্গীর উদ্ভব ঘটায়। অনেক সময় দেখা যায় বক্তব্য এক হওয়া সত্ত্বেও তার ওপর চিন্তা করার, তাকে কার্যকর করার, তার মধ্যে উত্থাপিত সমস্যাগুলো সমাধান করার এবং তার ফলাফল থেকে প্রভাব গ্রহণ করার পদ্ধতি প্রত্যেক সমাজের আলাদা। মুসলমান ও তাদের সাহিত্যের ব্যাপারেও একথা সত্য। ইসলাম এমন একটা ধর্ম যা জীবনের সমস্ত নীতি-পদ্ধতির ওপর কর্তৃত্ব করে। সে দ্বীন ও দুনিয়ার জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। জীবনের প্রত্যেকটি বিভাগের জন্য ইসলাম বিস্তারিত বিধান তৈরি করেছে। তার কাছে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সে অর্থনৈতিক ও সমাজ জীবনের জন্য যেমন আইন ও বিধান দেয় তেমনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জীবনের জন্যও বিধান দিয়ে থাকে। ইসলামে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি ধর্মীয় জীবনের আওতাধীনে মসজিদে যাবে, নামাজ পড়বে আবার বৈষয়িক জীবনে নেমে সুদ-ঘুসের কারবার করবে, অন্যের জমি বেআইনীভাবে দখল করবে এবং সমাজ জীবনের আঙিনায় এসে অশ্লীল নাচ-গানের আসর বসাবে ও মদের নেশায় থাকবে আর এমন সাহিত্য সৃষ্টি করবে যা সমাজের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে দেবে, সাহিত্য কোন ক্ষেত্রে এর অনুমতি দেয় না। এটা কেবল সাহিত্যের কথাই নয়, যে কোন অবস্থায় সেগুলো পুরণ করিয়ে নেবার জন্য সে সচেষ্ট থাকে। কোন বুদ্ধিমান সমাজ নিজেকে নৈরাজ্যের শিকার করতে চায় না। এ ধরনের সমাজ ব্যবস্থা কোন বিবেকবান ব্যক্তির কাম্য হতে পারে না। প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই চাইবেন তার জীবনের জন্য কোন পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা ও বিধান। প্রত্যেকেই নিজের জীবনের বিভিন্ন বিভাগের জন্য কোন নীতি পদ্ধতি নির্ণয় করে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে নিতে চাইবেন। পরস্পরের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে এই সমগ্র আইন ও বিধানকেই নিজেদের একমাত্র ফয়সালাকারী হিসাবে মেনে নেবেন। পবিত্র আল কুরআন আল্লাহর বিধানের একটি সংকলন মুসলমানদেরকে আল্লাহ দান করেছে। এই বিধানগুলো এবং এই সঙ্গে রসূলের বাণীসমূহ ও তাঁর সুন্নাতই হচ্ছে মুসলমানদের জীবনের জন্য একটি বিশ্বজনীন ব্যবস্থা। মুসলমান দুনিয়ার যেখানেই বাস করুক না কেন, এই বিধান ও সুন্নাতের সামনে অকপটে মাথা নত করে। জীবনের সব সমস্যার সমাধান তারা খোঁজে এরই মধ্যে। সব বিষয়ে তারা এখান থেকেই নেয় দিক নির্দেশনা।তাই ইসলামিক তাহজিব-তামাদ্দুন, ক্রিস্টি-কালচার এভাবে লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে এবং নিজ পরিবার ও বাচ্চাদেরকে ইসলামী শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে সাহিত্য চর্চাকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।কাজেই ইসলামের ধর্মীয় শিক্ষায় উৎসাহিত করতে এবং সাহিত্যও-সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তারে বই লেখার কোন বিকল্প নেই!
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লেখক বলেন, দর্পণ বুক ক্লাব লন্ডনে রয়েছেন এক ঝাক শিক্ষানুরাগী এবং সমাজ সেবক।তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার, সলিসিটার, সাংবাদিক, কবি, নাট্যকার, সাহিত্যিক সহ অনেকে বিভন্ন মহতি কাজে জড়িত। তারা সব সময় গুণীজনের সন্ধানে থাকেন।অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করেছে! অতিথিদের প্রাঞ্জল ও সুন্দর উপস্থাপনা, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা এবং উত্তম ব্যবহার আমার স্মৃতিতে বার বার ভেসে আসবে এবং প্রেরণা দিবে।ইসলাম এবং সাধারণ জ্ঞানের উপর মোট নয়টি বই লেখার জন্য ‘দর্পণ বাংলা বুক ক্লাব লন্ডন’ এর পক্ষ থেকে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেয়ায় আমি উপস্থিত সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও মুবারক বাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে ক্লাবের উন্নতি ও শুভ কামনা করছি।