নতুন ইমিগ্রেশন আইনে শঙ্কায় আশ্রয়প্রার্থী ও অবৈধরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২৩
মো. মাহাবুবুর রহমান:: অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি পাশ করা দুটি আইন প্রয়োগ শুরু করেছে।
ন্যাশনালিটি এন্ড বর্ডার অ্যাক্ট পাশ করা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন মাসে এবং ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন অ্যাক্ট পাশ হয় চলতি বছরের ২২ জুলাই। যদিও ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন অ্যাক্ট কার্যকরের টাইমলাইন শুরু হয়েছে ৭ মার্চ ২০২৩ থেকে।
নতুন আইনের প্রয়োগে এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আসায় বাংলাদেশিসহ অবৈধভাবে প্রবেশ করা সকল অভিবাসী ও আশ্রয়প্রত্যাশীদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।
২০২২ সালের ২৮ জুন থেকে ন্যাশনালিটি অ্যান্ড বর্ডারস অ্যাক্ট- ২০২২ কার্যকর হয়। এই আইনের ধারা ৪০ অনুসারে হোম সেক্রেটারি বেআইনিভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারী বা ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও অবস্থানকারী যেকোনো অভিবাসীকে ডিপোর্টেশন বা দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা পেয়েছেন।
আইনের ধারা ৪০ এর (এফ) অংশের (এ) ও (বি) অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষকে তাদের দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি ৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগের আইনে তা ৬ মাস পর্যন্ত ছিল। এছাড়া যদি কেউ ১২ মাসের বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডাদেশ পান, নতুন আইনে তাদের বিরুদ্ধে ইউকে বর্ডারস অ্যাক্ট-২০০৭ এর ধারা ৩২(৫)-এর অধীনে ডিপোর্টেশনের আদেশ দেয়া হবে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা দশম, যেখানে শীর্ষে রয়েছে ইরান। প্রাথমিক বিবেচনায় বাংলাদেশিদের সাফল্যের হার ২৭ শতাংশ, যা ইরানিদের জন্য ৮০ শতাংশ এবং পাকিস্তানিদের জন্য ৪৭ শতাংশ। আগের তুলনায় বর্তমানে বিষয়টি ভালো হয়েছে।
ইলিগ্যাল মাইগ্রেশন অ্যাক্ট পাশ করার পর একে একে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বাস্তবায়ন করছে সরকার। ইতোমধ্যে সেকশস ১২ এবং ১৩ এর অধীনে ডিটেনশন পলিসি ঘোষণা করেছে হোম অফিস। এই পলিসি অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে কতদিন পর্যন্ত ডিটেইন করে রাখবে তা হোম অফিসের ওপর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এজন্য ইমিগ্রেশন আইন ১৯৭১ সালের ধারা ২ কে সংশোধন করা হয়েছে।
একজন ডিটেইনিকে রিমুভ করা কিংবা তার যে কোনো চলমান আবেদন পরীক্ষা নীরিক্ষার অজুহাতে দীর্ঘ সময় তাকে আটক রাখতে পারবে হোম অফিস।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকেই এই নতুন ডিটেনশন পলিসি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই নতুন ডিটেনশন পলিসি মাইগ্রান্ট কমিউনিটিতে বিশেষ করে যাদের বৈধ স্টাটাস নেই এবং অ্যাসাইলাম সীকারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। ইতোমধ্যে বিশষজ্ঞ আইনজীবীদের কাছে পরামর্শ নিতে ছুটছেন তারা।
আবার, এই আইনের সেকশন ১৫ অনুযায়ী একজন মাইগ্রান্টের ফোন কিংবা কম্পিউটার জব্দ করে সব ধরণের তথ্য তালাশ করতে পারবেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। এজন্য কোনো ধরণের কোর্টের পারমিশন লাগবে না। এবং প্রাপ্ত তথ্যকে ওই মাইগ্রান্টের যে কোনো ধরণের ভিসা আবদনের বিরুদ্ধে ক্রেডিবিলিটি ড্যামেজ করার কাজে লাগাতে পারবে হোম অফিস। এজন্য এই আইনের সেকশন ৮ এবং ৬২ কে ব্যবহার করবে হোম অফিস।
অবশ্য এই আইনের সেকশন ৬০ এবং ৬১ অনুযায়ী সরকার লিগ্যাল ও বৈধ রুটে অ্যাসালামসীকারদের কিভাবে ইউকেতে আনতে পারে এমন একটি পলিসি তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী জানুয়ারী মাসে এই নতুন পলিসি ঘোষণা করবে। এর আগে সব লোকাল কাউন্সিলের সাথে কনসাল্টেশন প্রক্রিয়া এই অক্টোবর থেকেই শুরু হয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও সলিসিটর।